‘লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ দিন ও রাত্রি থেকে বেশি ফযীলতপূর্ণ
, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
وَللهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهٖ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَلٰكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
অর্থ: আর মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যই সমস্ত ইজ্জত-সম্মান এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য এবং মু’মিন মুসলমানদের জন্য। কিন্তু মুনাফিকরা এ সম্পর্কে মোটেও অবগত বা অবহিত নয়। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮)
মূলত সৃষ্টিরাজির মধ্যে সবচাইতে ইজ্জত-সম্মানের অধিকারী হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার যিনি হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। এরপর সৃষ্টিরাজির মধ্যে ব্যক্তি হোক, বস্তু হোক, স্থান হোক, সময় হোক যার যতবেশি তায়াল্লুক-নিসবত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার ফযীলত বা সম্মান ততবেশি। সুবহানাল্লাহ!
উদাহরণস্বরূপ, হানাফী মাযহাবের ফতওয়ার বিখ্যাত কিতাব ফতওয়ায়ে শামী ৩য় খ- যিয়ারত অধ্যায়ে উল্লেখ আছে যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যে মাটি স্পর্শ মুবারক করেছে তা আসমান-যমীন এমনকি আরশে আযীম অপেক্ষা অধিক ফযীলতপূর্ণ। সুবহানাল্লাহ!
লাইলাতুর রগায়িব শরীফ রজনীটি অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ দিন-রাতের চাইতে বেশি ফযীলতপ্রাপ্ত এই কারণে যে, এই রাতের সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্ক-তায়াল্লুক, নিসবত রয়েছে।
কাজেই, এ রাতটি না হলে অন্যান্য রাত ও দিনের ফযীলত কখনোই খুঁজে পাওয়া যেতো না।
স্মরণীয় যে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসের অন্যতম রজব মাসের পহেলা তারিখ এবং পহেলা জুমুআর রাতটিই হচ্ছে লাইলাতুর রগায়িব। এই মহিমান্বিত ও অতীব সম্মানিত পহেলা তারিখ পবিত্র ইয়াওমুল জুমুআহ শরীফ সাইয়্যিদুল আবায়ি ওয়ার রিজাল, সাইয়্যিদুন নাস, ছাহিবুল ঈমান, ছাহিবুল জান্নাহ, আবূ রসূলিনা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুল উম্মাহাত ওয়ান নিসা, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, ছাহিবাতুল ঈমান, ছাহিবাতুল জান্নাহ, উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আযীমুশ শান নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ সংঘটিত হয়। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উক্ত সম্মানিত রাতেই সুমহান রগায়িব শরীফ সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ উক্ত সম্মানিত রাতেই সম্মানিত ওজূদ পাক নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আব্বা আলাইহিস সালাম উনার পূত-পবিত্র জিসিম (দেহ) মুবারক থেকে উনার সম্মানিতা আম্মা আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারকে সম্পূর্ণ কুদরতীভাবে তাশরীফ নেন। সুবহানাল্লাহ! যার কারণে উক্ত সম্মানিত রাত্রির ফযীলত শবে বরাত, শবে ক্বদর ইত্যাদি ফযীলতপূর্ণ রাত্রি অপেক্ষা অধিক ফযীলতপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
মূলতঃ সম্মানিত ‘লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ এ ফযীলতপূর্ণ ও মর্যাদাম-িত রাতটির নিসবত বা সম্পর্ক যেহেতু সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে তাশরীফ মুবারক আনার সাথে তাই এ সম্মানিত রাতের মর্যাদা উম্মতকে ফযীলত-মর্যাদা-মর্তবা হাছিলের জন্য দেয়া শবে বরাত, শবে ক্বদর ইত্যাদি ফযীলতপূর্ণ রাতের চেয়েও লক্ষ কোটিগুণ বেশি। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ
অর্থ: নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওছার হাদিয়া করেছি। (পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম উনারা অনেকেই অনেক কিছু বলেছেন ও লিখেছেন। তবে যিনি মুফাসসিরকুল শিরমণী রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ‘কাওছার’ শব্দের ব্যাখ্যায় দুটি অর্থ বর্ণনা করেছেন। একটি হলো ‘হাউযে কাওছার’ যার পানি স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যাকে পান করার অনুমতি দিবেন কেবল তিনিই পান করবেন এবং সেই পানি পান করার পর জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত আর পিপাসা লাগবে না। আর কাওছার শব্দের আরেকটি অর্থ বর্ণনা করেছেন ‘খইরে কাছীর’ তথা অধিক উত্তম বা ভালাই বা কল্যাণ। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রহমতপূর্ণ ছোহবতে, নিসবতে, স্পর্শ মুবারকে যা কিছু এসেছে সবকিছুই সবচেয়ে উত্তম, সর্বোৎকৃষ্ট হয়েছে এবং সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
তাই, অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা অনেকেই ফতওয়া দিয়েছেন যে, লাইলাতুর রগায়িব শরীফ হচ্ছে সমস্ত ফযীলতপূর্ণ দিন-রাতের চাইতে শ্রেষ্ঠ ও ফযীলতপ্রাপ্ত। সুবহানাল্লাহ!
