হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সম্মানিত বিলায়েত মুবারক হচ্ছে সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক উনার স্থলবর্তী সম্মানিত নিয়ামত (১)
, ০৫ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২২ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ২১ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ০৫ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
‘আউলিয়া’ শব্দটি ‘ওলী’ শব্দের বহুবচন। আরবী উচ্চারণ اَوْلِيَاءُ (আউলিয়াউ) শব্দটি হচ্ছে বহুবচন আর একবচন হচ্ছে وَلِـىٌّ (ওয়ালিয়্যুন) শব্দটি। অর্থ : বন্ধু, অভিভাবক, সাহায্যকারী, মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত বা প্রিয় বান্দা।
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে وَلِـىٌّ এবং اَوْلِيَاءُ উভয় শব্দেরই উল্লেখ রয়েছে। ওলী বা আউলিয়া বললেই মানুষেরা মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী বুঝে থাকে। বাংলায় পুরুষের ক্ষেত্রে আল্লাহওয়ালা এবং মহিলার ক্ষেত্রে আল্লাহওয়ালী শব্দ দুটিও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ওয়ালিয়্যুল্লাহ অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু হওয়ার বিষয়টি সহজ নয়। তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি কারো জন্য সহজ করে দিলে কেবল তার জন্য ওয়ালিয়্যুল্লাহ হওয়া সহজ হয়। তথাপি ওয়ালিয়্যুল্লাহ হওয়ার জন্য কোশেশ বা রিয়াযত করার বিষয় রয়েছে।
وَلِـىٌّ (ওলী) শব্দটির উৎপত্তি وِلَايَتٌ (বিলায়েত) মাছদার বা ক্রিয়ামূল থেকে। যেরূপ نَبِـىٌّ (নাবী) শব্দ মুবারক উনার উৎপত্তি نُبُوَّتٌ (নুবুওওয়াত) ক্রিয়ামূল থেকে এবং رَسُوْلٌ (রসূল) শব্দ মুবারক উনার উৎপত্তি رِسَالَتٌ (রিসালত) ক্রিয়ামূল থেকে।
মূলত বিলায়েত হচ্ছে সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক উনার স্থলবর্তী সম্মানিত নিয়ামত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে সম্মানিত নুবুওওয়াত উনার সমাপ্তি ঘটেছে। ক্বিয়ামত পর্যন্ত উক্ত নিয়ামত আর কেউই লাভ করবেন না। কিন্তু উক্ত নিয়ামত মুবারক উনার স্থলবর্তী যে নিয়ামত অর্থাৎ বিলায়েত মুবারক উনার ধারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এ নিয়ামত যিনি খাছভাবে লাভ করেন বা অধিকারী হন উনাকেই ওয়ালিয়্যুল্লাহ বলা হয়। ওয়ালিয়্যুল্লাহ উনার শানে মুর্শিদ ও শায়েখ শব্দ মুবারক দু’টিও ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ফার্সী ভাষায় ‘পীর’ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
বিশেষ করে ওয়ালিয়্যুল্লাহ হওয়ার জন্য ইলমে ফিক্বাহ উনার পাশাপাশি ইলমে তাছাওউফ উনার তাকমীলে বা পূর্ণতায় পৌঁছতে হয়। আর এ উভয় প্রকার ইলিম উনার হাক্বীক্বী নিসবত লাভ করতে হলে তরীক্বত উনার সিলসিলা অনুযায়ী একজন কামিল অর্থাৎ পূর্ণতাপ্রাপ্ত ওলী উনার নিকট বাইয়াত হয়ে উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতঃ তরীক্বতের সবকসমূহ আদায় করার মাধ্যমে বিভিন্ন মাক্বাম বা মনযীল অতিক্রম করে যখন পূর্ণতায় পৌঁছেন তখন মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশে কামিল ওলী বা মুর্শিদ ক্বিবলা পূর্ণতার যে সনদ প্রদান করেন তার নাম হচ্ছে খিলাফত। যিনি খিলাফত লাভ করেন উনাকে খলীফা বলা হয়। প্রত্যেককে খিলাফত লাভ করে খলীফা হয়ে ওয়ালিয়্যুল্লাহ হতে হয়।
