‘গরুর গোস্তে রোগ আছে’ এই সংক্রান্ত বাতিল হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব
, ৬ই রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ৮ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ৭ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ২০ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

(ধারাবাহিক পর্ব- ০২)
হযরত আবূ দাঊদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মারাসীল’ গ্রন্থে উনার থেকে রেওয়ায়েত করেছেন। সেটা আবার হযরত ওয়ালিউদ্দীন আহমদ ইবনে আব্দুর রহীম ইবনে হুসাইন আবূ যুরআ ইরাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৮২৬ হিজরী) তিনি উনার ‘তুহফাতুত তাহছীল ফী যিকরি রুওয়াতিল মারাসীল’ নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। (তুহফাতুত তাহছীল ১/৩৭৯ দ্রষ্টব্য)
উক্ত বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয় এই হাদীছটা মুরসাল।
ইমামগণ যে সকল ক্ষেত্রে মুরসাল হাদীছ শরীফ দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন তার কয়েকটি হলো:
(১) যদি মুরসাল হাদীছ শরীফ কোন ছহীহ হাদীছ শরীফের পক্ষে থাকে।
(২) যদি মুরসাল হাদীছ শরীফের পক্ষে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আছার থাকে এবং বিপক্ষে ছহীহ সনদে হাদীছ শরীফ না থাকে।
(৩) আমলে মুতাওরাছার থাকে (যে আমল ধারাবাহিকভাবে উম্মতের মধ্যে চলে আসছে। ) পক্ষে।
উল্লেখিত হাদীছ শরীফ কোনো ছহীহ হাদীছ শরীফের পক্ষে নয়, ছহীহ সনদে বর্ণিত রয়েছে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা গরুর গোস্ত খেয়েছেন। সে হিসেবে উপরোক্ত হাদীছটি ছহীহ হাদীছ শরীফের বিপরীত। গরুর গোস্ত খাওয়া এটা উম্মতের মাঝে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। সে হিসেবে তৃতীয় শর্তটিও এখানে অনুপস্থিত। সুতরাং উল্লেখিত হাদীছটি গ্রহণযোগ্য নয়।
হযরত সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত হাদীছকে দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন-
قلت وليس في سنده من ينظر في حاله إلا المرأة التي لم تسم فيضعف الحديث بسببها لا سيما وقد صح أن النبي صلى الله عليه وسلم ضحى عن نسائه بالبقر وهو لا يتقرب بالداء
অর্থ: আমি বলি, এই সনদে এমন কেউ নেই, যার সম্পর্কে জানা যায় না। শুধুমাত্র সেই মহিলা ব্যতীত যার নাম উল্লেখ করা হয়নি। আর এ কারণেই হাদীছটি দুর্বল হিসেবে সাব্যস্ত হয়। বিশেষ করে ছহীহ সনদে বর্ণিত রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের পক্ষ থেকে গরু কুরবানী করেছেন। কাজেই তিনি এমন কিছুর মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য মুবারক হাছিল করেননি, যার মধ্যে রোগ রয়েছে। অর্থাৎ গরুর গোশতে রোগ নেই এটাই প্রমাণিত। (আল আজউবাতুল মারদ্বিয়্যাহ ১/২২)
তাছাড়া হযরত যুহাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পরিবারের যেই মহিলা থেকে বর্ণনা করেছেন উনার কোনো নাম, পরিচয় পাওয়া যায় না। অর্থাৎ তিনি মাজহূল বা অজ্ঞাত রাবী। আর অজ্ঞাত রাবীর বর্ণনাকে বলা হয় হাদীছে মুবহাম। মুবহাম হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয়। হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
وحديث المبهم غير مقبول
অর্থাৎ মুবহাম হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয়। (মুক্বাদ্দিমাতুল মিশকাত)
কাজেই উপরোক্ত হাদীছটি বাতিল বলে সাব্যস্ত হলো।
দ্বিতীয় বর্ণনা:
যেটা হযরত হাকিম নিশাপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন-
حَدَّثَنِي أَبُو بَكْرِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ أَحْمَدَ بْنِ بَالَوَيْهِ، ثَنَا مُعَاذُ بْنُ الْمُثَنَّى الْعَنْبَرِيُّ، ثَنَا سَيْفُ بْنُ مِسْكِينٍ، ثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْمَسْعُودِيُّ، عَنِ الْحَسَنِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رضى الله تعالى عنه عَنْ أَبِيهِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ্রعَلَيْكُمْ بِأَلْبَانِ الْبَقَرِ وَسُمْنَانِهَا، وَإِيَّاكُمْ وَلُحُومَهَا فَإِنَّ أَلْبَانَهَا وَسُمْنَانُهَا دَوَاءٌ وَشِفَاءٌ وَلُحُومُهَا دَاءٌগ্ধ
