হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ঈদ উদযাপন করেছেন
, ১৩ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০২ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ০১ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ১৭ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
যেমন এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার নিজগৃহে ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সমবেত করে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক উনার ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা অর্থাৎ তাছবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর (পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ অর্থাৎ) পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে উপস্থিত হয়ে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন, আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত মুবারক ওয়াজিব।” সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى رضى الله تعالى عنه وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لابنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك
অর্থ: “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশী উনাদেরকে নিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক উনার ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলেছেন, এই সেই দিবস এই সেই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন। এই দিবসে ইহা সংঘটিত হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি)। এমন সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উপস্থিত হয়ে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সমস্ত রহমত উনার দরজা আপনাদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যে কেউ আপনাদের মতো এরূপ কাজ করবে, আপনাদের মতো তারাও নাজাত (ফযীলত) লাভ করবে।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফদ্বয় থেকে প্রথমত যে বিষয়টি প্রমাণিত হলো তা হচ্ছে- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে পবিত্র মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল করেছেন। আর আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা শুধু সমর্থনই করেননি বরং তিনি পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মজলিস করার জন্যে উম্মতদেরকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মজলিস করা সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম।
এ প্রসঙ্গে আল্লামা হযরত শিহাবুদ্দীন ইবনে হাজার হাইছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ কিতাব “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
قال حضرت ابو بكر الصديق عليه السلام من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم كان رفيقى فى الجنة
অর্থ: “আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ অর্থাৎ পবিত্র মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম ব্যয় করবেন তিনি সম্মানিত জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবেন।” সুবহানাল্লাহ!
وقال حضرت عمر عليه السلام من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم فقد احيا الاسلام
অর্থ: “হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল উনাকে অর্থাৎ পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক দিবস উনাকে বিশেষ মর্যাদা দিলেন তিনি মূলত সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকেই পুনরুজ্জীবিত করলেন।” সুবহানাল্লাহ!
وقال عثمان عليه السلام من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم فكانما شهد غزوة بدر وحنين
অর্থ: “হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম খরচ করলেন তিনি যেনো সম্মানিত বদর ও সম্মানিত হুনাইন জিহাদ উনাদের মধ্যে শরীক থাকলেন।” সুবহানাল্লাহ!
وقال حضرت على كرم الله وجهه عليه السلام من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم وكان سببا لقرائته لايخرج من الدنيا الا بالايمان ويدخل الجنة بغير حساب
অর্থ: “হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলেন তিনি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবেন এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত আতা ইবনে ইয়াছার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “একদা আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সমীপে গেলাম এবং আরজু করলাম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে সম্মানিত না’ত শরীফ পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মধ্যে আছে তা আমাকে আবৃত্তি করে শুনান। তখন তিনি আমাকে তা আবৃত্তি করে শুনালেন।” (বুখারী শরীফ, দারেমী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অর্থাৎ পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত পবিত্র মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে পাঠ করে শুনালেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বর্তমান এই পরিস্থিতিতে সমগ্র দেশবাসীর জন্য যা আবশ্যিকভাবে করণীয়
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৪)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬১)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৫)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (২৭)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে হবে
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তাওয়াক্কুল তথা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ভরসা করার ফযীলত
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)