জীবনী মুবারক
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
বিলাদত শরীফ: ৫৯১ খৃ: বিছাল শরীফ: ৩৩ হিজরী (৬৫৩ খৃ:) বয়স মুবারক: ৬৩ বছর
, ৬ই শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৯ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ২৩ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
কা’বা শরীফে উচ্চস্বরে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত:
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন মুসলমান সংখ্যা ছিলো অল্প। মক্কা শরীফে তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত অন্য কেউ উচ্চস্বরে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করেননি। মু’মিনগণ পরস্পর আলোচনা করে স্থির করেন যে, অবিলম্বে কুরাইশ গোত্রের লোকদেরকে উচ্চস্বরে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত শুনাতে হবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে অগ্রসর হলেন। সঙ্গীরা বললেন, এই কাজের জন্য এমন লোক প্রয়োজন যার গোত্রের প্রতিশোধের ভয়ে পাঠকের প্রতি অত্যাচার করতে তারা সাহস করবে না। কিন্তু তিনি উত্তেজিত হয়ে বললেন, আমাকে বাধা দিও না। মহান আল্লাহ পাক তিনিই আমার রক্ষক।
পরদিন পূর্বাহ্নে কুরাইশ মুশরিকরা যখন তাদের সভাগৃহে আসীন হলো, তখন তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নাম নিয়ে উচ্চস্বরে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র সূরা আর রহমান শরীফ তিলাওয়াত করতে শুরু করেন। মুশরিকরা বিস্মিত হয়ে শুনতে থাকে এবং জিজ্ঞাসা করে; লোকটি কি বলছে? কেউ উত্তর দিলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর যে কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে তাই পাঠ করছে। শোনামাত্র মুশরিকরা ক্রোধান্ধ হয়ে উনাকে ভীষণ প্রহার শুরু করে। এতে উনার মুখমন্ডল ফুলে যায়। কিন্তু তিনি সমস্ত অত্যাচার সহ্য করে স্বীয় কর্তব্য সম্পন্ন করেন।
হিজরত মুবারক:
ক্রমেই পবিত্র মক্কা শরীফের কুরাইশরা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঘোর শত্রুতে পরিণত হলো। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি দুইবার আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। পরে স্থায়ীভাবে পবিত্র মদীনা শরীফে হিজরত করে আসেন।
জিহাদে অংশগ্রহণ:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে তিনি গুরুত্বপূর্ণ জিহাদসমূহে অংশগ্রহণ করেন। বদরের জিহাদে দুই জন আনছারী যুবক আবু জেহেলকে গুরুতর আহত করে মূমুর্ষ অবস্থায় ময়দানে ফেলে আসেন। জিহাদ শেষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, কেউ গিয়ে আবু জেহেলের অবস্থা দেখে আসুন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দৌড়ে চলে গেলেন। আবু জেহেলের তখনও প্রাণ আছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার দাড়ি মুট করে ধরে বললেন; “বল তুই আবু জেহেল না?”। সে স্বীকার করে নেয়ার পর তিনি আবু জেহেলের দেহ থেকে মাথাটা আলাদা করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গিয়ে হাজির হলেন।
এছাড়া উহুদ, খন্দক, হুদায়বিয়া, খায়বারসহ মক্কা শরীফ বিজয়েও তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথী ছিলেন। পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের পরে হুনাইনের জিহাদের কঠিন সময়ে যে ৮০ জন নিবেদিত প্রাণ আছহাব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চতুর্দিকে অভেদ্য ব্যুহ রচনা করে বীর দর্পে দন্ডায়মান থাকেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন এই ৮০ জন বীর মুজাহিদ উনাদের অন্যতম। জিহাদে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুশরিক বাহিনীকে লক্ষ্য করে যে এক মুষ্ঠি ধুলা নিক্ষেপ করেছিলেন, তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় নূরুল মাগফিরাত মুবারক বা হাত মুবারকে তুলে দিয়েছিলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। সুবহানাল্লাহ!
তিনি নিজেই বলেন, শত্রুদের অতর্কিত আক্রমনের কারণে আমরা প্রায় ৮০ কদম পিছনে সরে অবস্থান গ্রহণ করি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার বাহনটিকে অগ্রগামী করছিলেন, এমন সময় তিনি (মাটি নেয়ার জন্য) একবার উনার পবিত্র নূরুল হুদা বা মস্তক মুবারক নীচু করায় আমি উচ্চস্বরে আরজী পেশ করলাম, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে উচ্চতম মর্যাদা দান করেছেন, আপনি আপনার পবিত্র নূরুল হুদা বা শির মুবারক উচ্চ রাখুন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আমাকে এক মুষ্ঠি মাটি দিন। আমি উহা দিলাম এবং তিনি উহা শত্রুদের প্রতি নিক্ষেপ করলেন। ফলে শত্রুদের দৃষ্টি ধুলায় ধূসরিত ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়লো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ মুবারকে আমি মুহাজির ও আনছারদেরকে উচ্চস্বরে ডাকতে লাগলাম। উনারা অবিলম্বে এসে একত্রিত হলেন। ফলে মুসলিম পক্ষের বিজয় হলো এবং শত্রুরা পরাজয় শিকার করে পলায়ন করলো। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












