হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে ফল ও ফসলের আসল স্বাদযুক্ত জাত।
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও বাংলাদেশ কৃষি নিরাপত্তায় পরিপূর্ণ নয়। সরকারের উচিত- দেশের অর্থনীতি ও খাদ্যনিরাপত্তা অটুট রাখতে ঐতিহ্যবাহী ফসলের জাত সংরক্ষণের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা।
, ২৩শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৭ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ০২ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মন্তব্য কলাম
বাংলাদেশে ফল-ফসলের বহু জাত রয়েছে যেগুলোর বীজ শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায় না। এগুলো মাঠপর্যায়ে রয়েছে। জিনব্যাংকেও এসব জাতগুলো সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। আর এতে দেখা যাচ্ছে, দেশের খাদ্য চাহিদার অন্যতম উপাদান ধানের প্রায় ১৫ হাজার দেশীয় জাত বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সেইসাথে অন্যান্য বিভিন্ন ফসলের প্রায় ৫৭ জাত বর্তমানে বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এদের মধ্যে কাঁঠাল, জাম, আম, বেল ছাড়াও সবজির মধ্যে পটোল, কাঁকরোল, নানা জাতের কচু, ওলসহ বিভিন্ন ফসল রয়েছে। এগুলো বিএআরআইএ’র মাঠে সংরক্ষিত রয়েছে। এসব ফসলের জাতগুলো দ্রুত জিনব্যাংকে টিস্যু কালচার করে বা তরল নাইট্রোজেন দ্রবণে সংরক্ষিত করা যেতে পারে। কিন্তু এ ব্যবস্থা বিএআরআইএ’র কোলিকসম্পদ কেন্দ্রে নেই।
বর্তমান সরকার দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হিসেবে বিশ্বের বুকে গর্ববোধ করে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই স্বয়ংসম্পূর্ণতার পেছনে যে কৃষি ও কৃষকের অবদান রয়েছে, সেদিকে সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই। কৃষির সাফল্য মূলত নির্ভর করে কৃষি গবেষণার উপর। কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে দেশে কৃষি গবেষণা তো হচ্ছেই না, উল্টো দেশীয় ফসলের জাতগুলোর বিলুপ্ত হয়ে কৃষি ভারসাম্য ধ্বংস করে দিচ্ছে। যা দেশের খাদ্যনিরাপত্তার উপর একটি দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি।
বলতে হয়, ফল এবং ফসলের বহুমুখিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি অব্যাহত রাখতে হলে কোনো ফসল এবং ফলের জাত বিলুপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই। বরং গবেষণার মাধ্যমে জাতটিকে উন্নত করতে হবে। পাশাপাশি ফসল ও ফলের বিভিন্ন উন্নত জাত উদ্ভাবন করাও জরুরী। জিনব্যাংকে বিলুপ্তির আশঙ্কার মধ্যে থাকা ফল ও ফসলের জাত সংরক্ষণের পাশাপাশি দেশের কোথায় কোন ফসল আবাদ হচ্ছে বা মানুষ খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে- সেগুলোর জরিপ করে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের আওতায় আনা জরুরী। জিনব্যাংকে সংরক্ষণ এবং নিয়মিত আবাদের মাধ্যমে ফসল এবং ফলের জাত বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।
বলাবাহুল্য, উদ্ভিদ জাতের সংরক্ষণে ‘উদ্ভিদ জাত ও কৃষক অধিকার সংরক্ষণ আইন’ নামে একটি আইনের খসড়া প্রণয়ন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, আইন কার্যকরের ১০ বছরের মধ্যে উদ্ভিদ রাজ্যের সব উদ্ভিদের ‘গণ’ (জেনাস) ও ‘প্রজাতি’র জাত সংরক্ষণের আওতায় আনা হবে। জিনব্যাংক পদ্ধতি বেশি সক্রিয় করে বিভিন্ন ফল ও ফসলের জাত সংরক্ষণের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, বীজ সংরক্ষণে দেশের প্রতিবেশ অঞ্চলগুলোর কৃষকদের সম্পৃক্ত করতে না পারলে বীজ সংরক্ষণে জিনব্যাংক পদ্ধতি ব্যর্থ হবে। জিনব্যাংকে দীর্ঘ সময় ঘুমিয়ে রাখা ফসলের জিনগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন ঘটে থাকে। এর ফলে উৎপাদন ও ফলনে প্রভাব পড়ে। এছাড়াও বীজের সুপ্ত অবস্থার একটি নির্দিষ্ট সময় আছে, সেটি অতিক্রম করলে বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয়। তাই প্রতি বছর বীজগুলো কৃষকদের উৎসাহিত করে মাঠে আবাদ করে সংরক্ষণ করতে হবে। এর ফলে ওই প্রতিবেশ বীজটি টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করবে।
বাংলাদেশে কৃষিতে ফল ও ফসলের জাত সংরক্ষণ ও নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। কিন্তু আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দিকে তাকালে দেখতে পাই- তারা কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে ফল ও ফসলের জাত সুরক্ষার মাধ্যমে। জাপান ধানে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাদের দেশে ধানের বিভিন্ন জাত সংরক্ষণ ও নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করে তাদের দেশীয় জাতের স্বাদ অটুট রাখছে। ভারত ধানের পুরনো জাত বাসমতির জাত সুরক্ষার ফলে ফলন বৃদ্ধি করে বছরে প্রায় ১০ লক্ষ মেট্রিক টন বিদেশে রফতানী করে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। পাকিস্তানও বছরে ৭-৮ লক্ষ মেট্রিক টন বাসমতি রফতানী করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ কৃষিখাতে তাদের চেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় হওয়া সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কৃষি নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে।
