বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান:
একাডেমিক লাইব্রেরি
, ০৬ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১১ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) বিজ্ঞান মুসলমান উনাদেরই অবদান
ইসলামী স্বর্ণযুগে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত সর্বশেষ বিখ্যাত একাডেমিক লাইব্রেরিটি ছিল মুস্তানসিরিয়া মাদ্রাসায় যা বাগদাদে হিজরী ৬৩০ (শামসী ৬০০, খ্রিস্টাব্দ ১২৩৩) সালে আব্বাসীয় খলীফা আল-মুস্তানসির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আরব ইতিহাস লেখকরা একমত যে, এর ভবনটি মুসলিম ভূখ-ের পূর্বে নির্মিত সমস্ত কিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
একজন ভূগোলবিদ এটাকে বাগদাদের সবচেয়ে সুন্দর ভবন হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। ইবনে আল-ফুরাত এভাবে বর্ণনা করেছেন: “এতে বিজ্ঞানের সকল শ্রেণীর অগণিত মূল্যবান বই ছিল। যারা পরামর্শ বা অনুলিপি করবে তাদের সুবিধার জন্য ব্যবস্থা করা ছিল। যারা ব্যক্তিগত সংগ্রহ তৈরি করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য বিনামূল্যে কাগজ, কলম এবং বাতি সরবরাহ করা হত”।
একজন বিখ্যাত আরব বিশ্বকোষবিদ, আল-কালকাশান্দি (ইন্তেকাল ৮২০ হিজরী) ইসলামী বিশ্বে একসময় বিদ্যমান বিখ্যাত গ্রন্থাগারগুলির বিষয়ে গর্বের সাথে বলেছেন: “প্রাচীন কালের খলীফা ও সুলতানদের বিশাল লাইব্রেরির প্রতি ব্যাপক আগ্রহ ছিল এবং সবচেয়ে উন্নত ও অসংখ্য সংগ্রহ পেতে এ কাজের প্রতি যতœবান হতেন”।
মুসলিম স্বর্ণযুগে বেশ কয়েকটি সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থাগার ছিল। প্রথমত, বাগদাদে আব্বাসীয় খলীফাদের গ্রন্থাগার বাইতুল হিকমাহ। দ্বিতীয়ত, কায়রোতে ফাতেমী খলীফার লাইব্রেরি দারুল হিকমাহ। তৃতীয়টি ছিল স্পেনের উমাইয়া খলীফা দ্বিতীয় আল হাকামের গ্রন্থাগার। সম্ভবত এই বিখ্যাত গ্রন্থাগারগুলির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটি হল মুসলমানদের যাপিত জীবনে এদের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এগুলি কেবল স্টোর হাউস ছিল না যেখানে বই খুব কমই ব্যবহৃত হত। বরং মুসলমানগণ এই গ্রন্থাগারগুলিকে শেখার এবং শেখানোর কেন্দ্র হিসাবে নিয়েছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ের কিতাবগুলো সমঝদার লোকদের দ্বারা সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং গবেষক এবং আগ্রহী ছাত্রদের দ্বারা নিয়মিত ব্যবহার হত।
বাগদাদের ‘বাইতুল হিকমাহ’
প্রকৃতপক্ষে, মুসলিম কিতাব ও গ্রন্থাগারের স্বর্ণযুগ ছিল দ্বিতীয় হিজরী শতক থেকে হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমনের আগ পর্যন্ত। তৎকালীন খলীফারা ইসলামী বিশ্বের রাজধানী দামেস্ক থেকে বাগদাদে স্থানান্তরিত করেন। হারুনুর রশিদসহ প্রথম দিকের খলীফারা কিতাব ও বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। হারুনুর রশিদ পুত্র, আল-মামুন বাগদাদে বাইতুল হিকমাহ প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও সমৃদ্ধশালী লাইব্রেরিতে পরিণত হয়েছিল। এখানে একটি মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বা অবজারভেটরি স্থাপন করা হয়েছিল। এখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব শাখায় অধ্যয়নের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। আল-মামুনের অধীনে গবেষক দ্বারা গ্রন্থাগারের সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করার জন্য ভারত থেকে স্পেন পর্যন্ত বই সংগ্রহ করা হয়েছিল। এছাড়াও গ্রীক পা-ুলিপিগুলি সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং আরবীতে অনুবাদ করা হয়েছিল। অনেক বই যার মূল পা-ুলিপি হারিয়ে গেছে তা শুধুমাত্র এই অনুবাদের মাধ্যমেই সংরক্ষিত হয়েছে।
