জীবনী মুবারক
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
বিলাদত শরীফ: ৬০৮ খৃ: বিছাল শরীফ: ৭৪ হিজরী (৬৯৪ খৃ:) বয়স মুবারক: ৮৭ বছর।
, ০৬ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১১ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বিছাল শরীফ:
হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “আত-তারীখ” গ্রন্থে উল্লেখ করেন, আমার নিকট আল-উওয়াইসি বর্ণনা করেছেন যে, উনার নিকট হযরত মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন; হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বয়স মুবারক ৮৭ বছরে পৌঁছেছিল। হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি ব্যতীত অন্যান্যদের মতে তিনি ৮৪ বছর বয়সে বিছাল শরীফ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রথম বর্ণনাকেই অধিকতর সঠিক বলে মন্তব্য করেছেন। (ইছাবা)
হাজ্জাজের সময় আরাফাত হতে ফিরবার সময় হাজ্জাজের একজন সিপাহী তার বিষাক্ত বর্শার নিম্নাংশ হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পায়ে ঢুকিয়ে দেয়। হাজ্জাজ তথায় গমন করে সিপাহীকে শাস্তি দানের জন্য উনার নিকট সিপাহীর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি এই বলে হাজ্জাজকে তিরস্কার করেন যে, এই পবিত্র স্থানে সিপাহীকে অস্ত্র সমেত ঢোকার জন্য কেন অনুমতি দেয়া হলো? এই বিষের ফলেই তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন।
সাধারণভাবে ধারণা করা হয় যে, শুধুমাত্র ঘটনাক্রমে এমনটি হয়নি, বরং এর পেছনে হাজ্জাজের ইঙ্গিত ছিল। কারণ কা’বা শরীফে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপর আক্রমণ চালানোর জন্য হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হাজ্জাজকে ভীষণ তিরস্কার করেছিলেন। এতে হাজ্জাজ ক্ষুব্ধ হয়। অতঃপর তারই ইঙ্গিতে একজন সিরীয় সৈনিক উনাকে এভাবে আহত করে।
হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, শাসক আবদুল মালিক হাজ্জাজকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে সংঘাতে না যাওয়ার জন্য। হাজ্জাজের কাছে এ নির্দেশ ছিল অত্যন্ত পীড়াদায়ক। তাই সে এই বিকল্প পথে হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শহীদ করে।
ইবনে সা’দ বর্ণনা করেন, একবার হাজ্জাজ খুতবার মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি দোষারোপ করে যে, তিনি কালামুল্লাহ শরীফের বিকৃতি সাধন করেছেন। হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সাথে সাথে প্রতিবাদ করে বলে উঠেন, তুমি মিথ্যা বলছ। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এমন ক্ষমতা নেই এবং এমন অভিযোগ উত্থাপনের তোমারও কোন সুযোগ নেই। সাধারণ সমাবেশে এমন কঠোর প্রতিবাদ হাজ্জাজ সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। কিন্তু প্রকাশ্যে হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে কোন রকম অসৌজন্যমূলক আচরণের সাহসও তার ছিল না। তাই সে গোপন ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, একদিন হাজ্জাজ এত দীর্ঘ খুতবা দিলো যে, আছরের নামাযের সময় সংকীর্ণ হয়ে পড়ল। হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বিরক্ত হয়ে বলে উঠেন, সূর্য তোমার প্রতীক্ষা করতে পারে না। যা হোক এসব কারণে হাজ্জাজ হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সহ্য করতে পারছিল না। নাঊযুবিল্লাহ!
বিষের ক্রিয়ায় হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন শয্যাশায়ী, তখন হাজ্জাজ উনাকে দেখতে আসে। কুশল বিনিময়ের পর হাজ্জাজ উনাকে বললো, অপরাধীকে আমি চিনতে পারলে তার গর্দান নিতাম। হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, সবকিছু তো তুমিই করেছ। তারপর বলছ, অপরাধীকে পেলে হত্যা করতে। মুখের উপর এমন অপ্রিয় সত্য কথা শোনার পর হাজ্জাজ চুপ হয়ে যায়।
পবিত্র মদীনা মুনাওওয়ারা শরীফে জীবনের শেষ সময়টি অতিবাহিত করার একান্ত ইচ্ছা ছিল হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার। উনার মারিদ্বী শান মুবারক যখন বৃদ্ধির দিকে যেতে লাগল, তিনি দোয়া করতে লাগলেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! আমাকে মক্কা শরীফে বিছাল শরীফ দান করবেন না। উনার পুত্র হযরত সালিম রহমতুল্লাহি আলাইহিকে তিনি ওছীয়ত মুবারক করেন, মক্কা শরীফে আমার বিছাল শরীফ হলে মক্কা শরীফের হারাম এলাকার বাইরে কোন এক স্থানে আমাকে দাফন করবে। যে যমীন থেকে আমি হিজরত করেছি, সেখানে সমাহিত হওয়া ভাল মনে হচ্ছে না। ওছীয়ত মুবারকের অল্প কিছুদিন পর তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন।
বিছাল শরীফের পর লোকেরা উনার ওছীয়ত মুবারক অনুযায়ী হারাম এলাকার বাইরে উনার জিসিম মুবারক দাফন করতে চায়। কিন্তু হাজ্জাজ তাতে বাধা দেয়। সে নিজেই জানাযার নামায পড়ায় এবং ‘ফাখ’ নামক কবরস্থানে উনাকে দাফন করে। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ঈমানদারদের প্রথম ও বড় শত্রু হলো ইবলিস
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৬)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গান-বাজনা অকাট্য দলীল দ্বারা সুস্পষ্টভাবে হারাম
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪২)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে সমস্ত নামধারী আলিমরা শাসকদের দরবারে আসা-যাওয়া করে তারাই উলামায়ে সূ এবং সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব (৩)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সীমালঙ্ঘনকারী কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যে সমস্ত নামধারী আলিমরা শাসকদের দরবারে আসা-যাওয়া করে তারাই উলামায়ে সূ এবং সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)