জীবনী মুবারক
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৯)
বিলাদত শরীফ: ৬০৮ খৃ: বিছাল শরীফ: ৭৪ হিজরী (৬৯৪ খৃ:) বয়স মুবারক: ৮৭ বছর।
, ১২ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৭ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ফযীলত ও মর্যাদা:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মনযিলসমূহে উনার স্মৃতিচিহ্নসমূহ অনুসরণের ব্যাপারে হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অপেক্ষা অধিকতর অনুসরণকারী আর কেউ ছিল না। (হিলইয়া, হায়াতুছ ছাহাবা)
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গভীরভাবে মুহব্বত করতেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পরে হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অন্তরটি ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পরে তিনি কোন বাড়ী বা উদ্যান তৈরী করেননি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা স্মরণ হলেই তিনি ডুকরে কেঁদে উঠতেন। সফর থেকে যখনই মদীনা শরীফে ফিরতেন “রওজা পাকে” গিয়ে সালাম মুবারক পেশ করতেন। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকেও গভীরভাবে মুহব্বত করতেন।
একবার এক ইরাকী বেদুঈন উনার কাছে (হারাম শরীফে) মশা হত্যার কাফ্ফারা জিজ্ঞাসা করে। তিনি সাথীদের বললেন, এই লোকটিকে দেখে নাও। সে মশা হত্যার কাফ্ফারা জিজ্ঞাসা করছে, অথচ তারাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত দৌহিত্র সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ (ইমাম হুসাইন) আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করেছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মুহব্বতের কারণে পবিত্র মদীনা শরীফের শহরকেও তিনি খুবই মুহব্বত করতেন। শত দুঃখ-কষ্টেও তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা কখনও করেননি।
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মুসলিম উম্মাহ্র মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হতে পারে এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকতেন। সেই যুগে তিনি দ্বীনদার-পরহেজগার সব আমীরের পিছনে নামায আদায় করতেন এবং তাদের হাতে যাকাত তুলে দিতেন। তবে এ আমল দ্বীনের সীমার মধ্যে সীমিত থাকত। এ কারণে প্রথমে হাজ্জাজের পেছনে নামায আদায় করলেও পরে হাজ্জাজ নামাযে বিলম্ব শুরু করলে তিনি তার পেছনে নামায আদায় ছেড়ে দেন। এমনকি পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ মুবারক রাখেন।
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সত্য কথা বলতে কখনও ভয় পেতেন না। উমাইয়া বংশীয় শাসকদের সামনা-সামনি সমালোচনা করতেন। একবার হাজ্জাজ খুত্বা দিচ্ছিলো। হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে লক্ষ্য করে বললেন, এই লোকটি মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমন। সে মক্কা শরীফের হারাম উনার অবমাননা করেছে, বাইতুল্লাহ শরীফ ধ্বংস করেছে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয় বান্দাদের শহীদ করেছে। উনার স্পষ্টবাদিতার কারণে বণী উমাইয়ার স্বৈরাচারী শাসকরা উনাকে ভীষণ ভয় করত।
বিনয় ও নম্রতা উনার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ছিল। নিজের প্রশংসা শুনতে তিনি ভীষণ অপছন্দ করতেন। এক ব্যক্তি উনার প্রশংসা করছিল। তিনি তার মুখে মাটি ছুঁড়ে মারলেন। অতঃপর তাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই হাদীছ শরীফ- ‘প্রশংসাকারীর মুখে মাটি ছুঁড়ে মারো’ শুনিয়ে দিলেন। কোন যাচাই-বাছাই না করে ছোট বড় সকলকে সালাম দিতেন। পথ চলতে কোন ব্যক্তিকে সালাম দিতে ভুলে গেলে ফিরে এসে তাকে সালাম দিয়ে যেতেন। অত্যন্ত কটু কথা শুনেও হজম করে নিতেন, কোন জবাব দিতেন না। এক ব্যক্তি কটু ভাষায় উনাকে গালি দিলো। জবাবে তিনি শুধু বললেন, আমি ও আমার ভাই অত্যন্ত উঁচু বংশের। এতটুকু বলে চুপ থাকলেন। (ইছাবা)
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জীবনীতে আমরা দেখতে পাই, উনার আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত স্বচ্ছল ছিল। হাজার হাজার দিরহাম এক বৈঠকেই ফকীর-মিসকীনদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। কিন্তু উনার নিজের ঘরে আসবাবপত্রের মোট মূল্য একশত দিরহামের বেশী ছিল না।
মায়মুন ইবনে মেহরান বলেন, আমি হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঘরে প্রবেশ করে লেপ, তোষক, বিছানাপত্র ইত্যাদির দাম হিসাব করলাম। সব মিলিয়ে এক শত দিরহামের বেশী হলো না। তিনি এমনি সরল ও অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। নিজের কাজ তিনি নিজের হাতে করতেন। নিজের কাজে অন্য কারো সাহায্য গ্রহণ উনার মনঃপূত ছিল না।
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার যুগে যখন সকল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ভাতা নির্ধারিত হয়, তখন হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ভাতা নির্ধারিত হয় আড়াই হাজার দিরহাম। পক্ষান্তরে হযরত উসামা বিন যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ভাতা নির্ধারিত হয় তিন হাজার দিরহাম। হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট এ বিষয়ে সুওয়াল করে বলেন, কোন ক্ষেত্রেই যখন আমি উনার থেকে এবং আপনি উনার পিতা থেকে পেছনে নেই, তখন এই পার্থক্যের কারণ কি? জবাবে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি সত্যই বলেছেন। তবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পিতাকে আপনার পিতা থেকে এবং উনাকে আপনার থেকে বেশী মুহব্বত করতেন। জবাব শুনে হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু চুপ হয়ে যান।
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী লক্ষ্য করে জনৈক তাবেয়ী মন্তব্য করেন; আমি যদি কোন ব্যক্তির জন্য সাক্ষ্য দিতাম যে, তিনি জান্নাতের অধিবাসী, তাহলে অবশ্যই হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য দিতাম।
সূত্র: উসুদুল গাবা, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, হায়াতুছ ছাহাবা, ইছাবা, হিলইয়াতুল আওলিয়া, তবাকাত, মুসনাদে আহমদ, বিভিন্ন সীরাত গ্রন্থ। (সমাপ্ত)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৮)
০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দ্বীন ইসলামের বিশেষ রাত সমূহের মধ্যে একটি বিশেষ ফযীলতপূর্ণ রাত ‘পবিত্র শবে বরাত’ (১)
০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মুসলমানদের উপর কাফিরদের নির্যাতনের কারণ উদঘাটন
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফের সঠিক ও বিশুদ্ধ অর্থ প্রকাশ করে থাকে রাজারবাগ শরীফ, বিপরীতে অর্থ পরিবর্তন ও বিকৃতি করে ধর্মব্যবসায়ী-উলামায়ে ছূ’রা (১)
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ভোট, নির্বাচন, পদপ্রার্থী হওয়া ইত্যাদি কোনটিই জায়িয নেই
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
গণতন্ত্রে পাচ বৎসরের জন্য ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। ইসলামী শব্দ ব্যবহারকারীরা সত্যিকারে ইসলামী আইন জারী করলে পাঁচ বৎসর পর ক্ষমতায় আসা অসম্ভব। সুতরাং গণতন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে কুরআন শরীফের আইন বা ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলা একটা চরম মিথ্যা, ধোঁকা ও প্রতারণা (পর্ব ১)
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র শবে বরাত সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফগুলো পরিপূর্ণ ছহীহ- এ বিষয়ে সকল আসমাউর রেজাল বিশারদ উনারা একমত
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)