ছবি: আলাউদ্দিন খিলজীর মাদ্রাসা (৮ম হিজরী; ১৪শ ঈসায়ী), দিল্লী।
ঐতিহাসিক সূত্রগুলো হতে জানা যায় যে, গ্রন্থাগারটি সমস্ত ইসলামিক বিশ্বের প-িতদের জন্য এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল, উনারা ধর্ম, বিজ্ঞান, কবিতা বা চিকিৎসা যেকোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হোক না কেন।
ইয়াকুতের মতে, “বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অধ্যয়ন ও চর্চার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক লোক বাইতুল হিকমাহতে এসেছিলেন। এতে বইগুলো সম্পূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। এই গ্রন্থাগারটি সারা বিশ্বের ছাত্রদের এমনভাবে আকৃষ্ট করেছিল যে মহাকাশবিজ্ঞানী আবু-মাশর (মৃত্যু হিজরী ২৭১) খোরাসান থেকে পবিত্র মক্কা শরীফে যাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে বাগদাদ দিয়ে যাওয়ার সময় এই বাইতুল হিকমাহ দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি এটি সম্পর্কে এতই উৎসাহী হয়ে পরেছিলেন যে, তিনি সেখানেই থেকে যান আর সে বছর তার আর পবিত্র মক্কা শরীফে যাওয়া হয়নি”।
বাইতুল হিকমাহর প্রায় সকল গবেষক যুগের সেরা স্কলার ছিলেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানে উনাদের দক্ষতা এবং উনাদের বিখ্যাত কিতাবের জন্য স্পষ্টতই উনাদের বেছে নেওয়া হয়েছিল। ইবনে আল-নাদিম উল্লেখ করেছেন, সেই সময়ের জ্ঞানী জগতে সুপরিচিতদেরকে গ্রন্থাগারের ‘সাহেব’ উপাধি দেওয়া হয়েছিল।
উনাদের মধ্যে একজন, সাইদ ইবনে হারুনকে ইসলামী বিশিষ্ট বক্তৃতাবিদ এবং দর্শনের উপর বইয়ের লেখক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত, বাইতুল হিকমাহর কোন বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় না। মোঙ্গলরা বাগদাদে না আসা পর্যন্ত গ্রন্থাগারটি বিদ্যমান ছিল। মোঙ্গলদের বাগদাদ আক্রমণে অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে এই বাইতুল হিকমাহ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুসলিম স্বর্ণালী যুগের লাইব্রেরির ধরণ ও পরিচালনা
২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্বিতীয় আল হাকামের গ্রন্থাগার
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কর্তৃক জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ প্রভূত ক্ষেত্রে সৌন্দর্য্য বর্ধন ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করণ (২)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কর্তৃক জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ প্রভূত ক্ষেত্রে সৌন্দর্য্য বর্ধন ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করণ (১)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সম্মানিত মুকুটস্বরূপ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
কায়রোর ‘দারুল হিকমাহ’
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সম্মানিত মুকুটস্বরূপ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
একাডেমিক লাইব্রেরি
০১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্যক্তিগত পাঠাগার বা প্রাইভেট লাইব্রেরি
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্যক্তিগত পাঠাগার বা প্রাইভেট লাইব্রেরি
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মসজিদ গ্রন্থাগার
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)