حكايات الابرار
হিকায়াতুল আবরার বা নছীহতমূলক ঘটনাসমূহ (১৩)
, ২০ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৩ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১৩ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ২৭ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
এক লোক ইন্তিকালের সময় তাকে বারবার তালকীন দেয়া হচ্ছে কালিমা শরীফ-এর। অথচ সে বারবার বলে- এক এক, দুই দুই, তিন তিন- এ কথা বলে সে বেহুঁশ হয়ে যায় আবার সে সুস্থ হয়। সুস্থ হবার পর জিজ্ঞেস করা হলো, বাপু তোমাকে বলা হলো কালিমা শরীফ পাঠ করতে অথচ তুমি বলছ- এক এক, দুই দুই, তিন তিন, কি ব্যাপার? সে বলল যে, দেখ মূলত তুমি যখন আমাকে কালিমা শরীফ-এর তালকীন দাও, তখন মনে হলো আমার জিহ্বার মধ্যে যেন একটা পিন লাগান আছে, আমি এটা বলতে পারি না। আমার মুখ দিয়ে আপসে আপ বের হয়ে যায়- এক এক, দুই দুই, তিন তিন। কি ব্যাপার এটা কেন বের হয়? সে বলল যে, দেখ আমি মূলত ব্যবসা করতাম। মাপ দিয়ে জিনিস বিক্রি করতাম, তার মধ্যে আমি হেরফের করতাম। যার জন্য আমি এক এক, দুই দুই, তিন তিনই বলি। আমার মুখে কালিমা শরীফ আসে না।
كل اناء يترشح بـما فيه.
অর্থ: “পাত্রে আছে যাহা, ঢালিলে পড়িবে তাহা।”
দিলের মধ্যে যেটা থাকবে সেটাই বের হবে।
অতএব, যদি কেউ নিজের দিলে তাক্বওয়া প্রবেশ করাতে পারে তাহলে তার বাহ্যিক শরীরের মধ্যে তাক্বওয়া ফুটে উঠবে। আর যদি দিলের মধ্যে তাক্বওয়া না থাকে, তাহলে কি করে তাক্বওয়া জাহির হবে? কখনই সম্ভব নয়।
ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাকওয়া
ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিশ বছর যাবত অযুতে পায়ের অঙ্গুলী মুবারকের উপর দিয়ে খিলাল করে নামায পড়েছিলেন, পরে যখন জানতে পারলেন পায়ের আঙ্গুলের নীচে দিয়ে খিলাল করা মুস্তাহাব তখন তিনি বিগত বিশ বৎসরের সম্পূর্ণ নামায ক্বাজা পড়েছিলেন। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)।
ফাতহুল ক্বাদীর কিতাবে উল্লেখ আছে নামাযের মধ্যে মাকরূহ তাহরীমী হলে নামায দোহরানো ওয়াজিব, আর মাকরূহ তানযীহী হলে নামায দোহরানো মুস্তাহাব। নামাযের মধ্যে কোন মুস্তাহাব তরক হলে নামায দোহরানোর আদেশ শরীয়ত উনার মধ্যে নেই, তা সত্বেও হযরত ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তাক্বওয়া বা সাবধানতার জন্য বিশ বৎসরের নামায দোহরায়ে পড়েন। (জামেউর রুমূজ) কেননা তাক্বওয়া বা সাবধানতার জন্য এরূপ করতে শরীয়ত উনার মধ্যে কোথাও নিষেধ করা হয়নি।
হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাক্বওয়া
হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি হাম্বলী মাযহাবের ইমাম ছিলে। তিনি একবার তিনদিন না খাওয়া ছিলেন। হঠাৎ তিনি কিছু আটা জোগাড় করেছিলেন এবং সেগুলো নিয়ে আসলেন রুটি বানানোর জন্যে। এনে উনার আহলিয়ার কাছে দিলেন। বললেন : এক কাজ করুন, তাড়াতাড়ি করে রুটি বানিয়ে দিন। কারণ ক্ষুধা লেগেছে। উনার আহলিয়া মনে মনে চিন্তা করলেন, সত্যিই উনার যখন ক্ষুধা লেগেছে তাহলে তাড়াতাড়ি পাক করে দেই। তিনি আটা নিলেন। সেটা নিয়ে পাক-সাক করার জন্যে বন্দোবস্ত করলেন। তাড়াতাড়ি করে রুটি পাক করে এনে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সামনে পেশ করলেন। পেশ করার পরে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, এত তাড়াতাড়ি কি করে পাক করলেন? লবণ কোথায় পেলেন? আর আগুনই বা কোথায় পেলেন? উনাকে বলা হলো, হুযূর! মূলত তাড়াতাড়ি করা হয়েছে। কিন্তু এই আটা যদিও আপনার কিন্তু লবণ আনা হয়েছে আপনার যে ছেলে কাজী ছাহেব, তার বাড়ি থেকে। এখানে লবণ ছিল না। হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন : না, এই রুটি আমার জন্যে খাওয়া জায়িয হবেনা। কারণ আমার ছেলে কাজী ছাহেব সে বাদশাহর চাকরি করে এবং কাজীগিরি করে। হয়তো অনেক ফতওয়া সে এদিক সেদিক করতে পারে। আমার সন্দেহ আছে আমি এ রুটি খাবনা। এটা আমাকে দিও না। তিনি রুটিগুলো খেলেন না। সে রুটিগুলো রেখে দেয়া হলো পাকের ঘরে তাকের মধ্যে। কয়েকদিন পর হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার রুটিগুলো কোথায়? উনাকে জবাব দেয়া হলো, রুটিগুলো রেখে দেয়া হয়েছে পাকের ঘরের তাকের মধ্যে। উনি বললেন, সর্বনাশ! রুটিগুলো নষ্ট করেছেন কেন? রুটিগুলো ফকীর-মিসকিনদের দিয়ে দিন। তবে দেয়ার সময় লোকদের বলে দিবেন- রুটির আটাগুলো হলো ইমাম ছাহেবের আর লবণ হলো কাজী ছাহেবের। যখন ফকীর-মিসকিনকে বলা হলো, হে ব্যক্তি তোমাকে যে রুটিগুলো দেয়া হচ্ছে, এই রুটির আটাগুলো হলো ইমাম ছাহেবের। আর লবণ হলো কাজী ছাহেবের। তবে ইমাম ছাহেব এটা গ্রহণ করেননি। এটা শুনে ফকীর-মিসকিনও গ্রহণ করলো না। শেষ পর্যন্ত এটা নষ্ট হয়ে গেল। হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তাহলে এক কাজ কর, এটা কোথাও ফেলে দিয়ে আসুন। উনার খাদেমের কাছে দেয়া হলো ফেলে দেয়ার জন্যে। খাদেম সেটা ফেলে দেয়ার জন্যে নিয়ে গেল। নিয়ে সে চিন্তা করতে লাগল কোথায় ফেলবে? শেষ পর্যন্ত খাদেম সেটা নিয়ে ফেললো নদীর মধ্যে। নদীর মধ্যে ফেলে দেয়ার পর খাদেম ফিরে আসল। আসার পর হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় ফেললে তুমি? খাদেম বলল, হুযূর! নদীতে ফেলেছি। তিনি বললেন, সর্বনাশ করেছ! আজ থেকে আমার মাছ খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)