অর্থ: (হযরত আবূ আব্দিল্লাহ হাকিম নিশাপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,) আমার নিকট হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আবূ বকর ইবনে মুহম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে বালাওয়াইহি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, তিনি বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন হযরত মুয়ায ইবনে মুছান্না আম্বরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, তিনি বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন হযরত সাঈফ ইবনে মিসকীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, তিনি বলেন, আমাদের নিকট হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আব্দিল্লাহ মাসঊদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত হাসান ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বর্ণনা করেছেন, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে। তিনি উনার পিতা থেকে, উনার পিতা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা গরুর দুধ ও দুধ থেকে বের হওয়া ঘি-মাখন খাও। তবে এর গোশত থেকে তোমরা বিরত থাকবে। কেননা, দুধ ও ঘিতে রয়েছে প্রতিষেধক। আর গোশতে রয়েছে ব্যাধি। নাঊযুবিল্লাহ! (আল মুস্তাদরাক আলাছ ছহীহাইন ৪/৪৪৮)
হযরত হাকিম নিশাপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই হাদীছ বর্ণনা করার পর বলেছেন এই হাদীছের সনদ ছহীহ। বাস্তবিক পক্ষে কি এই হাদীছের সনদ ছহীহ? সেটা সনদ পর্যালোচনা করলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।
সনদ পর্যালোচনা:
এই হাদীছের একজন রাবী হচ্ছেন- সাঈফ ইবনে মিসকীন। তার সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ বিশারদ উনাদের কিছু বক্তব্য দেখা যাক।
হযরত ইমাম দারা কুত্বনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত আবূ হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনারা বলেন-
وَسَيفُ بن مِسكِينٍ هَذا لَيس بِالقَوِيِّ
অর্থ: সাঈফ ইবনে মিসকীন তিনি শক্তিশালী নন। (আল ইলাল লিদ দারা কুত্বনী ১/২১৯, তাহক্বীকু জুযইম মিন ইলালি ইবনে আবী হাতিম ১/৬১)
হযরত মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে মুহম্মদ শাওক্বানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
سيف بن مسكين وهو واه
অর্থ: সাঈফ ইবনে মিসকীন তিনি জারাহগ্রস্ত, ভিত্তিহীন। (আল ফাওয়ায়িদুল মাজমূআহ্ ফিল আহাদীছিল মাওদূআহ্ ১৩৪ পৃষ্ঠা)
হযরত ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ আরো অনেকে বলেন-
سيف بن مسكين عن سعيد بن أبي عروبة شيخ بصرى يأتى بالمقلوبات ويأتي بالأشياء الموضوعة
অর্থ: সাঈফ ইবনে মিসকীন তিনি সাঈদ ইবনে আবী আরুবাহ উনার থেকে বর্ণনা করতেন। তিনি ছিলেন বছরার শায়েখ। তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ পরিবর্তন করে বর্ণনা করতেন এবং বানোয়াট জাল হাদীছ বর্ণনা করতেন। (মীযানুল ই’তিদাল ২/২৫৭, লিসানুল মীযান ৪/২২২, তানযীহুশ শরীআতিল মারফূআহ্ ১/৬৬) (চলবে)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল কায়িনাত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করা ও তা’যীমার্থে ক্বিয়াম শরীফ করা সুন্নত হওয়ার অকাট্য প্রমাণ
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে রজম বা ছঙ্গেছারের বিধান (৩)
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মর্যাদা-মর্তবা ও ফযীলত মুবারক প্রসঙ্গে (৩৭)
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কর্তব্য কাজে দৃঢ়তা এনে দেয় সন্তুষ্টি ও নিয়ামত
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
উলামায়ে সূ’ ধর্ম ব্যবসায়ীদের পরিচিতি ও হাক্বীক্বত (৪)
১২ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
১২ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১২ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)