জীবনী মুবারক
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৫)
বিলাদত শরীফ: ৬০৮ খৃ: বিছাল শরীফ: ৭৪ হিজরী (৬৯৪ খৃ:) বয়স মুবারক: ৮৭ বছর।
, ০৮ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৩ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ফযীলত ও মর্যাদা:
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার একান্ত খাদেম হযরত নাফে’ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাবেয়ী ছাত্রদের বলতেন, এ যুগে যদি হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বেঁচে থাকতেন, তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক অনুসরণের ক্ষেত্রে উনার কঠোরতা দেখে তোমরা বলতে, লোকটি পাগল। তিনি ৮৪ বছর, অন্য বর্ণনায় ৮৭ বছর জীবিত ছিলেন এবং শৈশবকালেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল মাগফিরাত মুবারক অর্থাৎ হাত মুবারকে বাইয়াত হয়েছিলেন। জীবনের শেষ প্রান্তে তিনি বলেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল মাগফিরাত মুবারকে বাইয়াতের পর থেকে আমার আজকের এই দিনটি পর্যন্ত তা ভঙ্গ করিনি বা তাতে কোন পরিবর্তন করিনি। শুধু ইবাদত-বন্দেগী, আমলের ক্ষেত্রেই নয়, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমস্ত সুন্নত মুবারক পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করতেন তিনি।
যেমন, হজ্জের সফরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেখানে যেখানে রাত্রি যাপন করতেন, পরবর্তীকালে তিনিও একইস্থানে রাত্রি যাপন করতেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে সকল স্থানে নামায আদায় করতেন, তিনিও সেখানে নামায আদায় করতেন। যে রাস্তা দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চলতেন তিনিও সে রাস্তা দিয়ে চলতেন। এমনকি যে সকল স্থানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওযু-গোসল করেছেন, তিনিও সেখানে একই কাজ সম্পাদন করতেন। সুবহানাল্লাহ! মোটকথা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতিটি পদক্ষেপ তিনি হুব্হু অনুসরণ-অনুকরণ করতেন। উনার প্রতিটি কথা ও কাজকে লোকেরা মনে করত প্রকৃতপক্ষে তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা ও কাজ মুবারক। যেহেতু লোকে উনাকে অনুসরণ করত, তাই ব্যক্তিগত কারণে কোন ক্ষেত্রে সুন্নত মুবারকের অনুসরণ করতে না পারলে তিনি স্পষ্ট করে বলে দিতেন, এটা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাজ বা আমল মুবারক নয়। বিশেষ ওজর বশতঃ আমি এমন করেছি। তাতে মানুষের বিভ্রান্তি দূর হয়ে যেত। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি উনার ইত্তিবায়ে সুন্নত মুবারক সম্পর্কে বলেছেন, ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মত আর কেউ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক অনুসরণ করেন না।
তাফাক্কুহ ফিদ্দীন (تَفَقُّهْ فِىْ الدِّيْنِ) বা দ্বীন সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মধ্যে পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল। সারাটা জীবন উনার ইলিম চর্চা ও ফতওয়া দিয়েই কাটে। পবিত্র মদীনা শরীফের প্রখ্যাত মুফতী ছাহাবী উনাদের মধ্যে তিনিও একজন। উনার যুগের শ্রেষ্ঠ ইসলামী বিশেষজ্ঞরা উনার নিকট বিভিন্ন মাসয়ালার সমাধান চাইতেন। হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ সমসাময়িক অনেকেই উনার কাছ থেকে বিভিন্ন মাসয়ালার সমাধান নিতেন। পরবর্তীকালে মালেকী মাযহাব মূলতঃ হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এসব ফতওয়ার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে।
হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলতেন, হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দ্বীনের অন্যতম ইমাম। উনার ফতওয়াসমূহ সংগৃহীত হলে তা বৃহদাকার গ্রন্থে পরিণত হত। তিনি ফতওয়া দেয়ার ব্যাপারে ভীষণ সতর্কতা অবলম্বন করতেন।
হাফেজ ইবনে আবদিল বার বলেন, হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ফতওয়া ও আমল উভয় ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতেন। খুব ভাবনা চিন্তা করে যেমন কথা বলতেন, তেমনি কাজও করতেন ভেবে চিন্তে।
এ কথা সত্য যে, সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মুবারকের ছাপ পড়েছিল, তবে যাঁদের উপর গভীরভাবে এই ছাপ পড়েছিল হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন উনাদের মধ্যে অন্যতম। উনার প্রতিটি কথা ও আচরণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্বভাব-বৈশিষ্ট্য মুবারকের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠত। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৮)
০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দ্বীন ইসলামের বিশেষ রাত সমূহের মধ্যে একটি বিশেষ ফযীলতপূর্ণ রাত ‘পবিত্র শবে বরাত’ (১)
০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মুসলমানদের উপর কাফিরদের নির্যাতনের কারণ উদঘাটন
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফের সঠিক ও বিশুদ্ধ অর্থ প্রকাশ করে থাকে রাজারবাগ শরীফ, বিপরীতে অর্থ পরিবর্তন ও বিকৃতি করে ধর্মব্যবসায়ী-উলামায়ে ছূ’রা (১)
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ভোট, নির্বাচন, পদপ্রার্থী হওয়া ইত্যাদি কোনটিই জায়িয নেই
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
গণতন্ত্রে পাচ বৎসরের জন্য ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। ইসলামী শব্দ ব্যবহারকারীরা সত্যিকারে ইসলামী আইন জারী করলে পাঁচ বৎসর পর ক্ষমতায় আসা অসম্ভব। সুতরাং গণতন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে কুরআন শরীফের আইন বা ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলা একটা চরম মিথ্যা, ধোঁকা ও প্রতারণা (পর্ব ১)
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র শবে বরাত সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফগুলো পরিপূর্ণ ছহীহ- এ বিষয়ে সকল আসমাউর রেজাল বিশারদ উনারা একমত
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)