“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব (২)
(“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাব থেকে সংকলিত)
, ২৩ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৮ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১০ পৌষ , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
২ নং আপত্তি : বাদশা হযরত আবু সাঈদ মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যেহেতু চালু করেছেন তাই এটা বিদ্‘য়াত। এমনকি অনেক উলামায়ে কিরাম এই অনুষ্ঠানকে বিদ্‘য়াতে হাসানাও বলেছেন।
জওয়াব : বাদশা হযরত আবু সাঈদ মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যে প্রথম সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেননি তার দলীল ইতিমধ্যেই প্রদান করা হয়েছে। মূলতঃ বাদশা হযরত মালিক মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এই অনুষ্ঠানকে বিদ্‘য়াতে হাসানাহ বলার কারণ হচ্ছে তিনি সমস্ত দেশের মানুষকে নিয়ে জাতীয়ভাবে অনুষ্ঠান করে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেছেন।
এই পদ্ধতি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের যামানায় ছিলো না তাই এটা বিদ্‘য়াতে হাসানাহ বলেছেন। মূল অনুষ্ঠান বা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন নিয়ে কারো কোন আপত্তি নেই।
উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি তারাবীহ নামায নিয়মিতভাবে জামায়াতে পড়ার আমল জারী বা উদ্ভাবন করার পর তিনি নিজেই বলেন-
نِعْمَتِ الْبِدْعَةُ هٰذِهٖ.
এ পদ্ধতিটি উত্তম বিদ্‘য়াতের অন্তর্ভুক্ত। (বুখারী শরীফ : হাদীছ শরীফ ২০১০, বায়হাক্বী শরীফ ৪৭৮৬)
এখন এই বিদ্‘য়াত লেখা দেখে যদি বলা হয়, তারাবীহর নামায বিদ্‘য়াত। এ নামায পড়া যাবে না তাহলে কি সেটা সঠিক হবে? স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই তারাবীহ নামায পড়েছেন। তাহলে বিদ্‘য়াত বলা হলো কেন? বিষয়টা হচ্ছে, যেহেতু আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি তারাবীহ নামায ২০ রাকায়াত জামায়াতে পড়া নির্দিষ্ট করেছেন, তাই এই কাজকে বিদ্‘য়াতে হাসানাহ বলা হয়েছে। মূল তারাবীহ বিদ্‘য়াত হয়ে যায়নি।
বিদ্‘য়াত শব্দ হলেই যদি গোমরাহী বা পরিত্যাজ্য হয় তবে আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার আমল কি গোমরাহী ছিলো? নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!! নাঊযুবিল্লাহ! মোটেও নয়, বরং তা বরকতময় সুন্নত।
হাফিয ইবনে রজব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেছেন, “বিদ্‘য়াত ওই বিষয়কে বলা হয়, যার ভিত্তি পবিত্র শরীয়ত উনার মধ্যে নেই। সুতরাং সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে যে বিষয়সমূহের ভিত্তি রয়েছে, সম্মানিত শরীয়ত মুতাবিক তা বিদ্‘য়াত নয়, যদিও আভিধানিক অর্থে বিদ্‘য়াত বলা হয়। ” (জামিউল উলূম ওয়াল হিকাম পৃষ্ঠা ১৯৩, ইরশাদুল উনূদ পৃষ্ঠা ১৬১)
বর্তমান বিরোধিতাকারীদের মুরুব্বী রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী তার ফতওয়ায়ে রশীদিয়াতে লিখেছে, “বিদ্‘য়াত কখনো হাসানাহ হয় না, যাহাই হাসান বলা হয় তাই সুন্নত নামে অভিহিত। ইহা এস্তেলাহী প্রকারভেদ মাত্র, কিন্তু উভয়ের মর্ম একই। ” (ফতোয়ায়ে রশিদীয়া ২৮৮ পৃষ্ঠা)
সুতরাং যেটা প্রমাণিত হলো, বাদশা হযরত আবূ সাঈদ মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যা করেছেন তার পদ্ধতি বিদ্‘য়াতে হাসানাহ কিন্তু মূল আমল বা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সেটা বিদ্‘য়াত নয়। যা উপরোক্ত আলোচনায় প্রমাণিত হয়েছে। এখানে একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে সহজ হবে-
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়োজন করেন এবং ছুটি ঘোষণা করেন। বর্ণিত আছে, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম হাক্কানী আলিম উলামাদের সুসংগঠিত করে পবিত্র ইসলাম উনার সঠিক রূপরেখা জনগণের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
উনার দিকনির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় সীরাত মজলিস নামে ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বৃহত্তর আঙ্গিকে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল উদযাপনের কর্মসূচী গ্রহণ করে। সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু বাইতুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ চত্বরে মাহফিলের শুভ উদ্বোধন করেন। সরকার প্রধান হিসেবে জাতীয়ভাবে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলের উদ্বোধন এ উপমহাদেশের ইতিহাসে প্রথম।
এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে প্রতি বছর জাতীয়ভাবে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল উদযাপন হয়ে আসছে। পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, পবিত্র শবে ক্বদর, পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি ঘোষণাও করেন। (তথ্যসূত্রঃ আবু তাহের মুহম্মদ মানজুর, ইসলামী চেতনা ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদান,ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা জানুয়ারী-মার্চ-২০০৯ পৃষ্ঠা-৪১, মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান,মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও ইসলাম সম্প্রসারণে শহীদ বঙ্গবন্ধু শহীদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অবদান)
এ কারণে এখন যদি বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চালু করেছেন, এর আগে এই আমল ছিলো না তা যেমন গ্রহণযোগ্য হবে না, তেমনিভাবে একই কারণে বাদশা হযরত মালিক মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি আলাইহি তিনিও সর্বপ্রথম পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চালু করেছেন সেটাও গ্রহণযোগ্য হবে না। মূলতঃ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম থেকেই ছিলো, বাদশা হযরত মালিক মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি আলাইহি তিনি জাতীয়ভাবে আয়োজনের ব্যবস্থা করেছেন মাত্র।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১)
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রসঙ্গ: সউদী রাজ পরিবারের পূর্বপুরুষ ইহুদী যে কারণে (১)
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- পবিত্র খুতবা উনার হুকুম-আহকাম
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১)
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র মসজিদ নির্মাণের ফাযায়িল-ফযীলত
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সমস্ত প্রকার অশ্লীলতাই হারাম
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)