হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বেমেছাল ত্যাগ স্বীকারের বাস্তব নমুনা হযরত উমাইর ইবনে সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু...
, ০৪ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১১ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৪ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের পাশের নগরী হিমস। এই নগরে যাকেই গভর্নর করা হোক না কেন, নাগরিকদের অভিযোগের অন্ত থাকে না! কিছুদিনের মধ্যেই খলিফার কাছে তারা আবেদন জানায়, এই লোকের চেয়ে ভালো একজন গভর্নর নিয়োগ দিন!
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হন্যে হয়ে একজন যোগ্য গভর্নর খুজঁতে শুরু করলেন। কে আছে এমন ব্যক্তি যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতেই পারে না?
হযরত উমাইর ইবনে সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিয়োগ পেলেন হিমস নগরীর গভর্নর পদে। তখন তিনি শাম দেশে নিয়োজিত ছিলেন জিহাদের সেনাপতি হিসেবে। তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্নেহধন্য একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আদেশ পেয়েই ছুটলেন নতুন কর্মস্থলে...
এক বছর হয়ে গেলো এর মধ্যে হিমস থেকে কোন অভিযোগ এলো না! গভর্নর কোন চিঠিও লিখলেন না খলিফাকে, আবার কোন রাজস্বও এলো না!
আশ্চর্যান্বিত খলিফা জরুরী পত্র দিয়ে ডেকে পাঠালেন গভর্নর হযরত উমাইর ইবনে সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে।
পত্র পাওয়া মাত্র তৈরী হয়ে গেলেন! নিত্য ব্যবহারের ব্যাগে ওযুর পাত্র আর খাবারের প্লেট ঢুকিয়ে হাঁটা শুরু করেন পবিত্র মদিনা শরীফের দিকে।
ইতিমধ্যে চুল দাড়ি বড় হয়ে গেলো মদিনা শরীফে পৌঁছতে পৌঁছতে! অবিরাম পথ চলায় ক্লান্ত শ্রান্ত এই গভর্নরকে দেখে খলিফা উনাকে বসতে দিয়ে জানতে চাইলেন,
খলিফা: এই অবস্থা কেন আপনার?
আগন্তুক ছাহাবী: কই আমার তো কিছুই হয়নি। আমি বেশ আছি। বরং সাথে নিয়ে এসেছি আমার গোটা দুনিয়া।
খলিফা: কি আছে আপনার দুনিয়ায়?
আগন্তুক ছাহাবী: আমার ব্যাগে আছে পানি পান ও ওযু করার জন্য পাত্র, গোসলের বালতি, খাবার প্লেট আর পানির মশক। এটাই আমার দুনিয়া। এ দ্রব্য ছাড়া আর কিছুর প্রয়োজন আছে বলে আমি অন্তত মনে করি না।
খলিফা: আপনি কি হেঁটে এসেছেন?
আগন্তুক ছাহাবী: জ্বী, আমিরুল মু’মিনীন!
খলিফা: প্রশাসনের পক্ষ থেকে কি আপনাকে ঘোড়া দেয়া হয়নি?
আগন্তুক ছাহাবী: বর্তমান প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি আর আমিও চাইনি।
খলিফা: বাইতুল মালের রাজস্ব পাঠাননি কেন?
আগন্তুক ছাহাবী: যারা বিভিন্ন এলাকা থেকে কর নিয়ে আসতো, তাদের সাথে কথা বলে সেই অঞ্চলের অভাব অভিযোগ এবং অতি দরিদ্রদের তালিকা করে সেখানেই তাদের সাহায্য ও অঞ্চলসমূহের উন্নয়নের জন্য খরচ করেছি। রাজধানীতে পাঠানোর মতো অবশিষ্ট থাকলে আমি নিশ্চয়ই পাঠিয়ে দিতাম।
স্থানীয় পর্যায়ে রাজস্বের যথাযথ ব্যবহারের নতুন পদ্ধতি জেনে খলিফা ভীষণ খুশি হলেন এবং উনাকে পুনরায় স্বপদে যোগ দিতে বললেন। কিন্তু হযরত উমাইর ইবনে সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বিনয়ের সাথে গভর্নর পদ ফিরিয়ে দিয়ে মদিনা শরীফের উপকন্ঠে নিজের পরিবারের সাথে বসবাস করতে চাইলেন। খলিফা সেই আবেদন মঞ্জুর করলেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি কিছুদিন পর হযরত উমাইর ইবনে সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রকৃত অবস্থা যাচাই করার জন্য রাষ্ট্রের বিশ্বস্ত একজন গোয়েন্দা হারেস কে পাঠালেন। ১০০ দিনারের একটি থলে দিয়ে বললেন, যদি তার আর্থিক অবস্থা সত্যিই শোচনীয় হয় তবে নিজের পরিচয় জানিয়ে আমার সালাম দিয়ে এই থলেটি তাকে উপহার দিয়ে এসো।
খলিফার গোয়েন্দা স্থানীয় লোকজনের সাহায্যে একদিন পৌঁছে গেলেন হযরত উমাইর ইবনে সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর দরজায়। পরিচয় গোপন করে মুসাফির হয়ে তার আতিথ্য প্রার্থনা করলেন। হযরত উমাইর ইবনে সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছদ্মবেশী গোয়েন্দাকে সাদরে বরণ করে নিলেন আর তিন দিন রাতে খেতে দিলেন শুধু একটি করে পাতলা যবের রুটি!
