১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
, ২৬ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৩ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ১২ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ২৭ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
৬ষ্ঠ মাস হচ্ছে جمادى الاخرى ‘জুমাদাল উখরা’ বা جمادى الاخر ‘জুমাদাল আখির’:( جمادى الاخرة বা ‘জুমাদাল আখিরাহ): অর্থাৎ বরফ জমার দ্বিতীয় মাস। এ দুটি মাসে যেহেতু আরবে বরফ জমতো, এজন্য এ দুটি মাসকে ‘জুমাদাল ঊলা’ ও জুমাদাল উখরা’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। جمادى ‘জুমাদা’ অর্থ বরফ জমার কাল।
হযরত শায়েখ ইলমুদ্দীন সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: আগেকার দিনে আরবদের হিসাব অনুসারে বছরে চন্দ্রমাসগুলো ঘুরে আসতো না, বরং প্রতিটি মাস সর্বদা বছরের একই ঋতুতে স্থিত থাকতো।
আমি (গ্রন্থকার হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি) বলি: হযরত শায়েখ সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ধারণাটি সঠিক নয়। কারণ, আরবদের গণনায় বছরের মাসগুলো চাঁদের সাথে সম্পর্কিত ছিলো। এমতাবস্থায় মাসগুলো বছরের একই ঋতুতে স্থির থাকতে পারে না। মাসগুলো অবশ্যই ঘুরে আসতো। আমার মনে হয়, আরবগণ সর্বপ্রথম যে বছর চন্দ্রবছরের মাসগুলোর নামকরণ করেছিলেন, ঘটনার পরিক্রমায় সেই বছর আলোচ্য দু’ মাস আরবে বরফ জমার ঋতুতে ছিলো। তাই উনারা ওই মাসগুলোকে উক্ত নামে অভিহিত করেছিলেন। পরবর্তীকালে উক্ত নামসমূহের সাথে উক্ত মাসগুলোর প্রাকৃতিক মিল না থাকলেও প্রথম নামকরণের অনুকরণে উল্লেখিত নামে অভিহিত হয়ে আসছে।
আরবী কবি বরফ জমার মাসকে جمادى ‘জুমাদা’ নামে অভিহিত করেছেন।
কবিতানুবাদ:
১ম পংক্তি: “বরফ জমা جمادى মাসের অনেক রাতে লোকেরা অন্ধকারে তাবুর আলোটি পর্যন্ত দেখতে পায় না।”
২য় পংক্তি: “বরফ জমার جمادى মাসের রাতগুলোতে কুকুর একবারের বেশি ঘেউ ঘেউ করে না। উক্ত রাতে কুকুর দেহের উপর লেজ গুটিয়ে রেখে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে থাকে।”
হযরত শায়েখ সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: جمادى শব্দের বহুবচন হচ্ছে جماديات - যেমন: حبارى শব্দের বহুবচন حباريات - জুমাদা جمادى শব্দটি কখনো পুংলিঙ্গ শব্দ হিসেবে আবার কখনো স্ত্রীলিঙ্গ শব্দ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন- বলা হয়ে থাকে جمادى الاولى ‘জুমাদাল ঊলা ও جمادى الاول ‘জুমাদাল আউওয়াল’ এবং جمادى الاخر ‘জুমাদাল আখির’ ও جمادى الاخرة ‘জুমাদাল আখিরাহ’ جمادى الاخرى ‘জুমাদাল উখরা।’
৭ম মাস হচ্ছে رجب রজব: অর্থাৎ সম্মানিত ও হারাম মাস। رجب শব্দটি ترجيب মাছদার থেকে নেয়া হয়েছে। رجب রজব শব্দের অর্থ: তা’যীম, সম্মান, ইজ্জত, মর্যাদা ইত্যাদি। শব্দটির বহুবচন رجبات- رجاب- ارجاب।
৮ম মাস হচ্ছে شعبان শা’বান: شعبان শব্দটি تشعب القبائل হতে উৎকলিত। شعبان অর্থ ছড়িয়ে পড়া। আরবরা এই মাসে নানা উদ্দেশ্যে বাড়ী হতে বের হয়ে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেন, এজন্যই এ মাসকে شعبان ‘শা’বান’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। شعبان শব্দের বহুবচন হচ্ছে شعابين ও شعبانات।
৯ম মাস হচ্ছে رمضان রমাদ্বান: অর্থাৎ গ্রীষ্ম বা গরমের মাস। আরবদেশে এই মাসে অত্যধিক গরম পড়তো বলে এ মাসকে رمضان ‘রমাদ্বান’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। رمضت الفصال অর্থাৎ অতিশয় পিপাসার কারণে গবাদি পশুর বাছুর গরম হয়ে যাওয়া। رمضان শব্দের বহুবচন হচ্ছে رماضين- رمضانات ও ارمضة।
