স্থাপত্য-নিদর্শন
৪০০ বছরের আলোচিত প্রাচীন স্থাপত্য তেবাড়িয়া জামে মসজিদ
, ০৯ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৫ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ১২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৭ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) স্থাপত্য নিদর্শন
মসজিদে যে কোন নেক নিয়তে দান করলে পূরণ হয়, পাশের পুকুরে গিয়ে বললেই ভেসে ওঠে পিতলের থালা-বাসন! এমনকি রাতের আঁধারে এই মসজিদে নামায পড়ে জ্বিনরাও, এমনই অলৌকিকতায় ঘেরা টাঙ্গাইলের তেবাড়িয়া জামে মসজিদ।
জানা যায়, প্রায় ৪০০ বছর আগে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের তেবাড়িয়া গ্রামে স্থাপিত হয় মসজিদটি। যমুনা নদীর ভাঙনে পুরো এলাকা বিলীন হলেও মসজিদটি অক্ষত থাকায়, অলৌকিক আল্লাহ’র ঘর বলে বিশ্বাস করেন স্থানীয়রা। নদীর স্রোত আর ঢেউয়ের প্রখরতায় মসজিদটি দুলতে থাকে, তবে ভেঙে যায়নি বলে দাবি স্থানীয়দের।
মসজিদটির দৃষ্টিনন্দনও বটে। বড় গম্বুজসহ চারপাশে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ১২টি মিনার ও উত্তর-দক্ষিণ দিকে দুটি দৃষ্টিনন্দন ঘর আছে। যেখানে দাঁড়িয়ে জনসাধারণ হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল থেকে শুরু করে স্বর্ণসহ নগদ টাকা দান করে মানত করেন। জমির উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে অর্জিত অর্থ মসজিদের কোষাগারে জমা করা হয়।
ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ তেবাড়িয়া জামে মসজিদ প্রবাহমান যমুনা নদীর কোল ঘেষে আনুমানিক ১৬০১ খ্রীস্ট পূর্বে ২৫৩ শতাংশ জায়গা নিয়ে মৃধা বংশোদ্ভুত আব্দুল মালেক খাঁ মৃধা এই মসজিদ নির্মাণ করেন।
যখন এটি নির্মিত হয় তখন মূল ভবনের পাশে একটি বিশাল আকারের জাম গাছে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত পণ্যবাহী নৌযান বেধে রাখা হত। তৎকালীন নদী থেকে মসজিদ একটু উচু স্থানে নির্মাণ করা হয়েছিল, একারণে সিঁড়ি দিয়ে উঠে মসজিদে প্রবেশ করা হতো।
মসজিদটি নির্মাণ করার পর আব্দুল মালেক খাঁ (মৃধা) মিম্বরে দাঁড়িয়ে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে অছিয়ত করেছিলেন যে, তার মৃত্যু যে স্থানে হবে তাকে যেন ওইখানেই কবর দেওয়া হয়। এরপর তিনি মিম্বর থেকে নামতেই ইন্তেকাল করেন।
পরবর্তী সময়ে মৃধা বংশোদ্ভূত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান তালুকদার মসজিদের পশ্চিম দিকের এলাকা থেকে মোট ৩৭ শতাংশ জমি নিজস্ব অর্থায়নে দান করেন পাশাপাশি ওই এলাকার আরো ১০ শতাংশ ও পরবর্তীতে আরো ৬ বিঘা জমি নিয়ে মসজিদটি সম্প্রসারণ করা হয়।
এছাড়া মসজিদের আরও দেড় বিঘা জমি কয়েক বছর আগে যমুনা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
শোনা যায়, তৎকালীন সময় মসজিদের ভেতরে একজন নেককার পরহেজগার ব্যক্তি অবস্থান করতেন। তাকে সবাই পাগল ভাবতেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন একজন বুযূর্গ ওলীআল্লাহ।
মসজিদটি যখন প্রবাহমান যমুনা নদীর গ্রাসে বিলীন হচ্ছিল, তখন ওই ব্যক্তি নদীর উপর দিয়ে হেঁটে মসজিদের পশ্চিম দিকে অনেক দূর পর্যন্ত চলে যান। এরপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে দেখা যায় যমুনা নদী মসজিদ থেকে অনেক দূর পর্যন্ত পশ্চিম দিকে সরে যায়।
এরপর মসজিদটি পর্যায়ক্রমে মুসল্লিদের নামাযের জন্য সম্মুখভাগে দুইটি ছাদ নির্মাণ করা হয়। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া পূর্বের মিনারটি বর্তমানে মসজিদের উত্তর-পশ্চিম পাশে প্রায় ১০০ ফিট উঁচু করে নির্মাণাধীন আছে। বর্তমানে মসজিদটিতে প্রায় ২২০০ মুসল্লি একসঙ্গে নামায আদায় করতে পারেন।
সলিমাবাদ ইউনিয়নের (সাবেক কমান্ডার) মুক্তিযোদ্ধা সুজায়েত হোসেন জানান, টাঙ্গাইল শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরবর্তী পল্লী অঞ্চলে মোগল স্থাপত্য তেবাড়িয়া মসজিদটি ওয়াক্ফ বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত। সঠিক ব্যবস্থাপনায় মুসল্লিদের চাহিদা অনুযায়ী আধুনিকায়ন সময়ের দাবি।
সংকলনে: মুহম্মদ রেজাউল করিম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৭)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাজীগঞ্জ দুর্গ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৬)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সুনামগঞ্জে কালের সাক্ষী শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী পাগলা বড় মসজিদ
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
৫০০ বছরের ঐতিহাসিক নিদর্শন বাঘা শাহী মসজিদ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৬)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৫)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৩)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০২)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০১)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (২)
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)