সঙ্গতকারণেই আমরা বলতে চাই, সরকার থেকে নানা অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হচ্ছে। সেইসাথে সেইসব প্রকল্পে দুর্নীতি লুটপাটে ব্যয় দুইগুণ থেকে তিনগুণ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষিতে সরকারের কোনো মহাপরিকল্পনা ও গবেষণার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। এমতাবস্থায় দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সরকারের উচিত- কৃষিতে ফসলের জাতের প্রতি গুরুত্বারোপ করা। বিলুপ্তপ্রায় স্থানীয় জাতের বিভিন্ন ফসলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য শনাক্তকরণের মাধ্যমে কৃষি প্রজননবিদ ও বায়োটেকনোলজিস্টদের দ্বারা পুনরায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা এবং তাদের আরো উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। সেইসাথে বায়োটেকনোলজি ব্যবহার করে ও তরল নাইট্রোজেনের দ্রবণে সংরক্ষিত করা। এতে প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি ফল ও ফসলের জাতসমূহ সংরক্ষিত রাখা সম্ভব হয়। পাশাপাশি জিনব্যাংকে এসব দেশী জাত সংরক্ষণের পাশাপাশি দেশের কোথায় আর কোন্ কোন্ জাতের ফসল আবাদ হচ্ছে বা মানুষ খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকে সেগুলোর নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণের আওতায় আনতে হবে। আর এতে ফসলের মেধাস্বত্ব অটুট থাকবে। হাইব্রিডের ভীড়ে সত্যিকার স্বাদের দেশী ফসলগুলো রক্ষা করা যাবে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
জুয়ার নেশায় বুদ হচ্ছে শিশু-কিশোররা-শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ সাইটই পরিচালিত হয় দেশের বাইরে থেকে অনলাইনে জুয়ায় ছোট ছোট বাজির টাকা দিন শেষে একটি বড় অঙ্কের অর্থ হয়ে দেশ থেকে ডলারের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে প্রতিদিন
২২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রসঙ্গ: হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া এবং হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে গুপ্তহত্যার মাধ্যমে শহীদ করা জায়নবাদী তথা বর্বর ইহুদীরা কাপুরুষতার প্রমাণ দিয়ে অতীত ইতিহাস থেকে একের পর এক গুপ্তহত্যা করে আসছে ইহুদীদের গুপ্তহত্যার অনেক নিন্দা, ধিক্কার এবং প্রচারণা ও প্রতিহতের প্রচেষ্টা দরকার (পর্ব-১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শুধু যুবকরাই নয় এখন এনার্জি ড্রিংকসে বুদ হচ্ছে শিশুরাও কর ফাঁকি দিতে অনেক এনার্জি ড্রিংকস হয়ে গেছে কোমল পানীয় জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে অবিলম্বে এনার্জি ড্রিংকস বন্ধ করতে হবে
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইহুদী-নাছারাদের ষড়যন্ত্রে পড়েই দুনিয়াদার মালানারা বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফ বাদ দিয়েছে। পর্নোগ্রাফি, মাদক থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে চাইলে বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফও বেশি বেশি করতে হবে।
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ডানে সেলফি বামে সেলফি, সেলফি সেলফি সেলফি উম্মাদনায় সমাজে ব্যাপকভাবে বেড়েছে হত্যা, আত্মহত্যা, সম্ভ্রমহরণ, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা অপরাধ। বিভিন্ন দেশে সেলফি’র উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও বাংলাদেশে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
১৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দিন দিন বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা, খুন আর আত্মহত্যা মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং দ্বীন ইসলাম বৈরিতাই এর মুখ্য কারণ সরকারের উচিত জাতীয়ভাবে দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ ও শিক্ষা প্রচার ও প্রসার করে এই সামাজিক সমস্যাটি দূরিকরণ করা।
১৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ইনশাআল্লাহ আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের প্রথম ধনী দেশ। এক উত্তারাঞ্চলের খনিজ উত্তোলন করলেই গোটা দেশের চেহারা পাল্টে যাবে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা বরদাশতযোগ্য নয়।
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অবহেলায় কৃষিতে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক; বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। বিলুপ্তির পথে ১৯২ জাতের উপকারী পোকা। সরকারের উচিত অবিলম্বে কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও কৃষিকে বিষমুক্ত করা।
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালন করা কী অপরাধ? সংবিধান কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনের সুযোগ দেয়নি? পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে কী বেপর্দা ও ছবির বিরুদ্ধে বলা হয়নি?
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রতি বছর ১ কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক “অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নতুন আশঙ্কা এবং বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমেছে”- এ তথ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নচেৎ সাধারণ অসুখেই প্রাণনাশ হতে পারে
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘ইসলামভীতি মোকাবেলায় জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস’ হলেও কার্যকরী কিছুই হচ্ছে না ইসরাইলকে সহযোগিতা করতে আমেরিকায় ইসলামোফোবিয়ার বিস্তার আরো বাড়ানো হচ্ছে
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রতারণার ফাঁদে নাগরিক জীবন। সরকারের নজরদারী নেই। রকমফের প্রতারণা বন্ধে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক বিস্তারের বিকল্প নেই।
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)