ক্বাদিরিয়া সিলসিলার আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের জীবনী মুবারক
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬)
বিলাদত শরীফ: ২৪৭ হিজরী (৮৫১ খ্রিস্টাব্দ) বিছাল শরীফ: ৩৩৪ হিজরী (৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ) বয়স মুবারক: ৮৭ বছর
, ২৫ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৭ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ২৬ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ১১ চৈত্র, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) ইলমে তাছাউফ
বিভিন্ন ঘটনাবলী:
একবার হযরত শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এক ছাত্র উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে উস্তাদ! আমি উনাকে (মহান আল্লাহ পাক উনাকে) কোথায় খুঁজবো? তিনি তাকে বললেন, তোমার মা তোমার উপর সন্তুষ্ট না হউক! কেউ কি উনাকে খোঁজে যিনি এক আঙ্গুলের উপর সমস্ত আকাশমন্ডলী এবং অপর আঙ্গুলের উপর সমস্ত জগতসমূহ ধরে রাখেন, এদেরকে প্রকম্পিত করেন এবং বলেন, আমিই বাদশাহ, অন্যান্য রাজা বাদশাহরা কোথায়? নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সৃষ্টি থেকে আড়ালে নন, সৃষ্টিই দুনিয়ার মুহব্বতে পড়ে উনার নিকট থেকে আড়ালে পড়ে থাকে।
হযরত শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো-جعل رزقى تحت سيفى- (আমার রিযিক তরবারীর নীচে) এর অর্থ কি? তিনি উত্তর দিলেন, তরবারী হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক তিনি। নতুবা জুলফিকার (তরবারীর নাম) হচ্ছে একটি লৌহ খন্ড মাত্র।
হযরত শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এক সঙ্গী উনাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবূ বকর! আপনার সঙ্গীদের মধ্যে আপনার ছোহবতের দ্বারা কে বেশী সৌভাগ্যশালী হয়েছে? তিনি উত্তরে বললেন, তাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার মান-মর্যাদা রক্ষার ব্যাপারে যে শ্রেষ্ঠতম, মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরের ব্যাপারে যে সবচেয়ে বেশী তৎপর, মহান আল্লাহ পাক উনার হক্বের ব্যাপারে যে সবচেয়ে বেশী মজবুত, মহান আল্লাহ পাক উনার মর্জি অনুসারে চলার ব্যাপারে যে সবচেয়ে বেশী দ্রুতগামী, যে তার ক্ষতি সম্পর্কে সবচেয়ে বেশী অবগত, আর মহান আল্লাহ পাক উনার যে সব বান্দাদের মান-মর্যাদা তিনি সমুন্নত করেছেন, তাদেরকে যে সবচেয়ে বেশী সম্মান করে। (হিলইয়াতুল আওলিয়া)
হযরত শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, একবার আমি প্রতিজ্ঞা করলাম যে, হালাল দ্রব্য ভিন্ন অন্য কিছু খাবো না (অর্থাৎ এমন রিযিক খাবো যাতে ইয়াক্বীন হয় যে ইহা হালাল)। আমি জঙ্গলে পথ চলতে চলতে একটি আঞ্জির গাছের নিকট পৌঁছে গেলাম। আমি হাত বাড়িয়ে আঞ্জির ছিঁড়ে খেতে চাইলাম। হঠাৎ আঞ্জিরের নীচে থেকে একটি শব্দ বের হলো, হে শিবলী! আমাকে খেয়ো না, নিজের প্রতিজ্ঞার উপর দৃঢ় থাকো, আমার মালিক একজন ইয়াহুদী। (নাফাহাতুল উন্স)
লোকে উনাকে জিজ্ঞাসা করলো যে, কোন জিনিষ খুব আশ্চর্যজনক? তিনি বললেন, সেই অন্তর, যে তার নিজের খোদাকে চিনতে পেরেও গুনাহগার হয়। (নাফাহাতুল উন্স)
বিছাল শরীফ:
হযরত শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খাদিম, শায়খ বাক্বিরা দিনওয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিছাল শরীফের পূর্বে আমাকে বললেন, আমার উপর একটি দিরহামের দায় রয়েছে। এই দিরহামের মালিককে আমি এজন্য কয়েক হাজার দিরহাম ছদকা দিয়েছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার অন্তরের উপর ইহা অপেক্ষা অধিক অন্য কোন বস্তুর বোঝা অবশিষ্ট নেই। (নাফাহাতুল উন্স)
