হরতাল, অবরোধ ও সহিংস কর্মসূচি চায় না ব্যবসায়ীরা কর্মজীবি ছাত্র-শিক্ষক সাধারণ নাগরিক কেউই ৯৮ ভাগ মুসলমানের দেশে হরতাল অবরোধ কোনো কর্মসূচী হতে পারেনা
ইসলামের দৃষ্টিতে হরতাল-অবরোধ হারাম (পর্ব-৩)
, ১৫ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০১ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ৩০ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মন্তব্য কলাম
পবিত্র কুরআনুল করীম উনার মধ্যে উল্লেখ আছে, “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই চিরকাল থাকবে।” (পবিত্র সুরা আন নিসা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৯৩)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “কোন মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসিকী, আর কতল করা কুফরী।” (বুখারী শরীফ)
বিদায় হজ্বের খুৎবায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “একজনের জান-মাল, সম্পদ, অন্যজনের জন্য হারাম।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা মু’মিনদের নিকট থেকে জান ও মালকে বেহেশতের বিনিময়ে খরিদ করেছেন।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১১১)
হরতালকারীরা স্বাভাবিক কাজ-কর্মে বাঁধা দেয়ার জন্য স্থানে স্থানে এক হয়ে যে পদক্ষেপ নেয়, (যেমন ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, চড়াও ইত্যাদি) তাকে পিকেটিং বলা হয়ে থাকে। ১৮৫৯ সালে গ্রেট বৃটেনে পিকেটিং প্রথার প্রবর্তন হয়। যদিও তখনকার পিকেটিংকে শান্তিপূর্ণ পিকেটিং বলে অভিহিত করা হয়। মূলতঃ এটা খৃষ্টানদের প্রথা, তাই পিকেটিং করাও জুলুম করার শামিল, যা সম্পূর্ণ হারাম এবং বিজাতীয় পদ্ধতি বা প্রথা।
সুতরাং হরতালের মাধ্যমে জান ও মালের ক্ষতি করা সম্পূর্ণ হারাম। হরতালের দ্বারা ব্যক্তিগত জান-মালের ক্ষতি তো হয়ই বরং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও ঘটে। কাজেই হরতাল করা সম্পূর্ণরূপে নাজায়েয ও হারাম।
(৪) একজনের অন্যায়ের শাস্তি অন্যকে দেয়াঃ- মূলতঃ হরতাল যে কারণে করা হয়, অর্থাৎ অপরাধীকে শাস্তি দেয়া তা মোটেই হয়না। অপরাধী অর্থনৈতিক ও মানবিক সব দিক থেকেই বহাল তবিয়তে অবস্থান করে থাকে। কিন্তু শাস্তি ভোগ করে জনসাধারণ, যারা অপরাধী নয়। অথচ হরতালের ফলে একজনের অপরাধের শাস্তি অন্যজনকে চাপিয়ে দেয়া হয়, এটা দ্বীন ইসলাম উনার বিধান নয়। বরং মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম মুবারক হলো, “একজনের গুণাহের বোঝা অন্যজন বহন করবে না।” (পবিত্র সূরা আন্আম শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৪)
অর্থাৎ একজনের অপরাধের শাস্তি আরেকজনকে দেয়া যাবেনা, যা মূলতঃ নিষেধ। কাজেই সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হরতাল সম্পূর্ণ হারাম।
(৫) হারাম পন্থায় ইসলাম কায়েমের চেষ্টাঃ- হারাম উপায়ে ইসলাম প্রচারের কথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র ফিক্বাহ শরীফ উনাদের কিতাবের কোথাও নেই। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রচার করতে হলে মহান আল্লাহ পাক উনার বিধান অনুযায়ী করতে হবে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআনুল করীমে ইরশাদ মুবারক করেন, “তারা আপনার নিকট কোন মোকদ্দমা নিয়ে আসলে, তার ফয়সালা শরীয়ত অনুযায়ী করুন। আর তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না।?
