حكايات الابرار
হিকায়াতুল আবরার বা নছীহতমূলক ঘটনাসমূহ (১৫)
, ০৬ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৬ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ১১ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
দান করার বদৌলতে পবিত্র ঈমান নছীব এবং পবিত্র হজ্জ করার তাওফীক্ব লাভ
অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপন করে যেমন তাকওয়া হাছিল করা যায় এবং নামায পড়ে তাক্বওয়া অর্জন করা যায়, ঠিক তদ্রূপ দান খয়রাত করেও তাক্বওয়া অর্জন করা যায়। এ প্রসঙ্গে একটা মেছাল বলা হয়। তা হলো- হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন- তিনি বছরা শহরে থাকতেন। একদিন তিনি দেখলেন এক ইহুদী মহিলা একটা কুকুরকে রুটি খাওয়াচ্ছে। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, হে ইহুদী মহিলা! তুমি তো ঈমান আননি, তুমি যে কুকুরকে রুটি খাওয়াচ্ছো তোমার তো এ খাওয়াতে কোন ফায়দা হবে না। ইহুদী মহিলা বললো, হুযূর! দিলের খবরতো মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন। অর্থাৎ আমি ঈমান এনেছি বা আনি নাই, আমি কেন খাওয়াচ্ছি সেটা তো মহান আল্লাহ পাক তিনি বেহতর জানেন। একথা বলে সেই মহিলা খাওয়াতে লাগলো এবং সম্পূর্ণ রুটি সে কুকুরকে খাওয়ালো। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলে চলে গেলেন। অনেকদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র হজ্জ করতে গেলেন। তিনি হঠাৎ দেখেন পবিত্র ক্বাবা শরীফ উনার কাছে এক কোণার মধ্যে একজন মহিলা সিজদায় গিয়েيارب يارب বলছে, হে আমার রব মহান আল্লাহ পাক, হে আমার রব মহান আল্লাহ পাক ইত্যাদি। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দূর থেকে লক্ষ্য করলেন। হঠাৎ গায়েবী নেদা হলো لبئك يااماتى হে আমার বান্দী, আমিতো উপস্থিত আছি। সে আরো দোয়া করলো, কান্নাকাটি করলো, তারপর সে তার মাথা উত্তোলন করলো এবং সামনে বসা হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে বললো, হুযূর! আমাকে আপনি চিনেছেন? হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “কে আপনি”? আপনার কি স্মরণ নেই, বছরার বাজারে একবার এক ইহুদী মহিলা, একটা কুকুরকে রুটি খাওয়াচ্ছিলো, আপনি নিষেধ করেছিলেন, আমি সেই মহিলা। আমি বলেছিলাম, হুযূর! মহান আল্লাহ পাক তিনি তো দিলের খবর রাখেন। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাকিয়ে বললেন, আপনি কি সেই মহিলা? মহিলা বললো, হুযূর! আমি যে দান করেছিলাম তার বদৌলতে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে ঈমান দিয়েছেন এবং পবিত্র হজ্জ করার তাওফীক্ব দিয়েছেন। (সুবহানাল্লাহ)
মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনাকে তাযীম-তাকরীম করার প্রতিদান
“তারা ঈমান আনে ওই কিতাব উনার প্রতি, যে কিতাব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি নাযিল করা হয়েছে। আর যে কিতাব পূর্বে নাযিল করা হয়েছে, সে কিতাব উনার প্রতি।
যেমন বলা হয়, এক বুযুর্গ মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী উনার নাম মুবারক ছিল হযরত বিশর হাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি প্রথম জীবনে ছিলেন একজন শরাবখোর, সারাদিন শরাবখানায় মাতাল হয়ে থাকতেন, আজেবাজে কাজ করতেন। হযরত বিশর হাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একদিন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ দেখলেন- মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম অর্থাৎ بسم الله الرحمن الرحيم একটি কাগজে লিখা এবং কাগজটি মাটিতে পড়ে আছে। ওটা দেখে হযরত বিশর হাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন মনে মনে চিন্তা করলেন, সারা জীবনতো পাপ করেছি, নেক কাজতো করিনি, মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম এটাতো অবশ্যই মাটিতে থাকা উচিত নয়, এটাকে তুলে নেয়া উচিত। কাগজটি তুলে নিলেন। তুলে নিয়ে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে আতর গোলাপ মেখে উনার সেই ঘরের উঁচু স্থানে রেখে দিলেন। এরপর