ফতওয়া
খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২২)
গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
, ১৭ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০২ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৬ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
কাজেই এতাবিয়া কিতাবে কোন দলীল পেশ করা হয়নি, একথা বলে ফতওয়ায়ে আলমগীরী ও তাতারখানিয়ার উক্ত মাসয়ালাকে অস্বীকার করা নিতান্তই জেহালতপূর্ণ ও শরীয়তবিরোধী। হ্যাঁ, কেউ যদি ফতওয়ায়ে আলমগীরীর উক্ত বক্তব্যকে অস্বীকার করতে চায় বা ভুল প্রমাণ করতে চায়, তবে তাকে অন্ততঃপক্ষে ফতওয়ায়ে আলমগীরীর সমকক্ষ কোন কিতাব থেকে দলীল পেশ করতে হবে, যেখানে উল্লেখ আছে, ফতওয়ায়ে আলমগীরীর উক্ত বক্তব্য সঠিক নয় বরং ভুল। নচেৎ ফুটপাতের নীম মোল্লাদের মনগড়া বক্তব্যের কারণে প্রায় সাতশত বুযুর্গ হানাফী আলেম দ্বারা লিখিত বিশ্বখ্যাত ফতওয়ায়ে আলমগীরীর উক্ত বক্তব্য ভুল প্রমাণিত হতে পারে না। তৃতীয়তঃ বলতে হয় যে, ফতওয়ায়ে আলমগীরীর উক্ত বক্তব্য কস্মিনকালেও আবূ দাউদ শরীফ কিতাবের হাদীছ শরীফের খেলাফ নয়। যা ইতিপূর্বে বুখারী শরীফ কিতাবের হাদীছ শরীফের আলোচনা দ্বারাও প্রমাণিত হয়েছে। মূলতঃ আলমগীরীতে যে ‘বুরনুস’সহ নামায পড়া মাকরূহ্ বলা হয়েছে, তা মূলতঃ উঁচু বা লম্বা টুপি ও রেশম মিশ্রিত বুরনুস। কারণ উঁচু বা লম্বা টুপি খৃষ্টানদের খাছ টুপি আর রেশম তো এমনিতেই পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ। আর আবূ দাউদ শরীফে যে উল্লেখ আছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বুরনুস পরিধান করে নামায পড়েছেন, তা মূলতঃ টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা চাদরকেই বুঝানো হয়েছে, যার প্রমাণ নাসাঈ শরীফেই রয়েছে। যেমন নাসাঈ শরীফ ১ম খ-, ১৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
عَنْ حَضْرَتْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالَي عَنْهُ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ افْتَتَحَ الصَّلاَةَ .....ثُمَّ أَتَيْتُهُمْ فَرَأَيْتُهُمْ يَرْفَعُونَ أَيْدِيَهُمْ إِلَى صُدُورِهُمْ فِى افْتِتَاحِ الصَّلاَةِ وَعَلَيْهِمْ بَرَانِسُ وَأَكْسِيَةٌ.
অর্থ: হযরত ওয়ায়েল ইব্নে হুজ্র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে দেখলাম- তিনি নামায শুরু করার সময় উভয় হাত মুবারক উত্তোলন করছেন।......অতঃপর পরবর্তী দিনে এসে দেখলাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের উভয় হাত বুরনুসের মধ্য হতে উত্তোলন করছেন। উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম বুরনুসের ভিতর থেকে হাত উঠাচ্ছেন” এর দ্বারা কি এটাই প্রমাণিত হয়না যে, উক্ত বুরনুসটি ছিল টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা চাদর। কারণ টুপির ভিতর থেকে তো আর হাত উঠানো সম্ভব নয়, কেননা নামাযের সময় হাত কখনো টুপির ভিতর থাকে না। তাছাড়া আবূ দাউদ শরীফের একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা যে বুরনুস পরিধান করেছেন, তাহলো-টুপিসহ জুব্বা বা চাদর। যেমন আবূ দাউদ শরীফের ১ম খ-, ২৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ تَعَالَي عَنْهُ أَنَّهٗ وَجَدَ الْقُرَّ فَقَالَ أَلْقِ عَلَىَّ ثَوْبًا يَا نَافِعُ. فَأَلْقَيْتُ عَلَيْهِ بُرْنُسًا فَقَالَ تُلْقِى عَلَىَّ هٰذَا وَقَدْ نَهٰى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَّلْبَسَهٗ الْمُحْرِمُ
অর্থ: “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি শীতে আক্রান্ত হয়ে বললেন, হে নাফে! আমার উপর কোন কাপড় ঢেলে দিন। আমি উনার উপর একটি বুরনুস দিয়ে দিলাম। তিনি বলেন, আপনি আমার উপর ‘বুরনুস’ ঢেলে দিলেন অথচ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুহরিমদের জন্য তা নিষেধ করেছেন।” উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শীতে আক্রান্ত হয়ে শীত নিবারণের জন্য কিছু গায়ে দেয়ার নির্দেশ দিলে হযরত ইমাম নাফে রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বুরনুস পরিধান করিয়ে দেন। এখন প্রশ্ন হলো- লম্বা টুপি পরিধান করলে শীত নিবারণ হবে কি? কখনো নয়। বরং টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা চাদর পরিধান করলেই শীত নিবারণ হয়। তাছাড়া বুরনুস (بُرْنُس) শব্দের তাহ্ক্বীক দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, ‘বুরনুস’ হলো- টুপি সংযুক্ত জুব্বা বা চাদর। কারণ (بُرْنُس) বুরনুস শব্দটি (بِرْنُس) বিরনুস থেকে এসেছে, আর তার মধ্যে যে নূন রয়েছে তা হলো অতিরিক্ত। بُرْنُس শব্দের অর্থ হচ্ছে- اَلْقُطْنُ অর্থাৎ তুলা। টুপি সংযুক্ত জুব্বা ও চাদর তুলার তৈরী বিধায় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ শীত নিবারণের জন্য তা পরিধান করতেন। কারণ শীত নিবারণের জন্য তুলার তৈরী পোশাকই অধিক উপযুক্ত। সুতরাং অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা যে বুরনুস পরিধান করেছেন বলে আবূ দাউদ শরীফে উল্লেখ আছে, তা কস্মিনকালেও লম্বা টুপি নয়। বরং টুপি সংযুক্ত জুব্বা, পশমী চাদর ইত্যাদি। কারণ এগুলোকেও বুরনুস বলা হয়। কাজেই ফতওয়ায়ে আলমগীরীর উক্ত বর্ণনা আবূ দাউদ শরীফের উক্ত বর্ণনার মোটেও মুখালিফ বা বিপরীত নয়।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)