সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৯)
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
, ১০ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৩ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৮ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বিশেষ নিয়ামত প্রাপ্তি:
মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে ইচ্ছা তাঁকে বিশেষ নিয়ামত ও অনুগ্রহরাজি দান করে থাকেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهٖ مَنْ يَّشَاءُ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে ইচ্ছা উনাকে উনার খাছ (বিশেষ) রহমত বা দয়া-অনুগ্রহ দিয়ে থাকেন।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৫)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
ذٰلِكَ فَضْلُ اللهِ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَّشَاءُ
অর্থ: “এটা মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ দয়া-অনুগ্রহ। তিনি যাঁকে ইচ্ছা উনাকে তা দান করে থাকেন।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৪)
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র বলেছেন-
اَللهُ يَجْتَبِيْ إِلَيْهِ مَنْ يَّشَاءُ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে ইচ্ছা উনাকে খাছভাবে মনোনীত করেন।” (পবিত্র সূরা শূরা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেই খাছ বা বিশেষ নিয়ামতপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মনোনীত। কাজেই, উনার নিয়ামতপ্রাপ্তি, তা’লীম-তরবিয়ত সবই কুদরতীভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
১৫ বছর বয়স মুবারকে সম্মানিত পিতা, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদ হযরত গিয়াসউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। পিতার বিরহ ব্যাথায় তিনি তখন জর্জরিত। পৈত্রিক সূত্রে যা পেলেন তা ছিল একটি ফলের বাগান এবং গম পিষার জন্য একটি যাঁতাকল। অন্যান্য জিনিষপত্র থাকলেও এ দু’টি ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পিতার বিরহে বাগানের দেখা-শুনা ও পরিচর্যার ভার উনার কাছে অর্পিত হয়। তিনি নিবিড় ও গভীরভাবে সেই বাগানের কাজ দেখা-শুনা করেন। আর যারা বাগানে কাজ-কর্ম করেন কাজের ফাঁকে তাদেরকে তা’লীম-তরবিয়ত দান করেন। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মা’রিফাত-মুহব্বত হাছিলের জন্য তারগীব বা উৎসাহ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য যে, ওলীআল্লাহগণ ছোট-বড় প্রত্যেক কাজই গভীর মনোযোগের সাথে গুরুত্ব সহকারে করেন। আর সাধারণ লোক গুরুত্বহীন ও অমনোযোগের সাথে করে থাকে। এটাই ওলীআল্লাহ এবং সাধারণ লোকের মাঝে বিশেষ পার্থক্য সূচিত করে।
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রতিনিয়ত সেই বাগান পরিচর্যায় লিপ্ত। হঠাৎ একদিন হযরত ইবরাহীম কান্দুজী রহমতুল্লাহি আলাইহি নামীয় একজন মহান ব্যক্তিত্ব সেই বাগানে তাশরীফ নিলেন। সুলত্বানুল হিন্দ, হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে দেখে অত্যন্ত তা’যীম-তাকরীম করতঃ একটি ছায়াদার গাছের নিচে বসতে দিলেন। বাগান থেকে ভালো দেখে কিছু আঙ্গুর ফল, সাথে আরো অনেক ফল-ফলাদি নিয়ে এসে অত্যন্ত খুশি মনে উনার খিদমত মুবারকে পেশ করলেন। সেই বুযূর্গ ব্যক্তিত্ব তিনি সেগুলো খেলেন। সেখান থেকে কিছু অংশ চিবিয়ে নরম করে সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুখ মুবারকে দিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্যন্ত মুহব্বত ও তা’যীম-তাকরীমের সাথে তা খেলেন।
অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, সেই বুযূর্গ ব্যক্তিত্ব হযরত ইবরাহীম কান্দুজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার থলে থেকে কিছু খাবার বের করে চিবিয়ে নরম করে সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুখ মুবারকে দিলেন। তিনি অত্যন্ত মুহব্বত ও আদব-ইহতিরামের সাথে তা খেয়ে ফেললেন। সেই খাবার ভিতরে প্রবেশ করার সাথে সাথে সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশেষ হাল ও জজবা পয়দা হলো। উনার অবস্থার পরিবর্তন হলো। উনার সাথে দুনিয়ার সম্পর্ক ছিন্ন হলো। ফলে আঙ্গুরের বাগান, যাঁতাকলসহ যা কিছু ছিল তিনি সবগুলি বিক্রি করে নিজের জন্য যৎসামান্য রেখে সমুদয় মূল্য গরীব, দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মা’রিফত-মুহব্বত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক হাছিলের জন্য বাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়লেন। তারপর সমরকন্দ গিয়ে ইলমে তাফসীর, ইলমে হাদীছ, ইলমে ফিক্বাহ, ইলমে কালাম, ইলমে বালাগাত, ইলমে মানতেকসহ সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার সমস্ত ইলিম শিক্ষা করলেন। মাত্র সাড়ে সাত বছরে যাহিরী সকল ইলম মুবারক উনার বিশেষ বুৎপত্তি অর্জন করেন। (মাশায়িখে চিশত-১৯৪) (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)