জীবনী মুবারক
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
, ১৮ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৫ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৭ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বিছাল শরীফ: ৩য় হিজরী (৬২৪ খৃ:)
শাহাদাত বরণ:
উহুদের জিহাদে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অত্যন্ত সাহসের সাথে জিহাদ করে শাহাদাত বরণ করেন। তিনিই ছিলেন প্রথম শহীদ। (বুখারী শরীফ)
মুশরিকরা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জিসিম মুবারক কেটে একেবারে টুকরা টুকরা করে বিকৃত করে ফেলে। হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি আমার পিতার শাহাদাত মুবারকের খবর শুনে ছুটে এসে দেখলাম, জিসিম মুবারক একটি চাদর দিয়ে ঢাকা। আমি চাদরটি সরিয়ে উনার চেহারায় বুছা (চুমা) দিতে লাগলাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দেখলেন, কিন্তু নিষেধ করলেন না। আমি কাঁদতে লাগলাম। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আমাকে নিষেধ করতে লাগলেন, কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিষেধ করলেন না। আমার ফুফু হযরত ফাতিমা বিনতে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা কাঁদতে লাগলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি কাঁদেন বা না কাঁদেন উনার দেহটি আপনারা উঠিয়ে না নেয়া পর্যন্ত ফেরেশতারা ডানা দিয়ে উনাকে ছায়া দিতে থাকবে। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ, ইছাবা, উসুদুল গাবা)
হযরত আমর ইবনে জামুহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ভগ্নিপতি ও ঘনিষ্ট বন্ধু। উহুদের শহীদগণের জিসিম মুবারক দাফনের সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নির্দেশ মুবারক দিয়েছিলেন, আপনারা হযরত আমর ইবনে জামুহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের দিকে লক্ষ্য রাখুন। উনারা দু’জন দুনিয়াতে ছিলেন অকৃত্রিক বন্ধু। উনাদেরকে একই কবরে দাফন করবেন। (উসুদুল গাবা)
অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী উনাকে এবং হযরত আমর ইবনে জামুহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে একই কবরে দাফন করা হয়।
শাহাদাত মুবারক গ্রহণের পরবর্তী সুসংবাদ:
এক হাদীছ শরীফে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে জাবির! আপনাকে এমন বিমর্ষ দেখাচ্ছে কেন? আমি জবাবে বললাম, আয় মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা শহীদ হয়েছেন, কিন্তু তিনি কিছু ঋণ ও পোষ্য রেখে গিয়েছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনাকে একটি সুসংবাদ দিচ্ছি। মহান আল্লাহ পাক তিনি কখনও পর্দার আড়াল ছাড়া কারো সাথে কথা বলেননি। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার পিতার সাথে সামনা-সামনি কথা বলেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে বলেছেন, হে আমার প্রিয় বান্দা! আপনি আমার নিকট যা খুশি চাইতে পারেন, আমি আপনার ইচ্ছা পূরণ করবো। আপনার পিতা তখন বললেন, আয় মহান রব তায়ালা! আমি চাই, আপনি আমাকে আবার পৃথিবীতে পাঠান এবং আমি আবার যেন আপনার পথে শহীদ হই। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আমার বিধান তো এরূপ যে, পৃথিবীতে পুনরায় আর কেউ ফিরে যাবে না। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি নাযিল করলেন-
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ قُتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُوْنَ
অর্থ: যারা মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় শহীদ হন, ধারণা করবে না যে, উনারা মৃত। বরং উনারা জীবিত উনাদের রব তায়ালা উনার নিকট এবং উনারা রিযিক প্রাপ্ত। (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৯) (তিরমিযী শরীফ, ইছাবা, উসুদুল গাবা, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
হযরত শা‘বী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমাকে বলেছেন, আমার পিতা (হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) শাহাদাত বরণ করলেন, উনার বেশ কিছু ঋণ ছিল। হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে আরজ করলাম, আমার পিতা ঋণ রেখে গিয়েছেন, আর আমাদের খেজুর ব্যতীত আর কিছু নেই। সুতরাং আপনি মেহেরবানী করে আমার সঙ্গে আসুন, যাতে পাওনাদারগণ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার না করে। তিনি বলেন, অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার সাথে খেজুরের স্তুপসমূহের মধ্যে একটি স্তুপের নিকট আসলেন এবং দোয়া করলেন। অতঃপর তিনি ইহার উপর বসলেন। অতঃপর তিনি পাওনাদারদের পাওনা অনুযায়ী খেজুর দিতে লাগলেন। দেনা পরিশোধ করার পর দেখা গেল, যে পরিমাণ খেজুর তিনি পাওনাদারদেরকে দিয়েছেন সেই পরিমাণ খেজুর অবশিষ্ট রয়েছে। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা) (অসমাপ্ত)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছাহাবায়ে কিরামগণ উনারা উম্মাহর মাঝে শ্রেষ্ঠতম মর্যাদায় আসীন
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বদ মাযহাব, বদ আক্বীদা ও বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (২৩)
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ্ মুবারক কায়িম হওয়ার অর্থই হলো দুনিয়ার যমীন ইনছাফ দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়া (৩)
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের জন্য সমস্ত খেলাধুলা হারাম
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফির-মুশরিকদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা জায়েয নেই
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আত্ব-তাক্বউইমুশ শামসী প্রণয়নের প্রেক্ষাপট: ফসলী সনসহ প্রচলিত সৌর বর্ষপঞ্জিগুলো পরিত্যাজ্য হওয়ার কারণ
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)