জীবনী মুবারক
হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
বিলাদত শরীফ: হিজরীপূর্ব ৪৩ সন। (শামসীপূর্ব ৫৫ সন) বিছাল শরীফ: ৩২ হিজরী। বয়স মুবারক: ৭৫ বছর।
, ২৫ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৬ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ২৩ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ফযীলত ও মর্যাদা:
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি একটি ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, হযরত আবদুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আসমান ও যমীনের বিশ্বাস ভাজন ব্যক্তিত্ব। তিনি অত্যন্ত সৎ ও পবিত্র স্বভাবের অধিকারী ছিলেন। ইসলাম পূর্ব যুগেই তিনি মদ্যপান হতে নিজেকে বিরত রেখেছিলেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বেমেছাল অকুন্ঠচিত্ত মুহব্বত, নিসবত-কুরবত মুবারক হাছিলে সীমাহীন কোশেশ, বেনযীর আনুগত্যতা, তাক্বওয়া-পরহেযগারী, চরম সত্যবাদিতা, সদাচার, অমায়িক, দানশীলতা, আত্মত্যাগ, প্রতিশ্রুতি রক্ষা, আমানতদারী, বিনয়, কোমলতা, রুগ্নের সেবা, সৎ সাহস ইত্যাদি ছিল হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তিনি “আশারায়ে মুবাশশারাহ” অর্থাৎ “বেহেশ্তের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জন” উনাদের একজন, মজলিসে শূরা উনার ৬ জনের একজন, বদরী ছাহাবী উনাদের একজন এবং সর্বপ্রথম দ্বীন ইসলাম গ্রহণকারী ৮ জনের একজন ছিলেন। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
হযরত শো’বা রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, একবার হযরত আবদুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি (মেহমানের জন্য) খানা নিয়ে উপস্থিত হলেন। আমার মনে হলো, তখন তিনি রোযাদার ছিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, আসাদুল্লাহি ওয়া আসাদু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, হযরত হামযাহ আলাইহিস সালাম তিনি শহীদ হয়ে গেছেন, উনাকে আমরা ভালভাবে কাপড় দিয়ে (জিহাদের ক্ষেত্রে কাপড়ের অভাবে) দাফনও করতে পারিনি, অথচ তিনি আমার চেয়ে উত্তম ছিলেন। হযরত মুসআব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও শহীদ হয়ে গেছেন, তিনিও আমার চেয়ে উত্তম ছিলেন। উনাকেও জিহাদের ক্ষেত্রে কাপড়ের অভাবে আমরা ভালভাবে কাপড় দিয়ে দাফন করতে পারিনি। যে সমস্ত বিপদ-আপদ আমাদের উপর আপতিত হওয়ার ছিল, সেসব আপতিত হয়ে গেছে। (বর্ণনাকারী) হযরত শো’বা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, অথবা তিনি বলেছেন, আমাদের যা পাওয়ার ছিল, সে সব নিয়ামত আমরা পেয়েছি। অতঃপর হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমি ভয় করছি, আমাদের পার্থিব আকাঙ্খাসমূহ খুব তাড়াতাড়ি পূর্ণ হয়ে গেছে। হযরত শো’বা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি মনে করি, অতঃপর তিনি আর খাবার খাননি। (হিলইয়াতুল আওলিয়া)
হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন পবিত্র মক্কা শরীফে আসতেন, যে বাড়ী থেকে তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে হিজরত মুবারক করেছিলেন, সে বাড়ীতে অবস্থান করতে তিনি অপছন্দ করতেন। জাহেলিয়ার যুগে হিজরতের পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ বাড়ীতে বসবাস করেছিলেন। (ইবনে সা’দ)
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একবার আমরা খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গে বসা ছিলাম। তিনি বললেন, আপনি কি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে কোন হাদীছ শরীফ শুনেছেন, যাতে তিনি এমন কোন নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন যে, কোন ব্যক্তি যদি তার নামাযে কিছু ভুলে যায়, তখন কিভাবে সে নামায পড়বে? আমি বললাম, না, আমি এমন কিছু শুনিনি। তবে হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনিও কি এ বিষয়ে কিছু শুনেননি? তিনি বললেন, না, আমিও শুনিনি। এমন সময় হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাদের মধ্যে আগমন করলেন। তিনি আমাদের আলোচনার বিষয় জানতে চাইলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে এ বিষয়ে অবগত করলেন। হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমি কিন্তু এ বিষয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক শুনেছি। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, আপনি আমাদের মধ্যে সৎ ও ন্যায়পরায়ন ব্যক্তিত্ব, আপনি কি শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি, যদি তোমাদের কেউ তার নামাযে (কিছু) ভুলে যায়, এমনকি সে বলতে না পারে কম পড়েছে, না বেশি পড়েছে, যদি তার সন্দেহ এক এবং দুই উনার মধ্যে থাকে, তবে সে ধরে নিবে এক (রাকাআত) পড়েছে। যদি সন্দেহ দুই এবং তিনের মধ্যে থাকে, তবে সে ধরে নিবে দুই (রাকাআত) পড়েছে। আর যদি সন্দেহ তিন এবং চারের মধ্যে থাকে, তবে সে ধরে নিবে সে তিন (রাকাআত) পড়েছে, যে পর্যন্ত তার ধারণা (সন্দেহ) বেশির প্রতি হয়। অতঃপর শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে দুই সিজদা দিবে। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, আহমদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ) (চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বর্তমান এই পরিস্থিতিতে সমগ্র দেশবাসীর জন্য যা আবশ্যিকভাবে করণীয়
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৪)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬১)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৫)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (২৭)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে হবে
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তাওয়াক্কুল তথা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ভরসা করার ফযীলত
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)