حكايات الابرار
হিকায়াতুল আবরার বা নছীহতমূলক ঘটনাসমূহ (১৫)
, ১৮ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৭ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ০৬ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ২২ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ইয়াক্বীন প্রধাণত তিন প্রকার- ইলমুল ইয়াক্বীন, আইনুল ইয়াক্বীন, হক্বকুল ইয়াক্বীন। অর্থাৎ জানা দেখা এবং অন্তর থেকে অনুভব করা। যেমন একটা লোক জানে দুধ খেলে স্বাস্থ্য ভাল হয়, এটা ইলমুল ইয়াক্বীন। আবার সে একজন হালকা পাতলা লোককে দেখলো দুধ পান করে মোটা হয়ে গেছে, এটা আইনুল ইয়াক্বীন। আর হক্বকুল ইয়াক্বীন হলো সে নিজেই দুধ পান করে স্বাস্থ্যবান হয়ে গেল। অথবা মেছালস্বরূপ, আগুন সবকিছুকে জ্বালিয়ে দেয়, একটা লোক আগুনে হাত দিল, তার হাতটা পুড়ে গেল। এখন আমি নিজের হাত দিয়ে দিলাম, আমার হাতটা পুড়ে গেল। অতএব ইলমুল ইয়াক্বীন, আইনুল ইয়াক্বীন, হক্বকুল ইয়াক্বীন হয়ে গেল। এ প্রসঙ্গে একটা মেছাল দেয়া হয় কিতাবে- এক লোক তাদের নিজস্ব পুকুরে মাছ ধরতে গেল। মাছ ধরতে গেলে ছোট বড় অনেক রকম মাছই ধরা পড়ে। সে মাছ ধরে বাড়িতে নিয়ে এসেছে। এনে স্ত্রীর কাছে দিল। স্ত্রী সেই মাছগুলোর মধ্যে যেগুলি বড় বড় মাছ, সেগুলি বেছে রেখে ছোট মাছগুলো আলাদা করলো। তার স্ত্রী বড় মাছগুলো চুলাতে ভেজে বাচ্চাদেরকে খেতে দিল। বাচ্চারা খাওয়া-দাওয়া করে কাটাগুলো পাশে ফেলে দিল এবং সে কাটাগুলো একটা বিড়াল খেয়ে ফেললো। এটা ঐ ছোট ছোট মাছগুলো লক্ষ্য করলো। বাড়ির মালিক যখন আসল, তখন তার স্ত্রী বললো, আপনি যে মাছ এনেছেন, বড় মাছগুলি আমরা রেখেছি, এখন ছোট মাছগুলি পানিতে ফেলে দেন। কারণ এগুলো বড় হলে খাওয়া যাবে সেই বাড়ির মালিক ছোট মাছগুলো নিয়ে পানিতে ফেলে দিল। ছোট মাছগুলো দেখলো, বড় মাছ ধরে এনে কাটা হলো, তারপর তেলের মধ্যে আগুনের দ্বারা ভাজা হলো। তারপর তা বাচ্চারা খেল এবং কাটাগুলো ফেলে দিল, যা বিড়ালে খেয়ে ফেললো। তারপর যখন ছোট মাছগুলো পানিতে ফেলা হলো, তখন তারা গিয়ে বড় বড় মাছগুলোকে বলে দিল, তারা যা যা দেখেছিল এবং অন্যান্য মাছদের বললো, এরপরে যখন জাল আসবে, বর্শী আসবে তখন তোমরা তার কাছে যেওনা, গেলে তোমাদের নির্ঘাত মৃত্যু।
وبالاخرة هم يوقنون এখন হাক্বীকী ইয়াক্বীন হলো, এই বাচ্চা মাছগুলির মত অবস্থা, যা হাক্বীকতের হাল এবং ঠিক এই হালটা যখন কোন মানুষের মধ্যে হবে তখন وبالاخرة هم يوقنون সে আখেরাতের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে হাক্বীকী হক্বকুল ইয়াক্বীন অর্জন করতে পারবে। এরপূর্বে তার হক্বকুল ইয়াক্বীন অর্জন করা কঠিন। কমপক্ষে সে ইলমুল ইয়াক্বীনতো অবশ্যই অর্জন করবে, তারপর আইনুল ইয়াক্বীন। কাজেই মাছের বাচ্চারা যেমন হক্বকুল ইয়াক্বীন অর্জন করেছে, ঠিক কেউ যদি মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হয়, তাহলে অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে হাক্বীকী হক্বকুল ইয়াক্বীন অর্জন করার তৌফিক দান করবেন।
খালিছভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার রেযামন্দি হাছিলের দৃষ্টান্ত
মহান আল্লাহ পাক উনার পথের মধ্যে কায়েম থাকা প্রসঙ্গে একটা মেছাল দেয়া হয়। হযরত কারমাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার সাথে একবার এক ইহুদীর মল্লযুদ্ধ হয়। একে একে তিনি তিন দিন পর্যন্ত তার সাথে কুস্তি করেন এবং তৃতীয় দিন তিনি তাকে পরাস্ত করেন। পরাস্ত করে তিনি তার বুকের উপরে উঠে বসেন। বসে তিনি তরবারী নিয়েছেন তাকে দুই টুকরা করে ফেলবেন। ঠিক সেই মুহূর্তে ঐ ইহুদী ব্যক্তি হযরত কারমাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার দিকে থুথু নিক্ষেপ করলো। যখন উনার শরীর মুবারক-এ সে থুথু দিল, তিনি উঠে বসলেন। ইহুদী ব্যক্তি বললো, হুযূর তিন দিন ধরে আপনি আমার সাথে কুস্তি করে আমাকে পরাস্ত করলেন। এখন আমার গলায় তরবারী চালিয়ে আমাকে হত্যা করবেন। অথচ আমাকে ছেড়ে উঠে গেলেন, আমি সামান্য থুথু দিলাম তার কারণে। কি ব্যাপার? হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, দেখ আপাততঃ তোমাকে হত্যা করা আমার উদ্দেশ্য নয়, আমি তো মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মত ও পথের উপর কায়েম থেকে তোমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। তুমি যখন আমাকে থুথু দিলে, তখন আমার মধ্যে নফসানিয়াত এসে গেল, আমার গোস্বা হলো, এখন যদি আমি আমার গোস্বার জন্য তোমাকে হত্যা করে ফেলি, তা হবে আমার জন্য। আমি তোমাকে শোয়ায়েছিলাম খালেছভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার রেযামন্দি হাছিল করার জন্য। কাজেই তুমি যখন আমাকে থুথু দিলে, তখন আমি চিন্তা করলাম তোমাকে হত্যা করা ঠিক হবে না। হয়ত এটা গায়রুল্লার জন্য হয়ে যেতে পারে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব (২)
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১)
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রসঙ্গ: সউদী রাজ পরিবারের পূর্বপুরুষ ইহুদী যে কারণে (১)
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- পবিত্র খুতবা উনার হুকুম-আহকাম
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১)
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র মসজিদ নির্মাণের ফাযায়িল-ফযীলত
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)