বস্তুতঃ ইলমে তাছাওউফ উনার মূল বিষয়ই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার মত মুবারক অনুযায়ী মত হওয়া এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথ মুবারক অনুযায়ী পথ হওয়া। যিনি উক্ত মত মুবারক ও পথ মুবারক উনাদের পরিপূর্ণ অনুসারী হন তিনিই উলিল আমর এবং তিনিই সত্যিকার ওয়ালিয়্যুল্লাহ।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
مَنْ ذَكَّرَكُمُ اللَّهَ رُؤْيَتُهُ وَزَادَ فِي عِلْمِكُمْ مَنْطِقُهُ وَذَكَّرَكُمْ بِالْاٰخِرَةِ عَمَلُهُ
অর্থ: “যাঁকে দেখলে মহান আল্লাহ পাক উনার কথা স্মরণ হয়, যাঁর কথা শুনলে দ্বীনি ইলিম বৃদ্ধি হয় এবং যাঁর আমল দেখলে পরকালের আমল করার ব্যাপারে উৎসাহ পয়দা হয়।” (মুসনাদে আবী ইয়া’লা শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় মালিকী মাযহাব উনার ইমাম ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
اِنَّـمَا الْفَقِيْهُ اَلزَّاهِدُ فِـى الدُّنْيَا وَالرَّاغِبُ اِلَـى الْاٰخِرَةِ وَالْبَصِيْرُ بِذَنْبِهِ وَالْـمُدَاوِمُ عَلَى عِبَادَةِ رَبِّهِ وَالْوَارِعُ وَالْكَافُّ عَنْ اَعْرَاضِ الْـمُسْلِمِيْنَ وَالْعَفِيْفُ عَنْ اَمْوَالِـهِمْ وَالنَّاصِحُ لِـجَمَاعَتِهِمْ
অর্থ: “ফক্বীহ বা আল্লাহওয়ালা ওই ব্যক্তি যিনি দুনিয়া হতে বিরাগ, পরকালের প্রতি ঝুঁকে রয়েছেন, গুনাহ্র ব্যাপারে খুবই সতর্ক, স্বীয় রব তায়ালা উনার ইবাদতে সদা মশগুল, পবিত্র সুন্নত উনার পরিপূর্ণ পাবন্দ, মুসলমানদের মান-সম্ভ্রম নষ্ট করেন না, মুসলমানদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না, অধীনস্থ লোকদেরকে নছীহত বা উপদেশ দিয়ে থাকেন।” (হিল্ইয়াতুল আউলিয়া, আত তা’রীফাতুল ফিকহিয়্যাহ)
মোটকথা, যিনি ওয়ালিয়্যুল্লাহ হবেন তিনি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করবেন, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের ইলিম অনুযায়ী আমল করবেন, সুন্নত মুবারক উনার পরিপূর্ণ অনুসারী হবেন, তাক্বওয়া অবলম্বন করবেন, মহান আল্লাহ পাক উনাকে ব্যতীত আর কাউকে ভয় করবেন না, জীবন ও সম্পদের মুহব্বত করবেন না, দুনিয়ালোভী হবেন না, অর্থলোভী হবেন না, পদলোভী হবেন না। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুবহু নকশা হবেন এবং উনারই স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি হবেন। আক্বীদায়, আমলে, আখলাক্বে, সীরতে, ছূরতে সবদিক থেকে অর্থাৎ মাথার তালু থেকে পায়ের তলা, হায়াত থেকে মউত প্রতিক্ষেত্রে প্রতি অবস্থায় ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক সকল অবস্থায় তিনি হবেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ণ অনুসারী, পরিপূর্ণ মিছদাক। সুবহানাল্লাহ! (চলবে)
-আল্লামা মুফতী আবূ খুবাইব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৫)
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার সঠিক তারিখ ২৭শে রজব; মুসলমানদেরকে বিশেষ দিবসের ফযীলত থেকে বঞ্চিত করতেই একটি গোষ্ঠী তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় (৩)
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৪)
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার সঠিক তারিখ ২৭শে রজব; মুসলমানদেরকে বিশেষ দিবসের ফযীলত থেকে বঞ্চিত করতেই একটি গোষ্ঠী তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় (১)
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছাহিবে কা’বা কাওসাইনে আও আদনা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আযিমুশ শান মি’রাজ শরীফ উনার বর্ণনা মুবারক (২)
০৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে পুরুষ ও মহিলা ব্যতীত তৃতীয় কোনো লিঙ্গের অস্থিত্ব নেই
০৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)