হৃদরোগ চিকিৎসায় চলছে বহুমুখী নৈরাজ্য। নিম্নমানের চিকিৎসাযন্ত্র নিয়ে প্রতারণামূলক চিকিৎসায় অস্বাভাবিক বাণিজ্যই এর কারণ। বিদেশে চলে যাচ্ছে হাজার হাজার রোগী; পাচার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। জনগণ ও দেশবান্ধব দাবিদার সরকার এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে না।
, ১৩ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০১ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ৩০ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ১৬ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মন্তব্য কলাম
উল্লেখ্য, রোগীর রক্তনালী ৭০ শতাংশ কিংবা তার বেশি ব্লক হয়ে গেলে কার্ডিয়াক রিং বসানো হয়, চিকিৎসাবিজ্ঞানে যা করোনারি কার্ডিয়াক স্টেন্ট নামে পরিচিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ব্লক থাকলেও এ রিং বসানো হয়। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বাড়ছে হৃদরোগীর সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে এ রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কার্ডিয়াক (হৃৎপেশি) রিংয়ের চাহিদাও। তবে প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বড় হচ্ছে এর বাজার। শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি হলেও আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দেশে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে কার্ডিয়াক রিং। দামের পাশাপাশি প্রশ্ন আছে এসব রিংয়ের মান নিয়েও।
রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে দৈনিক ৩৫-৪০টি রিং পরানো হচ্ছে। সারা দেশে দৈনিক রিং পরানো হচ্ছে গড়ে ৬০-৭০ জন রোগীর শরীরে। অনলাইন বিপণন প্লাটফর্মের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটি কার্ডিয়াক রিংয়ের মূল্য ৩৫০ থেকে ৩৯০ ডলার, বাংলাদেশী মুদ্রায় যার দাম পড়ে ২৮ থেকে ৩১ হাজার টাকা। অথচ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনসহ সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে এসব রিং বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ থেকে ২ লাখ টাকায়। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় তা ৩ থেকে ৪ লাখ টাকায়ও কিনতে হচ্ছে রোগীদের।
প্রসঙ্গত, জনস্বাস্থ্য-সম্পর্কিত হওয়ায় কার্ডিয়াক রিং আমদানির ক্ষেত্রে সব ধরনের শুল্ক মওকুফ করেছে এনবিআর। শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে আমদানির পর অস্বাভাবিক মূল্যেই বিক্রি করছে সবাই। আমদানি করা এসব রিং বিপণনেও ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। রিং পরানো নিয়ে কমিশন বাণিজ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে একশ্রেণীর অসৎ ব্যবসায়ী ও চিকিৎসক। শতাধিক চিকিৎসক ও ২৫ রিং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছে হার্টের রিং বাণিজ্য। দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতার পরই রিং বিক্রি হয়। রোগীকে একটি রিং পরানো বাবদ ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসককে কমিশন দেয় ব্যবসায়ীরা। এতে রিংয়ের মূল্য বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষ এ কমিশন বাণিজ্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
দেশে পৌনে ৪ লাখ রোগীর জন্য মাত্র একজন কার্ডিওলজিস্ট রয়েছে। প্রতি ২০ লাখ রোগীর জন্য কার্ডিয়াক সার্জন একজন। কার্ডিয়াক অ্যানেসথেশিস্ট ও পারফিউশনিস্ট রয়েছে হাতেগোনা। সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে হৃদরোগ বিভাগ থাকলেও চিকিৎসক, জনবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। অধিকাংশ জেলা হাসপাতালে জোড়াতালি দিয়ে চিকিৎসা চললেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ চিকিৎসার ব্যবস্থাই নেই। ফলে রাজধানীর বাইরে হৃদরোগে অক্রান্ত রোগীরা ন্যূনতম চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর চিকিৎসা ব্যয় গরিব রোগীদের সাধ্যের বাইরে।
