জীবনী মুবারক
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৮)
বিলাদত শরীফ: ৬১৯ খৃ: বিছাল শরীফ: ৬৮ হিজরী (৬৮৮ খৃ:) বয়স মুবারক: ৭০ বছর।
, ০২ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১০ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ০৮ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ২৪ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ফযীলত ও মর্যাদা:
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে অত্যন্ত সম্মান করতেন। বছরার গভর্ণর (ওয়ালী) থাকাকালে বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবু আইয়ুব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একবার হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট কোন জরুরী প্রয়োজনে স্বীয় প্রয়োজনের কথা ব্যক্ত করেন। সব শুনে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার কর্জ কি পরিমাণ? তিনি উত্তর দেন, বিশ হাজার (দিরহাম)। হযরত আবু আইয়ুব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে সর্বপ্রথম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মেহমানদারী করেছিলেন। সে কথা স্মরণ করে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উদার হস্তে হযরত আবু আইয়ুব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সাহায্য করেছিলেন। চল্লিশ হাজার দিরহাম এবং ২০ জন খাদেম এবং গৃহের প্রয়োজনীয় সমস্ত তৈজসপত্র তিনি উনাকে হাদিয়া দিয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
আবু উওয়ানা হযরত আবুল জুওয়ায়রিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, আমি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ইযার (লুঙ্গি) নিস্ফে সাক্ব (হাঁটু ও ছোট গিরার মাঝামাঝি) অথবা একটু উপর পর্যন্ত দেখেছি এবং উনাকে নামাযরত অবস্থায় রুমী চাদর পরিহিত দেখেছি।
অন্য এক বর্ণনাকারী, রিশদীন বিন কুরাইব, উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে কালো পাগড়ী পরিহিত ও দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে পাগড়ীর শিমলা ঝুলানো দেখেছি। এসব বর্ণনা থেকে বুঝা যায় পোশাক পরিচ্ছেদেও তিনি পরিপূর্ণ সুন্নত মুবারকের পরিপূর্ণ অনুসারী ছিলেন।
বিছাল শরীফ:
শেষ বয়সে উনার দৃষ্টি শক্তি স্থগিত হয়ে গিয়েছিলো। উনার দৃষ্টিশক্তি রহিত হওয়ার ব্যাপারে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাদীছ শরীফে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যখন তিনি দুইবার হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে স্বশরীরে দর্শন করেছিলেন।
জীবনের বাকি দিনগুলি তিনি তায়েফে অতিবাহিত করেন এবং সেখানেই হিজরী ৬৮ সনে (৬৮৮ খৃ:) ৭০ বৎসর বয়সে পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। শেষ বয়সে যখন উনার দৃষ্টি শক্তি রহিত হয়ে যায়, তিনি এই কবিতাংশ আবৃত্তি করেন-
ان ياخذ الله من عينىّ نورهما - ففى لسانى و قلبى منهما نور
قلبى ذكىّ و عقلى غير ذى دخل - وفى فمى صارم كا لسيف مأثور
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক যদিও আমার দুই চোখের আলো নিয়ে গিয়েছেন, এতদুভয়ের নূর আমার অন্তর ও জিহ্বাতে রয়ে গিয়েছে। আমার অন্তর বুদ্ধিমান এবং আমার জ্ঞান অসংলগ্নতা-মুক্ত, আর আমার মুখ তরবারির ন্যায় কঠোর ও প্রভাবশালী)। (উসুদুল গাবা)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পবিত্র বিছাল শরীফের সময় উনার বয়স মুবারক হয়েছিলো ৭০ বছর। হযরত মুহম্মদ ইবনে হানাফিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার জানাযা নামাযের ইমামতি করেন। উনাকে দাফন করে তিনি মন্তব্য করেন, এই উম্মতের রব্বানী (খোদা-ভীরু বুযূর্গ আলিম) ইনতিকাল করলেন। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
তায়েফ নগরে মসজিদে ইবনে আব্বাস নামক বিশাল মসজিদটি আজও উনার স্মৃতি বহন করে চলছে। এ মসজিদেরই পিছন দিকে একপাশে ইতিহাসের কিংবদন্তী এই মহান ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাযার শরীফ বিদ্যমান।
হযরত সালিম আল-আফতাস রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত সা‘ঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন বিছাল শরীফ গ্রহণ করলেন, একটি অস্বাভাবিক পাখি এসে উনার কাফন মুবারকের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলো, অতঃপর আর ওই পাখিটিকে বের হয়ে যেতে দেখা গেল না। (অনেকে চিন্তা ফিকির করেছেন, ইহা ছিল উনার ইলিম (জ্ঞান)। কোন কোন বর্ণনাকারী বলেছেন পাখিটির রং ছিল সাদা। ) অতঃপর যখন উনাকে দাফন করা হলো তখন মাযার শরীফের এক পার্শ থেকে এই আয়াত শরীফ পাঠ করতে শুনা গেল, কিন্তু কে পাঠ করলো তা দেখা গেল না!
يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ. إِرْجِعِىْ إِلَى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَرْضِيَّةً، فَادْخُلِىْ فِى عِبَادِىْ وَادْخُلِىْ جَنَّتِىْ.
অর্থ: হে পরিতৃৃপ্ত আত্মা! আপনি প্রসন্ন ও সন্তুষ্টচিত্ত অবস্থায় আপনার মহান প্রতিপালকের দিকে প্রত্যাবর্তন করুন। অতঃপর আমার খাছ বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ করুন। (পবিত্র সূরা ফজর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭-৩০) (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
সূত্রসমূহ: উসুদুল গাবা, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, অন্যান্য সীরত গ্রন্থসমূহ। (সমাপ্ত)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশকারী, কটাক্ষকারী, অবমাননাকারীদেরকে শরঈ শাস্তি প্রদান করা ওয়াজিব
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৭)
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দ্বীন ইসলাম উনার জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর ৩ শ্রেণী
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মালিকুত তামাম, ক্বাসিমুন নিআম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল ফাতহ মুবারক উনার বরকত ও ফযীলত (৩)
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন (৭)
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৬)
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বিধর্মী-কাফেরদের সাথে সাদৃশ্যতা রাখা জায়েজ নেই
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)