তিনি আবার শরাবখানায় চলে গেলেন। ওই এলাকায় একজন আল্লাহওয়ালা লোক ছিলেন। তিনি রাতে স্বপ্নে দেখলেন উনাকে স্বপ্নে বলা হচ্ছে, হে ব্যক্তি তুমি বিশরকে গিয়ে সংবাদ দাও, আমি তাকে কবুল করেছি। স্বপ্নটা দেখার পর উনার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম থেকে উঠে মনে মনে চিন্তা করলেন, স্বপ্নটা আমি ভুল দেখেছি। কারণ ওই ব্যক্তি নিশ্চয়ই ভাল লোক নয়। তিনি অজু করে দু’রাকায়াত নামায পড়ে আবার শুয়ে পড়লেন। একে একে তিনবার একই স্বপ্ন দেখলেন এবং শেষবার বলা হলো, তুমি তাড়াতাড়ি সংবাদ দাও, আর তা না হলে তোমার অসুবিধা হবে। বুযুর্গ ব্যক্তি তাড়াতাড়ি সংবাদ দেয়ার জন্য উনার বাড়ীতে গেলেন। উনার বাড়ী থেকে বলা হলো, তিনি তো এখানে নেই, তিনি শরাবখানায়। সেই বুযুর্গ ব্যক্তি তিনি শরাবখানায় গিয়ে উনার যারা বন্ধু-বান্ধব ছিল তাদেরকে বললেন, কোথায় বিশর হাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি? সেই বযুর্গ ব্যক্তি বললেন উনার সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে পয়গাম এসেছে। তিনি দেখলেন বিশর হাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মাতাল অবস্থায় রয়েছেন শরাব পান করে। তিনি সেখানে গিয়ে বললেন, হে বিশর হাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনার কাছে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ হতে পয়গাম এসেছে। তিনি মাতাল অবস্থায় বললেন, হে ব্যক্তি শান্তিÍর পয়গাম না অশান্তির পয়গাম? বলা হলো, তোমার জন্য শান্তির পয়গাম এসেছে। হযরত বিশর হাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লাফিয়ে উঠে বললেন, হে বন্ধুরা আজ থেকে বিদায়। মহান আল্লাহ পাক আমাকে কবুল করে নিয়েছেন এবং সংবাদ প্রেরণ করেছেন। আমি আর এখানে থাকবনা। তিনি চলে গিয়ে সেই যামানার যাঁরা বড় বড় মহান ওলী ছিলেন, উনাদের ছোহবত ইখতিয়ার করলেন এবং পরবর্তীসময় তিনি বড় ওলীআল্লাহ হয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ! হাফী শব্দের অর্থ হলো- খালি পায়ে যে চলে অর্থাৎ জুতাবিহীন। তিনি খালি পায়ে চলতেন বাগদাদের রাস্তায় রাস্তায়। উনার প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি যতদিন জিন্দা ছিলেন, ততদিন পর্যন্ত বাগদাদের রাস্তার মধ্যে কোন পশু-পাখি সরাসরি ইস্তিঞ্জা করতো না। (সুবহানাল্লাহ) একদিন এক পশুর মালিক দেখলেন, এক পশু রাস্তার মধ্যে ইস্তিঞ্জা করছে। তিনি বললেন,انالله وانا اليه راجعون তিনি যখন একথা বললেন, তখন সঙ্গী সাথীরা বললেন যে, ভাই কে মারা গেল তুমি যে একথা বললে? পশুর মালিক বললেন, দেখ নিশ্চয়ই কিছুক্ষণ আগে হযরত বিশর হাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিদায় নিয়েছেন। সংবাদ নিয়ে জানা গেল, সত্যি কিছুক্ষণ আগে হযরত বিশর হাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিদায় নিয়েছেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো- তুমি কি করে এটা বুঝলে? তিনি বললেন, আমি লক্ষ্য করছি আজ পর্যন্ত যতদিন পশু চরাই বাগদাদের রাস্তায় কোন পশু-পাখিকে ইস্তিঞ্জা করতে দেখিনি, একমাত্র হযরত বিশর হাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানার্থে। কিন্তু আজকে যখন এই পশু ইস্তিঞ্জা করলো, আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম নিশ্চয়ই হযরত বিশর হাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জমিনের উপর নেই এবং সত্যিই সংবাদ নিয়ে জানা গেল তিনি নেই। (সুবহানাল্লাহ) এখন চিন্তা-ফিকির করেন। যাঁরা কিতাবের উপর ঈমান এনেছেন এবং তাক্বওয়া অর্জন করেছেন উনাদের কতটুকু মর্যাদা মহান আল্লাহ পাক তিনি দিয়েছেন। কতটুকু উনাদের ফযিলত দিয়েছেন সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১)
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র মসজিদ নির্মাণের ফাযায়িল-ফযীলত
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সমস্ত প্রকার অশ্লীলতাই হারাম
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১)
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)