ক্বাদিরিয়া সিলসিলার আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের জীবনী মুবারক
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪)
বিলাদত শরীফ: ২৪৭ হিজরী (৮৫১ খ্রিস্টাব্দ) বিছাল শরীফ: ৩৩৪ হিজরী (৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ) বয়স মুবারক: ৮৭ বছর
, ২৩ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৫ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ২৪ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ৯ চৈত্র, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) ইলমে তাছাউফ

বিভিন্ন ঘটনাবলী:
একদিন এক যুবক একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার জন্য হযরত আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মজলিসে পৌঁছেন, কিন্তু নিজে তা উচ্চারণ করতে অক্ষম হয়ে শুধু বললেন, হুযূর! আমাকে কিছু নছীহত করুন। তিনি বললেন, সেই সম্প্রদায়ের উচিত, তারা যেন প্রতিটি নিঃশ্বাসকে শেষ নিঃশ্বাস মনে করে এবং সেই শেষ নিঃশ্বাসে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” যিকির নয়, বরং “আল্লাহ” নামের যিকির করে। কারণ, হতে পারে তাদের নিঃশ্বাস “লা ইলাহা”-এর উপর শেষ হয়ে যেতে পারে, আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। (অর্থাৎ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বা নফী-ইছবাত যিকিরে প্রথম নফী বা অস্বীকৃতি আসে। ইছবাত বা স্বীকৃতি বাক্য উচ্চারণ করার পূর্বে মারা গেলে নফীর উপর মৃত্যু ভয়ের আশঙ্কা আছে)। সেজন্য “আল্লাহ” “আল্লাহ” যিকির করা উচিত, যাতে শেষ নিঃশ্বাসে মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া অন্য কিছু না আসে।
উনার নছীহত শুনে যুবক ব্যক্তিটি আরো আগ্রহের সাথে বললেন, আমি এর থেকেও উত্তম নছীহত চাই। তিনি বললেন, “লা” দ্বারা আল্লাহ পাক ছাড়া অন্য কিছু অস্বীকার করা হয়। আর আমি তো মহান আল্লাহ পাক ছাড়া অন্য কিছুই দেখি না। যুবক এই কথার আরো বিষদ ব্যাখ্যা চাইলেন। তখন তিনি বললেন, আমি এই ব্যাপারে খলীফাতু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার অনুসরণ করেছি।
হযরত আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলতে লাগলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে তিনবার উনাদের ক্ষমতা ও অবস্থা অনুসারে মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচের জন্য আহবান করেছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি তিন বারই উনার সমস্ত মাল মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় কুরবান করে দিয়েছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রতি বারই জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম! নিজের পরিবার পরিজনের জন্য কিছু রেখেছেন কি?
উত্তরে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি প্রথমবার আরজ করেছিলেন, পরিবার পরিজন তো দুই অবস্থার যে কোন এক অবস্থায় হয়ে থাকে, হয়তো নেককার হবে নতুবা বদকার হবে। যদি নেককার হয়, তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে ধ্বংস করবেন না, আর যদি বদকার হয়, তবে তাদের আমার কি প্রয়োজন?
দ্বিতীয়বার জওয়াবে তিনি আরজ করেছিলেন, তাদের জন্য সূরা ওয়াকেয়া তিলাওয়াত করার আমল রেখে এসেছি যেন তারা মাগরিবের পরে এই আমল করে।
তৃতীয়বার জওয়াবে তিনি আরজ করেছিলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যদি কোন দিন আমার উপর অগ্রবর্তী হন, তবে আজ হবেন, কারণ তিনি ধনী ব্যক্তি আর আমি মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচকারী। তিনি উনার সমস্ত সম্পদের অর্ধেক পেশ করেছেন, আর আমি আমার সাধ্য-সামর্থ্য অনুযায়ী যা আছে যৎ-সামান্য সব উপস্থাপন করেছি।
বর্ণিত আছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেদিন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে মানুষের চেহারায় এইরূপ দেখেছিলেন যে, তিনি খেজুর গাছের ছাল দিয়ে শরীর ঢেকে উনার দরবার শরীফে হাজির হয়েছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আজ আসমানের সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার অনুসরণে খেজুর গাছের ছাল পরিধান করেছেন। একটু পরেই লোকেরা দেখলো, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি খেজুর গাছের ছাল পরিধান করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফে আসছেন। কারণ তখন উনার নিকট তদপেক্ষা বেশী সামর্থ্য ছিলো না। অতঃপর যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার পরিবার পরিজনের জন্য কি রেখে এসেছেন? তিনি জওয়াবে বলেছিলেন, তাদের জন্য শুধুমাত্র “মহান আল্লাহ পাক” উনাকে রেখে এসেছি।
হযরত আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ঘটনাগুলো বর্ণনা করার পর উক্ত যুবক এই সব কথার আরো ব্যাখ্যা চাইলেন। পূণরায় হযরত শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, হে যুবক! আমি তো সর্বোত্তম উদাহরণ পেশ করেছি, তবুও তুমি সন্তুষ্ট হওনি। আচ্ছা, তাহলে মনোযোগ সহকারে শুনো, এর চেয়েও উত্তম উদাহরণ পেশ করছি। যিকিরের এই ত্বরীকা মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমের অন্তর্গত, কেননা তিনি মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কালাম পাকে ইরশাদ মুবারক করেছেন-
قُلِ اللهُ ثُمَّ ذَرْهُمْ فِىْ خَوْضِهِمْ يَلْعَبُوْنَ
(হে আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, “মহান আল্লাহ পাক” তিনিই যথেষ্ট, অতঃপর তাদেরকে খেল-তামাশায় মগ্ন থাকতে দিন এবং তাদের সাথে আপনি সম্পর্ক রাখবেন না। ) অতঃপর যুবক আরজ করলেন, মহান আল্লাহ পাক আপনাকে উত্তম পুরষ্কারে পুরষ্কৃত করুন। আমার জন্য এই উদাহরণ মনের প্রশান্তির কারণ। অতঃপর যুবক হঠাৎ এক চিৎকার দিয়ে ইন্তেকাল করলেন।
এই ঘটনার পর উক্ত যুবকের ওয়ারিশগণ হযরত শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিরূদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করে। হযরত শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, সেই যুবকের আত্মা হক্ব তায়ালা উনার ইশক্বে নিমজ্জিত হয়ে প্রস্তুত রয়েছিলো, আমার তরফ থেকে ডাক দেওয়ার সাথে সাথে সে “লাব্বাইক” (আমি হাজির আছি) বলে উঠলো এবং মহান আল্লাহ পাক উনার উনার সমীপে পৌঁছে গেলো, এতে আমার কি দোষ হয়েছে? অতঃপর ওয়ারিশগণ তাদের মামলা উঠিয়ে নিলো এবং হযরত শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নির্দোষ মনে করে ক্ষমা করে দিলো। (সফিনাতুল আওলিয়া) (অসমাপ্ত)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৯)
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৮)
২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১৪)
২৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুহলিকাত তথা বদ স্বভাবসমূহ
০৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র মুনজিয়াত উনার বিবরণ
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওলীআল্লাহ উনাদের ছোহবতে যাওয়া ব্যতীত কারো পক্ষে প্রকৃত মু’মিন-মুসলমান হওয়া সম্ভব নয়
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১২)
০৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬)
২৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫)
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (২)
২১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১)
২০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৬)
০৮ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)