সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৭)
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
, ১১ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২১ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২০ মে, ২০২৪ খ্রি:, ০৬ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
রিয়াদ্বাত-মাশাক্কাত:
মুজাদ্দিদে যামান, কুতুবুল মাশায়িখ, সুলত্বানুল হিন্দ, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত ওলীআল্লাহ উনার নিকট বাইয়াত হয়ে উনার নিদের্শিত অযীফা শরীফ প্রতিদিন যথানিয়মে আদায় করা। দিন বা রাতের যে কোন সময়ের অযীফাই হোক না কেন, প্রথমে অযীফা আদায় করবে, পরে সাংসারিক অন্যান্য কাজে মনোযোগী হবে।”
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
تَارِكُ الْوِرْدِ مَلْعُوْنٌ
অর্থ: “অযীফা তরককারী লা’নতগ্রস্ত বা অভিশপ্ত।”
সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, হযরত মাওলানা রাজিউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একদিন ঘোড়ায় আরোহন করে কোথাও যাচ্ছিলেন। হঠাৎ ঘোড়ার একটা পা গর্তে পড়ে ভেঙ্গে গেল। তিনি বাড়িতে ফিরে এলেন। ভাবতে লাগলেন, এ দুর্ঘটনার কারণ কি? অনেক চিন্তা-ভাবনার পর খেয়াল হলো যে, বা’দ ফজর তথা সকালের অযীফা কাযা হয়ে গেছে। এ দুর্ঘটনা তারই সতর্কীকরণ। তারপর তিনি অনুরূপ আরো একটি ঘটনা বর্ণনা করলেন। হযরত খাজা আব্দুল্লাহ মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি নামের একজন বুযূর্গ ছিলেন। তিনি কোন একদিনের অযীফা আদায় করতে ভুলে গেলেন। তখন গায়েবী আওয়াজ হলো- “হে আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনার থেকে নিজের প্রতিজ্ঞা সম্পাদন হয়নি। আপনি যে অযীফা প্রতিদিন আদায় করতেন তা আজকে আদায় করতে ভুলে গেছেন।” পরে তিনি তওবা-ইস্তিগফার করলেন। আর কোনদিন অযীফা তরক না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন।
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, “হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের জন্য অযীফাসমূহ নির্ধারিত হয়ে থাকে। উনারা এই অযীফা আদায়ে সুদৃঢ় থাকেন। উনাদের কাছে যেসব অযীফা পৌঁছানো হয় তথা দেয়া হয় উনারা তা যথাযথভাবে পালনে যতœবান হন।”
সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো ইরশাদ করলেন- একজন বুযূর্গ ব্যক্তি তাহাজ্জুদ গুজার ছিলেন। প্রতিদিনই তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতেন। একদিন তিনি তাহাজ্জুদ নামায পড়তে পারলেন না। তা কাযা হয়ে গেলো। যার ফলে উনার ঘোড়ার পা ভেঙ্গে গেলো। অল্প কিছুক্ষণ পরেই গায়েবী আওয়াজ হলো- তাহাজ্জুদ নামায কাযা করার সতর্কীকরণ স্বরূপ ঘোড়ার পা ভেঙ্গে গেছে।
অতঃপর তিনি ইরশাদ করলেন, যে সমস্ত অযীফা আমি হযরত বুযুর্গানে দ্বীন ও মাশায়িখে ইযাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নিকট থেকে লাভ করেছি আমি সেগুলো এখনো পরিপূর্ণরূপে পালনে সুদৃঢ় আছি। আর আপনাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি, প্রতিটি অযীফা যা আপনাদেরকে দেয়া হয়েছে সেগুলোর প্রতি পরিপূর্ণরূপে যতœবান থাকবেন। (দলীলুল আরিফীন-১০০)
খাজায়ে খাজেগাঁ হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইরশাদ করলেন, মুহব্বতের পথে প্রকৃত মুহিব বা আশিক সেই ব্যক্তি যে দুনিয়া-আখিরাত উভয় জগত হতে নিজেকে বিমুখ রেখেছে। অর্থাৎ তিনি দুনিয়ার ধন-দৌলত, ঐশ্বর্যের মুহতাজ না। তেমনি জান্নাতের নাজ-নিয়ামতের আশাও করেন না। তিনি আরো বলেন, মুহব্বত হাছিলের পথে মুহিব বা আশিককে চারটি বিষয়ের প্রতি অতীব যতœবান হতে হয়।
(১) মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরে-ফিকিরে সন্তুষ্ট চিত্তে সবসময় মশগুল থাকা।
(২) যিকির-ফিকিরের পূর্ণতার সর্বোচ্চ স্তরে তাকমীলে পৌঁছানো।
(৩) এমনভাবে শোগল করা (মহান আল্লাহ পাক উনার ধ্যান-খেয়ালের একটি প্রক্রিয়া) যাতে দুনিয়ার মুহব্বত দূর হয়।
(৪) বিনীত-বিনম্র হয়ে সবসময় কান্নাকাটি করা। অর্থাৎ অনুনয়-বিনয় সহকারে কান্নাকাটি করলে মন যেভাবে বিগলিত হয় ঠিক সেই অবস্থা সবসময় বজায় রাখা।
সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বললেন, মুহিব বা আশিকদের জন্য চারটি মঞ্জিল রয়েছে।
(১) মুহব্বত।
(২) ইলমিয়াত বা জ্ঞান অর্জন।
(৩) হায়া বা লজ্জা।
(৪) তা’যীম-তাকরীম বা সম্মান।
মুহিবে ছাদিক (প্রকৃত আশিক) সেই ব্যক্তি যে নিজের পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র, পরিবার-পরিজনের মোহে মোহগ্রস্ত না হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বতে সর্বদা গরক বা বিভোর থাকেন। প্রকৃতপক্ষে কেবল ঐ ব্যক্তির সাথে মুহব্বত রাখেন যার সাথে মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুহব্বত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। (দলীলুন আরিফীন-১১৪) (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)