সৃষ্টির নিকৃষ্ট স্থান জাহান্নাম ও স্তর বিন্যাস ও কঠিন শাস্তি সম্পর্কে বর্ণনা (২)
, ২৯ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৫ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে যে-
قَاتِلُ الْـحُسَيْنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِـىْ تَابُوْتٍ مِّنْ نَّارٍ عَلَيْهِ نِصْفُ عَذَابِ اَهْلِ الدُّنْيَا.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি শহীদ করবে, তাকে জাহান্নামে আগুনের বক্সে রাখা হবে। সমস্ত দুনিয়াবাসী তথা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জিন-ইনসানকে যত শাস্তি দেয়া হবে। ঐসর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তিকে এককভাবে সকলের অর্ধেক শাস্তি দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ!
আলোচ্য সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেاَهْلِ الدُّنْيَا ‘দুনিয়ার সমস্ত অধিবাসী’ দ্বারা সৃষ্টি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যারাই জাহান্নামে প্রবেশ করবে, জাহান্নামের সকল অধিবাসী উদ্দেশ্য। আর এর মধ্যে বণী ইসরাঈলের ৭০ হাজার হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে যারা শহীদ করেছে, তারাও অন্তর্ভুক্ত।
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَلِىِّ بْنِ اَبِـىْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَاتِلُ الْـحُسَيْنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِـىْ تَابُوْتٍ مِّنْ نَّارٍ عَلَيْهِ نِصْفُ عَذَابِ اَهْلِ الدُّنْيَا.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি শহীদ করবে, তাকে জাহান্নামে আগুনের বক্সে রাখা হবে। সমস্ত দুনিয়াবাসী তথা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জিন-ইনসানকে যত শাস্তি দেয়া হবে। ঐসর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তিকে এককভাবে সকলের অর্ধেক শাস্তি দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী শরীফ ৩/২১০, আল মাক্বাছিদুল হাসানাহ ১/৪৮৩, কাশফুল খফা’ ২/৯১, শরহুয যারক্বানী আলালা মাওয়াহিব ১০/১৫২, শরফুল মুস্ত¡ফা শরীফ ৫/৩১৪, তাফসীরে হাক্কী ৫/৪৩৭, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৪/৮৮ ইত্যাদি)
অপর বর্ণনায় এসেছে-
وَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ قَاتِلَ الْـحُسَيْنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِـىْ تَابُوْتٍ مِّنْ نَّارٍ عَلَيْهِ نِصْفُ عَذَابِ اَهْلِ الدُّنْيَا وَقَدْ شُدَّتْ يَدَاهُ وَرِجْلَاهُ بِسَلَاسِلَ مِنْ نَّارٍ مَّنْكِبٌ حَتّٰى يَقَعُ فِىْ قَعْرِ جَهَنَّمَ وَلَهٗ رِيْحٌ يَّتَعَوَّذُ اَهْلُ النَّارِ مِنْ شِدَّةِ نَتْنِ رِيْـحِهٖ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি শহীদ করেছে, তাকে জাহান্নামে আগুনের বক্সে রাখা হবে। সমস্ত দুনিয়াবাসী তথা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জিন-ইনসানকে যত শাস্তি দেয়া হবে, ওই সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তিকে এককভাবে সকলের অর্ধেক শাস্তি দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ! তার হাত এবং পাগুলো আগুনের শিকল দ্বারা শক্তভাবে বাঁধা হবে। তারপর তাকে উপুড় করে জাহান্নামের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করা হবে। তার কঠিন দুর্গন্ধ থাকবে। সমস্ত জাহান্নামবাসী তথা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত লোক জাহান্নামে যাবে, তারা সকলেই সেই কঠিন পঁচা দূর্গন্ধ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে।” (শরফুল মুস্ত¡ফা শরীফ ৫/৩১৪)
বেনামাযী ব্যক্তির জাহান্নামে কঠিন শাস্তি সম্পর্কে বর্ণনা:
ছলাত বা নামায না পড়ার শাস্তি অত্যন্ত ভয়ানক। যেমন “বুখারী শরীফ” উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, “একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফজর নামাযের পর ইরশাদ মুবারক করেন, আজ রাতে দু’জন ফেরেশতা আলাইহিমাস সালাম উনারা এসে আমাকে উনাদের সাথে নিয়ে চললেন। পথিমধ্যে দেখতে পেলাম এক ব্যক্তি মাটিতে পড়ে আছে এবং আর এক ব্যক্তি তার শিয়রে দাঁড়িয়ে খুব জোরে তার মাথায় পাথর মারতেছে। পাথরের আঘাতে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে এবং নিক্ষিপ্ত পাথর খ-ও ছিটকে দূরে গিয়ে পড়তেছে। আর আঘাতকারী পাথর তুলে আনার ফাঁকে ঐ চূর্ণ মাথা পুনরায় ঠিক হয়ে যাচ্ছে এবং ঐ ব্যক্তি পুনরায় পাথর দিয়ে শায়িত ব্যক্তির মাথায় আঘাত করতেছে এবং সাথে সাথে মাথা ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যাচ্ছে এবং দূরে ছিটকে পড়া পাথর আনার ফাঁকে আবার তার মাথা জোড়া লেগে যাচ্ছে। এরূপ সে বারবার পাথর দিয়ে আঘাত করতেছে এবং মাথাও বারবার জোড়া লাগতেছে। আমি তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম, এই ব্যক্তি কে এবং তার অপরাধই বা কি? হযরত ফেরেশতা আলাইহিমাস সালাম উনারা উভয়ে বললেন, এই ব্যক্তি ফরয নামায তরক করে শুয়ে পড়তো অর্থাৎ সে ফরয নামায আদায় করতো না।” নাউযুবিল্লাহ!
সম্মানিত নামায তরককারী ব্যক্তি সবখানে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। অত্যন্ত যিল্লতের সাথে তার মৃত্যু হবে। তার কবর এত সংকীর্ণ হবে যে, একদিকের পাঁজরের হাড় অন্যদিকে চলে যাবে, কবরে আগুন জ্বলতে থাকবে এবং তার কবরে সুজা-আকরা নামক একটি ভয়ানক অজগর নিয়োগ করা হবে। উক্ত সাপটির দু’চোখে আগুনের ফুলকী এবং নখগুলি সারশ পাখির মতো প্রায় ১২ ক্রোশ লম্বা। তার আওয়াজ বজ্রের ন্যায় হবে এবং তার আঘাত এত কঠিন হবে যে, প্রতি আঘাতে ৭০ গজ মাটির নিচে চলে যাবে। এভাবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত শাস্তি চলতে থাকবে। নাউযুবিল্লাহ! অতঃপর ক্বিয়ামতের দিন অত্যন্ত কঠিনভাবে বে-নামাযীর হিসাব গ্রহণ করা হবে এবং তাকে বহু অপমানজনিতভাবে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। নাউযুবিল্লাহ! (সমাপ্ত)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)