ফতওয়া
খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৪)
গবেষণা কেন্দ্র: মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
, ০৩ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৮ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০১ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
কেউ কেউ “ফতওয়ায়ে রশীদিয়ার” বরাত দিয়ে বলে থাকে যে, সব ধরনের গোল টুপিই পরিধান করা জায়েয।” আবার কেউ কেউ “ফতওয়ায়ে মাহমুদীয়ার বরাত দিয়ে বলে থাকে যে, গোল টুপি নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়। কারণ গোল টুপি “সুনানে হুদা” অর্থাৎ দ্বীনী আমলের অর্ন্তভুক্ত নয়। সুতরাং টুপি একটি পরিধান করলেই চলে।
তাদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, ফতওয়ায়ে রশীদিয়ার বক্তব্য দ্বারা কস্মিনকালেও সব ধরনের গোল টুপি জায়েয প্রমাণিত হয় না। কারণ টুপি সম্পর্কে “ফতওয়ায়ে রশীদিয়া- ৫৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে-
سوال - گول ٹوپی اوڑھنا کہ جس پردو پٹہ باعث دب جائے ٹوپی کے نہ باندہ سکتا ھو- اور درسیان میں خلا رھے یعنی سرپر درمیان میں نہ لگے تو اسکا استعمال کیسا ھے؟
جواب- گول ٹوپی درست ھے مگر جس میں مشابھت کسی قوم ئے دین کی ھو وہ درست نھیں-
অর্থ: গোল টুপি যা ডেবে যাওয়ার আশঙ্কায় তার উপর রুমাল বাঁধা যায় না এবং সে টুপির মাঝে ফাঁকা থাকে, মাথার সাথে লেগে থাকেনা, বরং মাথা হতে উঁচু হয়ে থাকে। এ ধরনের টুপি ব্যবহার করা কিরূপ?
উত্তর: গোল টুপি পরিধান করা জায়েয। তবে যে টুপি পরিধান করাতে বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্য হয়, সে টুপি পরিধান করা নাজায়েয।
উল্লেখ্য, ফতওয়ায়ে রশীদিয়াতে যেরূপ সব ধরনের গোল টুপিকে জায়েয বলা হয়নি, তদ্রুপ নির্দিষ্ট করে প্রশ্নে বর্ণিত টুপিটিকেও জায়েয বলা হয়নি। যদি প্রশ্নে বর্ণিত টুপিটিকেই জায়েয বলা উদ্দেশ্য হতো, তবে উত্তরে এ কথা অবশ্যই উল্লেখ থাকতো যে, “প্রশ্নে বর্ণিত গোল টুপিটি পরিধান করা জায়েয।” যেহেতু ইবারতে এ কথা উল্লেখ নেই, সেহেতু উক্ত বক্তব্যকে পুঁজি করে সব ধরনের গোল টুপিকে জায়েয বলারও কোন অবকাশ নেই। বরং ফতওয়ায়ে রশীদিয়ার পরবর্তী বক্তব্য দ্বারা প্রশ্নে বর্ণিত টুপিটি নাজায়েয হওয়াই স্বপ্রমাণিত হয়। কারণ টুপি সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে উক্ত ইবারতে এ কথাও উল্লেখ আছে যে, “যে টুপি পরিধান করাতে বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্য হয়, সে টুপি পরিধান করা নাজায়েয।” অর্থাৎ এ কথা দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে, গোল টুপি যা মাথার সাথে লেগে থাকেনা বরং উঁচু হয়ে থাকে সে টুপি পরিধান করা জায়েয নেই। কারণ তাতে বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যায়। যেমন খৃষ্টানদের টুপি অর্থাৎ ‘বুরনুস’ টুপি যা মাথার সাথে লেগে থাকেনা, বরং উঁচু হয়ে থাকে, অথচ উক্ত টুপিটিও গোল।
সুতরাং যদি গোল হলেই সে টুপি পরিধান করা জায়েয হয়, তবে “বুরনুস” টুপি পরিধান করাও জায়েয হবে। যেহেতু বুরনুস টুপিটিও গোল। অথচ “বুরনুস” টুপি পরিধান করা বিধর্মী বা খৃষ্টানদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার ক্ষেত্রে নাজায়েয, আর তা সাধারণভাবে পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী। অতএব, কোন টুপি গোল হলেই যে তা জায়েয হবে তা নয়। বরং যে টুপি পরিধান করলে বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্য হয়না, সে টুপি পরিধান করাই জায়েয। ফতওয়ায়ে রশীদিয়ার বক্তব্য দ্বারা মূলতঃ এটাই বুঝানো হয়েছে।
আরো উল্লেখ্য যে, ফতওয়ায়ে রশীদিয়াতে মূলতঃ জায়েয টুপির কথা বলা হয়েছে সুন্নতী টুপির কথা নয়। কারণ সব জায়েয টুপিই সুন্নতী টুপির অর্ন্তভুক্ত নয়। বরং সুন্নতী টুপি তাকেই বলে যে টুপি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পরিধান করেছেন বলে পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। যেমন- সুন্নত মুবারকের সংজ্ঞায় ফিক্বাহ্র বিখ্যাত কিতাব “তাহ্তাবীতে” উল্লেখ আছে-
السنة ما فعل النبى صلى الله عليه وسلم او واحد من اصحابه
অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অথবা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের কোন একজন যে কাজ করেছেন উহাই সুন্নত।”
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা গোল টুপি পরিধান করতেন, এমন গোল টুপি যা সবদিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকতো। মাথা হতে উঁচু হয়ে থাকতো না এবং সে টুপিটি ছিল চার টুকরা বিশিষ্ট। সুতরাং “ফওয়ায়ে রশীদিয়ার” প্রশ্নে বর্ণিত টুপিটি যেহেতু মাথার সাথে লেগে থাকেনা বরং উঁচু হয়ে থাকে, তাই তিনি উক্ত টুপিটিকে সুন্নতী টুপি বলে আখ্যায়িত করেননি। বরং বাড়িয়ে এ কথাও বলেছেন যে, এমন টুপি পরিধান করা জায়েয হবেনা, যে টুপি পরিধান করলে বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্য হয়। (যদিও তা গোল হোক না কেন।)
মূলকথা হলো- “ফতওয়ায়ে রশীদিয়ার উক্ত বক্তব্য দ্বারা কস্মিনকালেও সব ধরনের গোল টুপি পরিধান করা জায়েয প্রমাণিত হয় না। বরং প্রশ্নে বর্ণিত টুপিটি নাজায়েয হওয়াই স্বপ্রমাণিত হয়।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
গোল্ডেন রাইস (২)
০৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে -১১
০৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
০৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০)
০৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৭)
০৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমান উনাদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (২)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৬)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৬)
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)