এ পবিত্র আয়াত শরীফ হতে বুঝা যায় যে, সর্বধিক ক্ষেত্রেই মহান আল্লাহ পাক উনার বিধান অনুযায়ী ফয়সালা করতে হবে। আর যারা মহান আল্লাহ পাক উনার বিধান অনুযায়ী চলবেনা, তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি যা নাযিল করেছেন, তদনুযায়ী যারা ফয়সালা করেনা, তারাই কাফির।”
অন্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে যারা মহান আল্লাহ পাক উনার বিধান ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী ফয়সালা করেনা, তাদেরকে ফাসেক, জালিম ইত্যাদি বলা হয়েছে। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি হারামকে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমাদের প্রতি যা হারাম করা হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১২০)
আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর মুবারক উনার মধ্যে বলেন, “হালাল সুস্পষ্ট হারামও সুস্পষ্ট। এর মাঝে কিছু জিনিস আছে, যা সন্দেহজনক।”
অনুরূপভাবে ভিন্য রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে, “হালাম স্পষ্ট এবং হারাম স্পষ্ট। যা সন্দেহজনক, তা ছেড়ে দাও। যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই, সেদিকে ধাবিত হও। (বুখারী শরীফ)
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা এটাই প্রতিয়মান হয় যে, যা হারাম তাতো অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে। আর যা সন্দেহজনক, তা থেকেও বেঁচে থাকতে হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী শরীয়ত উনার উসুল হলো- “যা হারামের দিকে নিয়ে যায়, তাও হারাম।”
কাজেই যে সমস্ত কাজ মানুষকে হারামের দিকে নিয়ে যায়, তা পরিহার করা অবশ্য কর্তব্য। আর ছবি তোলা, গণতন্ত্র, লংমার্চ কুশপুত্তলিকা দাহ, হরতাল ইত্যাদি স্পষ্ট হারাম, তা অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে। তাই সকলকে অনুসরণ করা যাবে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার ইত্বয়াত কর ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারও ইত্বায়াত কর। আর উলীল আমর উনাদের অনুসরণ করো।”
আর নিষেধ করেছেন ঐ সমস্ত লোকদেরকে অনুসরণ করতে, যাদের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করোনা, যার অন্তর আমার যিকির থেকে গাফেল ও যে প্রবৃত্তির (নফসের) অনুসরণ করে এবং যার কাজসমূহ সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার খিলাফ। (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যা নাপাক বা অপিবত্র, তা থেকে খারাপ ব্যতীত কিছুই বের হয়না।” (পবিত্র সূরা আরাফ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও বাংলাদেশে লিভ টুগেদারের স্রোত শুরু হয়েছে। লিভ টুগেদার কালচার ঠেকানোর নৈতিক ভিত্তি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের নেই। লিভ টুগেদার সমাজে যে ভয়াবহ ক্রাইম তৈরী করছে তা প্রতিহত করতে ইসলামী অনুশাসনের বিকল্প নেই।
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাজারে ভয়ংকর ঘন চিনি মিথ্যা ঘোষণায় আসছে আমদানি নিষিদ্ধ ঘন চিনি পুরুষত্বহানি, মূত্রাশয়ে ক্যান্সারের তথা জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর এই ঘন চিনি বন্ধে সরকারকে এখনি জিহাদ ঘোষণা করতে হবে
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: সেবা পেতে ঘুষকে স্বাভাবিক মনে করছে দেশের সিংহভাগ মানুষ। বছরে ঘুষ গ্রহণের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ঘুষই সমাজে সব অভাব থেকে অনিয়মের মূল কারণ।
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সমাজের স্রোত বা সময়ের সাথে আপোসকারীরা উলামায়ে হক্ব নয়। ইসলামী আহকাম ও আন্দোলন পদ্ধতি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় না। ইবনুল ওয়াক্ত নয়; কেবলমাত্র আবুল ওয়াক্ত উনারাই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ত্রাণকর্তা ও অনুসরণীয়।
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ডিজিটালাইজেশনের নামে শিশু-কিশোরদের ইন্টারনেট ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। দেশের ইন্টারনেট জগতে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শিশু-কিশোররা আক্রান্ত হচ্ছে অশ্লীলতায়। শিখছে অনৈতিকতা, বেহায়াপনা, হিংস্রতা।
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
রোগের খনি সাদা চিনি! বিপরীতে ব্র্যান্ডিং, যথাযথ প্রচারণার অভাবে অবহেলায় উপকারি দেশীয় লাল চিনি সরকারের উচিত, লাল চিনিকে বাজারসুলভ করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখা।
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা গবেষণার দিকে আগ্রহী না হয়ে বিসিএস পরীক্ষায় আগ্রহী হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তহবিল বা অর্থায়ন আসার প্রক্রিয়াটি সরকারের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগের মাধ্যমে সম্পন্ন হতে হবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক স্থাপন হয়নি
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কাদিয়ানীদের মালিকানায় প্রাণ গ্রুপসহ বৃহৎ শিল্পগ্রুপগুলো দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে পথে বসানোর ষড়যন্ত্র করছে। অসম প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। সরকারের আশু পদক্ষেপ কাম্য।
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে- সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কতিপয় ফযীলত মুবারক বর্ণনা
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও চরাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের ভাগ্যর উন্নয়ন হয়নি
২৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
অধিকাংশ টিকাই মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যুক্ত তথাকথিত করোনার টিকার ভয়াবহ ক্ষতি এখন সারা বিশ্বে বহুল আলোচিত
২৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
২৫০ বছর আগে আরব বণিকরা আবিষ্কার করেছিলেন নারিকেল দ্বীপ
২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)