হযরত শায়েখ সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কেউ কেউ বলেছেন, رمضان হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার একটি নাম।” এ বক্তব্যটি ভুল ও উপেক্ষণীয়। কিন্তু আমি (তাফসীরকার ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি) বলি: ‘রমাদ্বান رمضان হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার একখানা নাম মুবারক। এ মর্মে সত্যি একখানা হাদীছ শরীফ আছে। তবে হাদীছ শরীফখানার সনদ ضعيف ‘দ্বয়ীফ’ বা দূর্বল। (অতএব, শায়েখ সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতামত গ্রহণযোগ্য নয়। বরং কেউ কেউ যে বর্ণনা করেছেন, সে বর্ণনাটিই সঠিক) আমি উক্ত হাদীছ শরীফখানাকে كتاب الصيام উনার প্রথম দিকে উল্লেখ করেছি।
১০ম মাস হচ্ছে شوال শাওওয়াল: শাওওয়াল শব্দের অর্থ হলো যে মাস রিযিকের ব্যবস্থা করতে পারেনা। এ মাসে আরবের লোকেরা ভ্রমন করে ও শিকার করে রিযিকের ব্যবস্থা করতেন এজন্য এ মাসের নাম রাখা হয়েছে শাওওয়াল। এছাড়াও আরো অনেক অর্থ রয়েছে। شوال শব্দটির বহুবচন হচ্ছে- شوالات- شواويل- شواول ।
১১শ মাস হচ্ছে ذوالقعدة ‘যুল কা’দাহ: অর্থাৎ বসে থাকার মাস। القعدة শব্দটির অর্থ বসে থাকা। القعدة শব্দটির ق বর্ণে যবর যোগে পড়তে হবে। আমি (তাফসীরকার) বলি: ق বর্ণটিতে যের যোগে القعدة পঠিত হয়ে থাকে। (অনুবাদক: আমার মতে ق বর্ণে যবর যোগে পড়াই অধিক মাশহূর মত)
আরবগণ এ মাসে যুদ্ধ ও সফর স্থগিত রেখে বাড়িতে বসে থাকতেন বলে এ মাসকে ذو القعدة যুল ক্বা’দাহ’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। ذو القعدة শব্দের বহুবচন হচ্ছে ذوات القعدة।
১২শ মাস হচ্ছে ذوالحجة ‘যুল হিজ্জাহ’: অর্থাৎ হজ্জের মাস। الحجة শব্দটির ح বর্ণে যের যোগে পঠিত হয়ে থাকে। আমি (তাফসীরকার) বলি: ح বর্ণে যবর যোগে ذوالحجة ‘যুল হাজ্জাহ’ হিসেবে পঠিত হয়ে থাকে। (মূলত দুটি মত সমানভাবে মশহুর)। আরবগণ এ মাসে হজ্জ পালন করতেন বলে মাসটিকে ذوالحجة ‘যুল হিজ্জাহ’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। ذوالحجة শব্দের বহুবচন হচ্ছে ذوات الحجة ।
(তাফসীর ইবনে কাছীর সূরা তাওবাহ উনার ৩৬ নং আয়াত শরীফ উনার তাফসীর ২য় খ-- ৫৫৩ পৃষ্ঠা প্রকাশনা: দারুল ফিকির বইরূত- লেবানন)
উল্লেখিত বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরের ইবারত থেকে বুঝা গেল যে, ১২টি মাসের নামকরণের ব্যাপারে কিছু প্রেক্ষাপট রয়েছে। তবে মহান আল্লাহ পাক উনার ইলমে আযালী এবং সাইয়্যিদুনা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল ইলিম মুবারকে উক্ত বারটি মাসের নাম ও ধারাবাহিকতা এভাবেই ছিলো। যা পবিত্র সুরাতুত্ তাওবাহ শরীফ উনার ৩৬ নং পবিত আয়াত শরীফ, তাফসীরের কিতাব এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ ফিকির করলে স্পষ্ট বুঝা যায়। নিম্নে একই সঙ্গে হিজরী সাল অনুযায়ী ১২টি চন্দ্র মাসের নাম ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হলো।
১. পবিত্র মুর্হরমুল হারাম শরীফ (محرم الحرام شريف)
২. পবিত্র ছফর শরীফ (صفر شريف)
৩.পবিত্র সম্মানিত রবীউল আউওয়াল শরীফ (ربيع الاول شريف)
৪. পবিত্র রবীউছ্ ছানী শরীফ (ربيع الثاني شريف)
৫. পবিত্র জুমাদাল ঊলা শরীফ (جمادى الاولى شريف)
৬. পবিত্র জুমাদাল উখরা শরীফ (جمادى الاخرى شريف)
৭. পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ (رجب الحرام شريف)
৮. পবিত্র শা’বান শরীফ (شعبان شريف)
৯.পবিত্র ও বরকতময় রমাদ্বান শরীফ (رمضان المبارك شريف)
১০. পবিত্র শাওওয়াল শরীফ (شوّال شريف)
১১. পবিত্র যুল্ ক্বা’দাহ শরীফ (ذو القعدة الحرام شريف)
১২. পবিত্র যুল্ হিজ্জাহ শরীফ (ذو الحجة الحرام شريف)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












