স্থাপত্য ইতিহাসে অনন্য এক নিদর্শন মুবারক। হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফ।
, ২০ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১১ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ১০ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ২৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) স্থাপত্য নিদর্শন
১ম পর্বের পর....
উত্তর দিকে খিলান পথ বর্তমানে ইটের নির্মাণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই খিলানপথ খুব ছোট এবং মাত্র ০.৩০ মি. (১ ফুট) প্রশস্ত কিন্তু অন্যদিকের খিলানপথগুলি ২.৩০ মি. (৬.৮") প্রশস্ত। পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণে আয়তাকার কাঠামোতে সংস্থাপিত খিলানকৃত এবং সদসযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। অভ্যন্তরে প্রত্যেক দেয়ালে রয়েছে দু'টি করে সূচালো বহুখাজের খিলানবিশিষ্ট বাতি রাখার কুলঙ্গী।
মাজার শরীফের ভিতের পাথরগুলি প্রায় সব সম আয়তনের এবং এখনও এ ভিতের প্রস্তর গাঁথুনি প্রায় অক্ষত রয়ে গেছে। ভিতের ওপর থেকে ইমারতের দেয়াল ইটের নির্মাণ। প্রস্তর ভিত প্রাঙ্গণের ভূমি থেকে ০.৯১ মিটার (৩ ফুট) উঁচু। প্রবেশপথের উচ্চতা ২.০৮ মিটার (৬-১০") উঁচু এবং দেয়ালের প্রশস্ততা ২.৫১ মি. (৮" ৩")। অভ্যন্তরভাগে মাজার শরীফের ইমারতের প্রত্যেক কোণে প্রস্তর নির্মিত 'ব্রাকেট' রয়েছে যা খিলানভিত্তিক স্কুইঞ্চ (ংয়ঁরহপব) পদ্ধতিতে ছাল নির্মাণে অনুসঙ্গ হিসাবে বর্গাকার মাজারকক্ষকে অষ্টভুজে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করেছে। ফলে উপরে উত্থিত গম্বুজের নিম্নভাগ সৃষ্ট হয়েছে। প্রাচীরের প্রায় ৭.৩২ মিটার (২৪ ফুট) ওপর থেকে গম্বুজ নির্মাণের পর্যায় শুরু হয়েছে। কলস মোতিফ (সড়ঃরভ) সন্নিবেশিত উঁচু ফিনিয়াল (ভরহরধষ) যুক্ত মাজারসৌধটি গম্বুজ চূড়া অবধি ১৪.৩৩ মিটার (৪৭ ফুট) উচ্চতা বিশিষ্ট। মাজার শরীফের চারটি প্রান্তকোণে চারটি গোল পার্শ্ববুরুজ রয়েছে এবং বুরুজগুলি নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে সমদূরবর্তী অংশে সাতবার মোল্ডিং নকশায় বিধৃত। বুরুজ শীর্ষ নিরেট ক্ষুদ্র গম্বুজে (পঁঢ়ড়ষধ) আবৃত এবং ক্ষুদ্র গম্বুজগুলি শিরাল নকশায় আকর্ষণীয় রূপ লাভ করেছে। হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময়ের বাগেরহাটে উনার মাজার শরীফই একমাত্র ইমারত যাতে বুরুজ শীর্ষে শিরাল ক্ষুদ্র গম্বুজ আজও অক্ষত অবস্থায় টিকে আছে। সাধারণত সুলতানি স্থাপত্যে পার্শ্ববুরুজ অষ্টভুজাকৃতির হয়ে থাকে কিন্তু এখানে পার্শ্ববুরুজগুলি অষ্টভুজাকৃতির না হয়ে গোলাকার রূপ ধারণ করেছে।
বাংলায় সুলতানি স্থাপত্যে বক্রাকার কার্নিশ প্রায় সব ইমারতে পরিলক্ষিত হয় এবং আলোচ্য মাজার শরীফের ছাদ ও কার্নিশে সরলরেখার পরিবর্তে বক্ররূপ (পঁৎারষরহরধৎ) পরিগ্রহ করেছে। বস্তুত কার্নিশ ও ছাদের বক্রভাব প্রতিভাত হতে শুরু হয় পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে নির্মিত একলাখী মাজার শরীফ কাঠামো থেকে, বাংলার ঐতিহ্যবাহী ও তাৎপর্যপূর্ণ আঞ্চলিক এ বৈশিষ্ট্য হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফে পূর্ণতা লাভ করে। এখানে সুষমাম-িত বক্রাকার ত্রয়ী কার্নিশের বৈশিষ্ট্যটি নিঃন্দেহে দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে। এ কার্নিশে ও পার্শ্ব বুরুজে লজেন্সের ন্যায় এবং চোখা ত্রিকোণ খাজ খাজ নকশা সারিবদ্ধভাবে দেখা দিয়েছে। জানা যায় বাইরের প্রাচীরের এবং ভিতরের অঙ্গন প্রাচীরের প্রত্যেক কোণে পার্শ্ববুরুজ ছিল। বর্তমানে বাইরের প্রাচীরে পশ্চিম দক্ষিণ কোণের একটি বুরুজ অবশিষ্ট রয়েছে যা থেকে অনুমিত হয় যে, বাইরের বেষ্টনী প্রাচীরের চারিপার্শ্বে ভিতরের বেষ্টনী প্রাচীর ও মাজার শরীফের পার্শ্ববুরুজের সাথে সঙ্গতি রক্ষা করে পার্শ্ববুরুজের অস্তিত্ব ছিল। " হযরত খাঁন জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্গাকৃতি মাজার শরীফ ইমারতের শীর্ষে নির্মিত হয়েছে একমাত্র গম্বুজটি। সুলতানি রীতির সুডৌল বৃত্তাকৃতির গম্বুজটিতে কলসচূড়া সহযোগে পরিমিত উচ্চতা অর্জিত হয়েছে।
চলবে ইনশাল্লাহ...
সূত্র:
সমাধি স্থাপত্য।
সুলতানি বাংলার স্থাপত্যশিল্প পত্রিকা।
ইতিহাস পরিষৎ পত্রিকা।
মাজার শরীফের লিপিতে বাগেরহাটের হযরত খাঁন জাহান।
বাংলায় ভ্রমণ ১ম খণ্ড।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৭)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাজীগঞ্জ দুর্গ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৬)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সুনামগঞ্জে কালের সাক্ষী শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী পাগলা বড় মসজিদ
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
৫০০ বছরের ঐতিহাসিক নিদর্শন বাঘা শাহী মসজিদ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৬)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৫)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৩)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০২)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০১)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৪০০ বছরের আলোচিত প্রাচীন স্থাপত্য তেবাড়িয়া জামে মসজিদ
১২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)