আর এতে করে গরিব রোগীরা উপযুক্ত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আর সামর্থ্যবান রোগীরা দেশে চিকিৎসা না করে বাইরে চলে যাচ্ছে। এক তদন্তে দেখা গেছে, হৃদরোগসহ বিভিন্ন চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রতি মাসে ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার রোগী বিদেশে যাচ্ছে। এর মধ্যে ভারতেই যাচ্ছে গড়ে প্রতি মাসে ১৫ হাজার রোগী। বাকিরা চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া যাচ্ছে। এ হিসাবে প্রতি বছর কমপক্ষে আড়াই লাখ লোক বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে। আর এর ফলে দেশের অর্থনীতি থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ৫৩ ভাগ মৃত্যুর কারণ হলো বিভিন্ন জটিল ব্যাধি; যার অন্যতম হচ্ছে করোনারি হৃদরোগ। এটি শতকরা প্রায় ২৭ ভাগ মৃত্যুর কারণ। আর দেশে যত শিশুর মৃত্যু হয়, তার মধ্যে শতকরা ১০ ভাগের মৃত্যু হয় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি লাখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৪৮৩ জন পুরুষ মারা যায়। আর নারী মারা যায় প্রতি লাখে ৩৩০ জন। কিন্তু হৃদরোগ এভাবে ফলাও হওয়ার পরও এর প্রতিকারমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না সরকার।
সারাদেশে যে হৃদরোগ হাসপাতালগুলো রয়েছে সেগুলোতে ক্যাথল্যাবের পাশাপাশি টিএমএলআর মেশিন, স্টেম সেল, রেনাল কার্ড, ইসিপি থেরাপি মেশিন বছরের পর বছর ধরে বিকল। কিন্তু সরকার থেকে এগুলো সচল এবং হৃদরোগীদের উন্নমানের চিকিৎসা নিশ্চিত করার কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, আমাদের কথা হলো- চিকিৎসা খাতে এত টাকা বাজেটের পরও হৃদরোগের মতো কঠিন রোগে আলাদাভাবে উল্লেখযোগ্য বাজেট বরাদ্দ নেই কেন? এদিকে দেশের অর্থমন্ত্রী বলেছে- ‘৪ হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই নয়’। যদি তাই হয়, তবে শুধু হৃদরোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে না কেন?
সঙ্গতকারণেই আমরা মনে করি, সরকারের উচিত- হৃদরোগ প্রতিরোধে হৃদরোগ চিকিৎসার ব্যয় উল্লেখযোগ্যহারে কমিয়ে আনা। হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য উন্নত যন্ত্রপাতি হৃদরোগ হাসপাতালগুলো সরবরাহ করা এবং বিকল যন্ত্রপাতিগুলো সচল করা। সারাদেশে জেলায় জেলায় আন্তর্জাতিক মানের হৃদরোগ হাসপাতাল তৈরি করা। তাতে বিশ্বমানের সেবা পেয়ে দেশের রোগীরা আর ভারতসহ অন্যান্য দেশে চিকিৎসার জন্য যাবে না। এতে করে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা দেশেই থাকবে এবং জনগণের ভোগান্তি কমবে বহুগুণ। দেশের অর্থনীতিতে এবং জনমন স্বস্তিতে বিশেষ ইতিবাচক দিক হিসেবে গণ্য হবে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অবশেষে কাশ্মীরীদের আলাদা মর্যাদা ৩৭০ ধরেও বাতিল করল মুসলিম বিদ্বেষী বিজেপি সরকার কাশ্মীর কি তবে আরেক ফিলিস্তিন হতে চলছে?
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাপবিত্র রওজা শরীফ ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফের পবিত্র ভূমি জাজিরাতুল আরবকে অপবিত্র করে দিন দিন পরিণত করা হচ্ছে অবাধ পাপাচারের পঙ্কিলরাজ্যে নাউযুবিল্লাহ! কা’বা শরীফের আদলে তৈরি মঞ্চে চলছে খোলামেলা পোশাকে ফ্যাশন শো, উদ্দাম কনসার্ট, বিক্রি হয়েছে ৩৬ লাখ কোটি টাকার ভারতীয় সিনেমার টিকিট; পালিত হচ্ছে হ্যালোইনও! নাউযুবিল্লাহ!