চতুর্থ দিন একজন প্রতিবেশী সেই গোয়েন্দা হারেস কে নিজের বাড়িতে আতিথেয়তা গ্রহণের অনুরোধ জানালেন। হারেস কৌতুহলের বশে জানতে চাইলে বললেন, আপনার উপস্থিতিতে উমাইর ইবনে সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ভীষণ বিপদে পড়ে গেছেন। আপনাকে আপ্যায়ন করতে গিয়ে উনি উনার আহলিয়া-সন্তানরা গত তিনদিন শুধু পানি খেয়ে আছেন, তা না হলে তারা প্রতি রাতে একটি পাতলা যবের রুটি ভাগ করে খেতেন...
গোয়েন্দা হারেস অবশেষে নিজের পরিচয় জানিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পক্ষ থেকে সালামসহ সেই থলে উনার হাতে তুলে দিলেন। উমাইর ইবনে সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বিনয়ের সাথে সেই উপহার ফিরিয়ে দিতে চাইলে সব শুনে ভেতর থেকে উনার আহলিয়া বললেন, উপহার ফিরিয়ে দিবেন না। বরং এই অঞ্চলে যারা দরিদ্র তাদের মধ্যে ভাগ করে দিন। আহাল-আহলিয়া দুই চোখ এক করলেন না সেই অর্থ বিতরণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
গোয়েন্দা হারেস খলিফার কাছে তুলে ধরলেন উনার অভিজ্ঞতা। খলিফা আবার ডেকে পাঠালেন উমাইর ইবনে সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে। তিনিও কালবিলম্ব না করে ছুটলেন খলিফার দরবারে...
খলিফা উনাকে কাছে বসিয়ে জানতে চাইলেন,
আমার পাঠানো দিনারগুলো দিয়ে কি করেছেন?
আগন্তুক ছাহাবী: মুদ্রাগুলো যখন আমাকে দিয়েই দিয়েছেন, তখন আর জেনে কি হবে?
খলিফা: আমি অনুরোধ করছি, বলুন কি করেছেন?
আগন্তুক ছাহাবী: নিজের জন্য সঞ্চয় করে রেখেছি, যেদিন সন্তান ও সম্পদ কোন কাজে আসবে না...
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আমি ঘোষণা দিচ্ছি যে আপনি সেই সকল মহান ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত, যারা নিজেদের প্রয়োজনীয় বিষয় হওয়া সত্ত্বেও অন্যদেরকে নিজেদের উপর প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
তিনি উমাইর ইবনে সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ৬০ সা (এক সা হলো তিন কেজি তিনশত গ্রাম) খাবার আর এক জোড়া পোশাক হাদিয়া দিলেন।
উমাইর ইবনে সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খাবার ফিরিয়ে দিলেন প্রয়োজন নেই জানিয়ে! তবে একটি পোশাক গ্রহণ করলেন এই বলে, আমার আহলিয়ার জন্য নিচ্ছি, কারণ তার পোশাক ছিঁড়ে বিবস্ত্র প্রায়...
আশ্চর্য হয়ে ভাবছি, এ কোন ভোগ বিলাসের জীবন আমার? একজন সম্মানিত ছাহাবী উমাইর ইবনে সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জীবনী আমাকে লজ্জিত করে তুলেছে। .....
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)