উপরোক্ত খাদেম শায়খ বাক্বিরা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, হযরত শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মৃত্যু-রোগের সময় জুমুয়ার দিন উনার স্বভাবে কিছুটা অসন্তুষ্টির ভাব সৃষ্টি হলো। তিনি আমার হাত ধরে জামে মসজিদের দিকে রওয়ানা হয়ে গেলেন। রাস্তায় এক লোকের সঙ্গে উনার সাক্ষাত হলো। তিনি বললেন, আগামীকাল এই লোককে আমার প্রয়োজন হবে। অতঃপর নামায পড়ে তিনি ফেরত আসলেন। কিছু সময় পরে পুণরায় রোগ বেড়ে গেলো। তিনি আমাকে বললেন, আমাকে ওযু করাও। আমি উনাকে ওযু করালাম, কিন্তু দাড়ি খিলাল করতে ভুলে গেলাম। উনার কথা ও কাজে আমি লিপ্ত ছিলাম। তিনি আমার হাত ধরে উনার দাড়ির দিকে নিয়ে গেলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করলেন।
কোন বুযূর্গ যখন এই ঘটনার কথা শুনলেন; তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার সেই বান্দা সম্পর্কে আর কি বলা যায়, যাঁর মৃত্যুর সময়েও শরীয়তের আদবসমূহের মধ্যে একটি আদবও ছুটে যায়নি। উনার খাদিম ইহাও বলেছেন, (আমি জানতাম) অমুক স্থানে একজন নেক লোক আছে যিনি মুর্দার গোসল দিয়ে থাকেন। আমি উনার নিকট গিয়ে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, শিবলী মারা গেছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি যখন বাইরে আসলেন, আমি দেখতে পেলাম, তিনি সেই ব্যক্তি যাঁর সম্পর্কে হযরত শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছিলেন যে, “এই লোককে আগামীকাল আমার প্রয়োজন হবে”। আমি আশ্চর্য হয়েছি দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি আশ্চর্য হয়েছো কেন? উত্তরে আমি এর কারণ বললাম এবং কসম দিয়ে উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কিভাবে জানতে পারলেন যে, শিবলী মারা গেছে? জবাবে তিনি বললেন, হে নাদান! আমার নিকট সেই স্থান থেকে খবর এসেছে, যে স্থান থেকে শিবলীর নিকট খবর এসেছিলো যে, “আগামীকাল এই ব্যক্তিকে আমার প্রয়োজন হবে”। (নাফাহাতুল উন্স, মিরাতুল আসরার)
হযরত পীর সাইয়্যিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিজ মাকতুবাতে উল্লেখ করেছেন যে, হযরত শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি গাউছ ও কুতুবের সব মাকাম অতিক্রম করে “মাহবূবিয়াতের মাকামে” উপনীত হয়েছিলেন। আর ইহা সেই মাকাম যা অপেক্ষা উচ্চতর আর কোন মাকাম নেই। (মিরাতুল আসরার)
হিজরী ৩৩৪ সনে ৮৬ বছরের বেশী বয়স মুবারকে তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। বাগদাদে উনাকে দাফন করা হয়। (সফিনাতুল আওলিয়া, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
তখন উনার বয়স মুবারক হয়েছিলো ৮৭ বছর। (মিরাতুল আসরার)
সূত্র: মিরাতুল আসরার, তাজকিরাতুল আওলিয়া, সফিনাতুল আওলিয়া, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, কাশফুল মাহযুব, নাফাহাতুল উন্স, হিলইয়াতুল আওলিয়া। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৯)
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৮)
২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১৪)
২৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুহলিকাত তথা বদ স্বভাবসমূহ
০৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র মুনজিয়াত উনার বিবরণ
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওলীআল্লাহ উনাদের ছোহবতে যাওয়া ব্যতীত কারো পক্ষে প্রকৃত মু’মিন-মুসলমান হওয়া সম্ভব নয়
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১২)
০৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫)
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪)
২৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (২)
২১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১)
২০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৬)
০৮ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)