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
অবশেষে কাশ্মীরীদের আলাদা মর্যাদা ৩৭০ ধরেও বাতিল করল মুসলিম বিদ্বেষী বিজেপি সরকার কাশ্মীর কি তবে আরেক ফিলিস্তিন হতে চলছে?
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অবশেষে কাশ্মীরীদের আলাদা মর্যাদা ৩৭০ ধরেও বাতিল করল মুসলিম বিদ্বেষী বিজেপি সরকার কাশ্মীর কি তবে আরেক ফিলিস্তিন হতে চলছে?
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গ : কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণা ও ক্বিয়ামতের তথ্য
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খলীফাতুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি এবং উনার অনবদ্য তাজদীদ ‘আত-তাক্বউইমুশ শামসী’ সম্পর্কে জানা ও পালন করা এবং শুকরিয়া আদায় করা মুসলমানদের জন্য ফরয। মুসলমান আর কতকাল গাফিল ও জাহিল থাকবে?
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: ভয়ঙ্কর জেদ, মহা দাম্ভিকতা, চরম সীমালঙ্ঘন, প্রতিহিংসা, ক্ষমতা কুক্ষিগত করা ইত্যাদি কুরিপুর কারণে সরকারের পতন কিন্তু কুরিপুর সংজ্ঞা, প্রতিকার, পরিশুদ্ধির প্রক্রিয়ার বর্ণনা সংবিধানে তথা রাষ্ট্রীয় কোন কিতাবে নেই তাহলে রাষ্ট্রের সংস্কার হবে কীভাবে? নাগরিক সুরক্ষা হবে কেমনে?
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ভীনদেশী অ্যাপের ফাঁদে পড়ে বিপথে যাচ্ছে দেশের তরুণ প্রজন্ম বাড়ছে নারীপাচার, দেশে বাড়ছে অশ্লীলতা ও পর্ণোগ্রাফির প্রচার কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করেই একটি মহল এসব অপসংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটাচ্ছে এসব অপসংস্কৃতি নির্মূলে দ্বীন ইসলামই একমাত্র সমাধান
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচারণার বিপরীতে রপ্তানি আসলে কতটা চাঙা হবে প্রকৃত রপ্তানি আয় আসলে কত? ১০ বছরে রপ্তানি বেশি দেখানো হয়েছে ৬৫ বিলিয়ন ডলার পেছনে রয়েছে ক্ষমতাসীনদের উন্নয়নের রাজনীতির মিথ্যাবুলি, মহা সাগর চুরি আর অর্থপাচারের নিকৃষ্ট কাহিনী
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আলোকে- সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ উনাদের কতিপয় ফযীলত মুবারক বর্ণনা।
১৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১লা জানুয়ারি ২০২৫ থেকে সুইজারল্যান্ডে মুখ ঢেকে রাখলেই প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা (নাউযুবিল্লাহ) বোরকা পড়াকে সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপীয় দেশ পর্দার আড়ালে নারীদের বন্দী, বৈষম্য এবং পিছিয়ে পড়ার অপবাদ দিলেও বাস্তবতা হচ্ছে গোটা ইউরোপ-আমেরিকায় নারীর প্রতি বৈষম্য হয়রানি, সহিংসতা, অত্যাচার আর ব্যভিচারের মাত্রা ভয়াবহ পশ্চিমাদের বোরকা নিষিদ্ধের প্রবনতা শুধুই ইসলাম আর মুসলিম বিদ্বেষ (পর্ব-১)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সন্ত্রাসবাদ নয়; জিহাদী যোগ্যতা অর্জন করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী ফরয। ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সব নাগরিকের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)