হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফী বাতিল ফিরক্বারা
, ২৮ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৪ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ০২ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ১৭ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ওহাবী, সালাফী, লা’মাযহাবী ফেরকার লোকেরা সমাজে ইচ্ছামত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে জাল, মওজু, দ্বয়ীফ বলে অপপ্রচার করছে। নাউযুবিল্লাহ! তাদের মতবাদের বিপক্ষে মনে হলেই সেটাকে তারা জাল বলছে। আর এ জন্য তারা উছুলে হাদীছ শরীফ উনার বিভিন্ন অপব্যাখ্যার আশ্রয়ও গ্রহণ করতে কার্পণ্য করছে না। শত শত বছর ধরে উম্মত যে হাদীছ শরীফ উনার উপর আমল করে আসছে কেউ কোন আপত্তি করে নাই অথচ হাল যামানায় এসব ওহাবীরা হঠাৎ আবির্ভূত হয়ে জাল! জাল! বলে চিৎকার শুরু করেছে।
তাদের ধারণা পবিত্র বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ ছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অন্যান্য কিতাবে অনেক জাল বর্ণনা রয়ে গেছে। নাউযুবিল্লাহ! তাদের জানা দরকার একজন মুহাদ্দিছ যখন উনার কিতাবে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন তিনি সবসময় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন যাতে কিতাব খানা নির্ভরযোগ্য ও বিশুদ্ধ থাকে। এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনা বর্ণিত আছে, ‘কথিত খলীফা হারুনুর রশিদ (১৪৮-১৯৩ হিজরী) তাঁর দরবারে একজন মুরতাদকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিলো সে বদকার তখন বললো-
أَيْنَ أَنْتَ مِنْ أَلْفِ حَدِيْثٍ وَضَعْتُهَا؟
আমাকে মেরে ফেলবেন ভালো কথা, কিন্তু যে এক হাজার জাল হাদীছ লোক সমাজে ছড়িয়ে দিয়েছি সেগুলো কি করবেন? তখন খলীফা হারুনুর রশিদ বললো-
فَأَيْنَ أَنْتَ يَا عَدُوَّ اللهِ مِنْ أَبِي إِسْحَاقَ الفَزَارِيِّ، وَابْنِ المُبَارَكِ يَتَخَلَّلاَنِهَا، فَيُخْرِجَانِهَا حَرفاً حَرفاً
হে মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমন! আমাদের নিকট হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আবু ইসহাক ফাযারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা কি জন্য আছেন? উনারা প্রতিটি জাল শব্দকে ছাকনী দিয়ে ছেঁকে বেছে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবেন। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৬/৭১, মা’রিফাতু উলুমিল হাদীছ ৩৬ পৃষ্ঠা)
এ ঘটনা থেকেই বোঝা গেলো পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ইমামগণ সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে যাচাই বাছাই করে অনুপ্রবেশকৃত মিথ্যা বর্ণনা কর্তন করে বিশুদ্ধ বর্ণনা আমাদের জন্য কিতাব আকারে সাজিয়ে রেখে গেছেন, এবং কিতাবের ভূমিকায় লিখে গেছেন এই কিতাবে কোন মওজু বর্ণনা নেই। এরপরও সনদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, বিচার বিশ্লেষণ হয়েছে, গবেষণা হয়েছে। আর তার উদ্দেশ্য সম্পর্কেও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণ স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন-
كان الإسناد لئلا يدخل في الدين ما ليس منه، لا ليخرج ما ثبت من عمل أهل الإسناد
‘সনদ-তো এজন্য যে, শরীয়ত-বহির্ভূত জিনিস যেন সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে অনুপ্রবেশ না করে। ইমামগণ উনাদের মাধ্যমে প্রমাণিত জিনিসকে সম্মানিত শরীয়ত হতে বের করার জন্যে সনদ নয়। ’ (আজভিবাহ ২৩৮)
হযরত ইবনে মুহাররায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
على بن المدينى يقول ليس ينبغى لأحد ان يكذب بالحديث اذا جاءه عن النبى صلى الله عليه وان كان مرسلا فإن جماعة كانوا يدفعون حديث الزهرى قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احتجم فى يوم السبت او الأربعاء فأصابه وضح فلا يلومن الا نفسه فكانوا يفعلونه فبلوا منهم عثمان البتى فأصابه الوضح ومنهم عبد الوارث يعنى ابن سعيد التنورى فأصابه الوضح ومنهم ابو داود فأصابه الوضح ومنهم عبد الرحمن فأصابه
অর্থ: আমি হযরত আলী বিন মাদিনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বলতে শুনেছি যে, কারো জন্য উচিত নয় যে, সে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে সম্বন্ধযুক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করবে বা মিথ্যা বলবে। হোক তা মুরসাল। একবার কতিপয় লোক ইমাম হযরত যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আরবিয়া বা বুধবারে শিংগা লাগানো সম্পর্কীয় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করে আরবিয়া বা বুধবারে শিংগা লাগালে মারাত্মক মুছীবতে গ্রেপ্তার হয়। যাদের মধ্যে হযরত উসমান আল্ বাত্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল ওয়ারিস রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে সা’দ তানবুরী রহতুল্লাহি আলাইহি, আবু সাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা প্রমুখ ছিলেন। (মা’রিফাতু রিজাল লি ইয়াহিয়া ইবনে মুঈন ২য় খন্ড ১৯০ পৃষ্ঠা)
আর এ বিষয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
من حدث عني بحديث يرئ انه كذب فهو احد الكاذبين
অর্থ: যে ব্যক্তি আমার পক্ষ হতে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করলো এবং ধারণা পোষণ করলো যে, তা মিথ্যা তাহলে সে মিথ্যাবাদীদের অন্যতম ব্যক্তি। (মুসলিম শরীফ ১/৭, উমদাতুল ক্বারী ৩/২৬৮, মিশকাত- কিতাবুল ইলম- প্রথম পরিচ্ছেদ- হাদীস ১৮৮)
সুতরাং বোঝা গেলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবত করে কেউ কিছু বর্ণনা করলে সেটা ওহাবীদের মত বিনা জ্ঞানে মওযু বা জাল বলে অস্বীকার করলে সে নিজেই মিথ্যাবাদী বলে প্রতিপন্ন হবে।
-খাজা মুহম্মদ নুরুদ্দীন পলাশ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)