যেমন বিশেষ করে এ বিষয়ে ফতওয়া প্রদান করেছেন হিজরী তৃতীয় শতকের মুজাদ্দিদ, যিনি হাম্বলী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। তিনি বলেন, “লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার ফযীলত শবে ক্বদর, শবে বরাত এবং অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ দিন-রাতের চেয়েও বেশি।” তিনি যখন এ বক্তব্য পেশ করলেন, তখন সমসাময়িক আলিম-উলামা, ইমাম-মুজতাহিদগণ উনারা উনার নিকট এসে বললেন, হুযূর! শবে ক্বদর, শবে বরাত এবং অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত্রির ফযীলত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু লাইলাতুর রগায়িব শরীফ বা শবে রগায়িব শরীফ উনার বর্ণনা তো পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফে নেই, তাহলে কিভাবে এ রাত্রির ফযীলত উল্লেখিত ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত্রির চেয়ে বেশি হতে পারে? তখন হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আপনারা কি জানেন, লাইলাতুর রগায়িব শরীফ কোন রাত্রিকে বলে? উনারা জানেন না বলে স্বীকার করলেন। তখন তিনি লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার পরিচয় তুলে ধরে বললেন যে, লাইলাতুর রগায়িব শরীফ হচ্ছে ঐ রাত্রি যে রাত্রিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আম্মা আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারকে তাশরীফ নিয়েছেন। এ রাত্রির ফযীলত অন্যান্য সমস্ত ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত্রির চেয়ে বেশি এই জন্য যে, যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক না আনতেন তাহলে শবে ক্বদর, শবে বরাত এবং অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত কোনটিই আসতো না। উনার আগমন মুবারকের উছীলাতেই শবে ক্বদর, শবে বরাতসহ সমস্ত ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত্রি এসেছে। কাজেই লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার ফযীলত সবচেয়ে বেশি। সুবহানাল্লাহ! তিনি যখন লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার পরিচয় ও ফযীলত তুলে ধরলেন, তখন সকল আলিম-উলামা, ইমাম-মুজতাহিদ উনারা নির্দ্বিধায় মেনে নিলেন।
অতঃপর একই ফতওয়া প্রদান করেন হিজরী ষষ্ঠ শতকের মহান মুজাদ্দিদ, যিনি সুপ্রসিদ্ধ ক্বাদিরিয়া তরীক্বার ইমাম- গউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।
অতঃপর এ উপমহাদেশে সর্বপ্রথম যিনি হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের প্রচার প্রসার করেছেন, যিনি ক্বাদিরিয়া তরীক্বার বিশিষ্ট বুযূর্গ, ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও অনুরূপ ফওতয়া প্রদান করেন।
অতঃপর যিনি বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, আহলে বাইতে রসূল, রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি উনার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ এবং দৈনিক আল ইহসান শরীফ পত্রিকাদ্বয়ের মধ্যে লাইলাতুর রগায়িব শরীফ সবচাইতে বেশি ফযীলতপূর্ণ রাত সে সম্পর্কে লিখনী মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)