স্থাপত্য ইতিহাসে অনন্য এক নিদর্শন মুবারক।
হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফ।
, ২৫ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৬ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ১৫ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ০১ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) স্থাপত্য নিদর্শন
৬ষ্ঠ পর্বের পর....
আলোচ্য মাজার শরীফ স্থাপত্যর খিলান ও সদল (ষরহঃবষ) নির্মাণে 'ফিরুজিয়ান ধরণ' (ঋরৎুঁরধহ ঃুঢ়ব) লক্ষ্য করে দানী তুগলক স্থাপত্যের সাথে যোগসূত্র টানতে সচেষ্ট হন।
হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফের জানালা খোদাই ইটের নকশা সংবলিত জালিযুক্ত এবং দরজার লিনটেলে ভিতর দিকে পাথরের খোদাই করা পদ্মফুলের অলঙ্করণ সংবলিত। বক্রাকার ত্রয়ী কার্নিশে এবং গোলাকার পার্শ্ব বুরুজে লজেন্সের ন্যায় ছোট ছোট নকশা এবং খাঁজ খাঁজ ত্রিকোণাকার নিপুণ নকশা এখনও দৃশ্যমান। তাছাড়া পার্শ্ববুরুজের শিরভাগ আকর্ষণীয় শিরাল ছোট গম্বুজে সুশোভিত এবং অভ্যন্তরীণ প্রাঙ্গণের বেষ্টনী প্রাচীরে দক্ষিণ দিকে রয়েছে চিত্তাকর্ষক চৌচালা ভল্টযুক্ত একটি তোরণদ্বার। তোরণদ্বারের ভিতরের ছাদ বাঁশের ফালি দিয়ে আড়াআড়ি ছকের সদৃশ্য নকশায় নির্মিত হয়েছে; এবং অলংকৃত ইটের দ্বারা নির্মিত হয়েছে বেষ্টনী প্রাচীরের জালিযুক্ত প্রবেশ পথ। গোলাকার পার্শ্ববুরুজ, গাত্রালংকারে অপর্যাপ্ততা, টেরাকোটার অনুপস্থিতি এবং দেয়ালে পলেস্তারার প্রলেপ দেখে নিশ্চিতরূপে প্রমাণ করা যাবে না যে, অতিতে এ সব স্থান অলঙ্করণ বিবর্জিতই ছিল।
টেরাকোটাবিহীন পলেস্তারাযুক্ত প্রাচীর গাত্র এবং নির্মাণে খিলান ও সদল একত্রে ব্যবহারে তুগলক স্থাপত্য প্রভাব পরিলক্ষিত হয় বটে কিন্তু স্বাধীন সুলতানি আমলে বাংলা দিল্লির অধীনে ছিল না এবং সরাসরি দিল্লির সাথে কোনো সম্পর্কও ছিল না। তুগলক স্থাপত্যের যে প্রভাব এ মাজার শরীফে দেখা যায় সম্ভবত তা তৈমুরের দিল্লি ধ্বংসের সময় (১৩৯৯ খৃ:) বাংলায় চলে আসা সেখানকার বাস্তুত্যাগী শিল্পী ও ওস্তাগারদের দ্বারা বাহিত হয়ে আসে। এ ছাড়া ফিরুজ শাহ তুগলকের বাংলায় অভিযানে তার সাথে এসে শিল্পী ও ওস্তাগার যারা এদেশে স্থায়ীভাবে থেকে যায় তাদের মাধ্যমেও দিল্লির তুগলক স্থাপত্যের প্রভাব বাংলায় প্রবেশ করে এ অঞ্চলে হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্থাপত্যে প্রতিফলিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন কি বাংলার সুলতানের প্রতিনিধি হিসেবে হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দিল্লি গমনের সম্ভাব্যতার উল্লেখও দেখা যায় ।
হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফের কার্নিশে এ বৈশিষ্ট্যটি নিপুণভাবে ইমারতের উপযোগী করে সন্নিবেশিত হয়েছে এবং পার্শ্ববুরুজের ব্যতিক্রমী বৃত্তাকার মোল্ডিং নকশা সংবলিত বৈশিষ্ট্যটি নিঃসন্দেহে উল্লেখ্য। চালাঘরের কোণস্থ বাঁশের খুঁটি থেকে গৃহীত পার্শ্ববুরুজের বিশিষ্ট আংগিক বৈশিষ্ট্য উপরের গম্বুজে শিরাল নকশাযুক্ত হয়ে এ মাজার শরীফ স্থাপত্যটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তাছাড়া এ অঞ্চলে পরিণত সুলতানি স্থাপত্যের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য যেমন দ্বিকেন্দ্রিক কৌণিক খিলান, গোলাকৃতি গম্বুজ, ইটের নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাথরের ব্যবহার, অনতিউচ্চ প্রবেশ পথ, নকশাকৃত খোদাই ইটের ব্যবহার, খিলান ভিত্তিক নির্মাণ, অ্যারাবেস্ক ও ক্যালিগ্রাফির প্রয়োগ, বেষ্টনী প্রাচীরে অলংকৃত ইটের জালি এবং প্রবেশ পথের উপরে ভল্টকৃত চৌচালা ছাদ ইত্যাদি এ মাজার ইমারতে লক্ষ্য করা যায়। মূল মাজার শরীফকে কেন্দ্র করে মাজার শরীফ সংলগ্ন মসজিদ, বিশ্রাম কক্ষ, আদি প্রবেশদ্বার, পরপর দুটি বেষ্টনী প্রাচীর ও সন্নিকটে খাঞ্জালী দীঘি সব মিলে সামগ্রিকভাবে (মাজার কমপ্লেক্স) মাজার স্থাপত্যের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পরিগ্রহ করেছে। এ মাজার শরীফ কমপ্লেক্সটিতে বিরাজিত-দ্বীনি আবহ এবং প্রতিদিন অগণিত ভক্তের আগমন হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আধ্যাত্মিক মাহাত্মের পরিচয় বহন করছে। একদিকে হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ঐশ্বর্য ও পৃষ্ঠপোষকতা অন্যদিকে স্থপতি ও শিল্পীর সৃজনশীলতা মাজার শরীফ স্থাপত্যিক বিশিষ্টতা দান করেছে। আনুপূর্বিক পর্যালোচনা থেকে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, বাংলায় বিকশিত মুসলিম মাজার স্থাপত্যের পরিণত রূপ হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আজও বিদ্যমান মাজার শরীফ স্থাপত্য বিধৃত হয়ে আছে যা এর পূর্বের এবং পরের অন্য কোনো মাজার শরীফে পরিলক্ষিত হয় না।
সমাপ্ত
সূত্র:
ইন্টারনেট অবলম্বানে সংকলিত।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০১)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৪০০ বছরের আলোচিত প্রাচীন স্থাপত্য তেবাড়িয়া জামে মসজিদ
১২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (২)
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
জাপানের টোকিও জামে মসজিদ
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কুষ্টিয়ার ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মেথি ভেজানো পানি পানের নানা উপকারিতা জেনে নিন
২৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শেরপুরে তুরকান হযরত শাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ
২২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইউরোপের যত মুসলিম স্থাপত্য
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
লালমনিরহাটের ১৪শ বছর আগের ঐতিহাসিক ‘হারানো মসজিদ’ (১)
১৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মুসলিম স্থাপত্য শৈলীর অন্যতম আল্লাহর মসজিদ
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খেজুরের পাতায় লিখা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)