ঘটনা থেকে শিক্ষা
সুন্নত মুবারক পালনে কোন হীনম্মন্যতা নয়, বরং সব পরিবেশেই দৃঢ়চিত্ত থাকতে হবে
, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনি বলেন-
اَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ
অর্থাৎ কাফেরদের প্রতি কঠোর। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلْحَقُّ يَنْطِقُ عَلَى لِسَانِ عُمَرَ.
অর্থ: স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম উনার জবানে কথা বলেন।
সেই হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খেলাফতকালে জেরুজালেম তথা বায়তুল মোকাদ্দাস ইহুদীদের হাত থেকে মুক্ত করেন মুসলিম সেনাপতি বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবূ উবায়দাহ্ ইবনুল জাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
বায়তুল মোকাদ্দাস বিজয়ের পর তিনি আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট এই বলে চিঠি লিখেন যে, বায়তুল মোকাদ্দাস ইহুদী কবল থেকে মুক্ত হয়েছে, তবে তাদের ইচ্ছা- বায়তুল মোকাদ্দাসের চাবি আমীরুল মু’মিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন উনার হাতে হস্তান্তর করবে। সুতরাং অনুগ্রহপূর্বক আপনি জেরুজালেমে আসুন।
চিঠি পেয়ে আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি নিজ সঙ্গী-সাথীদেরকে নিয়ে জেরুজালেমের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন।
উল্লেখ আছে যে, তখন আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পরিধানে নতুন কোন বস্ত্র ছিলনা। বরং উনার পরিধানে যে বস্ত্রটি ছিল, তন্মধ্যে তের থেকে চৌদ্দটি পট্টি ছিল, তার মধ্যে একটি পট্টি ছিল চামড়ার। জনৈক ব্যক্তি বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনার পরিধেয় পট্টিযুক্ত বস্ত্রটি পরিবর্তন করে নিলে ভাল হতো। জবাবে আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন-
نَحْنُ قَوْمٌ اَعَزَّنَا اللهُ باِلْاِسْلَامِ.
অর্থ: আমরা তো এমন সম্প্রদায়, যাদেরকে আল্লাহ্ পাক ইসলামের দ্বারা সম্মাণিত করেছেন।
কাজেই আমাকে এরূপ অবস্থায়ই যেতে দাও। আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ফারুক্বে আযম আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত অবস্থাতেই জেরুজালেম গিয়ে পৌঁছলেন। যখন তিনি জেরুজালেম পৌঁছলেন, তখন তিনি ছিলেন উটের লাগাম ধরা অবস্থায় যমীনে, আর উনার খাদেম ছিলেন উটের উপর সাওয়ার অবস্থায়। ইহুদীরা তাওরাত কিতাব খুলে তার বর্ণনার সাথে সব মিলাচ্ছিল। যখন দেখলো, তাওরাত কিতাবের বর্ণনার সাথে সব মিলে যায়, তখন তারা আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট বায়তুল মোকাদ্দাসের চাবি হস্তান্তর করলো। চাবি হস্তান্তরের পর ইহুদীরা আরজ করলো- হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি এতদূর থেকে এসেছেন, আপনার সম্মানার্থে আমরা ইসলামী কায়দায় কিছু মেহমানদারীর ব্যবস্থা করতে চাই, যদি আপনি সম্মতি প্রকাশ করেন। সম্মতি পেয়ে ইহুদীরা মেহমানদারীর ব্যবস্থা করলো।
আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সকলকে নিয়ে যথাসময়ে সেখানে উপস্থিত হলেন। উনার সম্মুখে চামড়ার (সুন্নতী) দস্তরখানা বিছিয়ে দেয়া হলো এবং তাতে রুটি ও একটি পাত্রে গোশ্ত দেয়া হলো। আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি দস্তরখানা থেকে রুটি নিয়ে গোশ্ত দিয়ে খেলেন, খাওয়া শেষে দস্তরখানায় পড়ে থাকা রুটির টুকরাগুলো টুকিয়ে টুকিয়ে অর্থাৎ দস্তরখানা পরিস্কার করে খাচ্ছিলেন। এটা দেখে জনৈক ব্যক্তি বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! এখানে অনেক রাজা-বাদশা, আমীর-ওমরা উপস্থিত, আপনি যদি তাদের সম্মুখে এরূপভাবে রুটির টুকরা টুকিয়ে টুকিয়ে খান, তবে কেমন দেখা যায়! জবাবে আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম বলেন-
اَاَتْرُكُ سُنَّةَ حَبِيْبِىْ لِاَجْلِ هَذِهِ الْحُمَقَاءِ.
অর্থ: “আমি কি এসকল আহমকদের (রাজা-বাদশাদের) জন্য আমার হাবীব (সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার সুন্নতকে পরিহার করবো। ” সুবহানাল্লাহ্! অর্থাৎ খাওয়ার পর দস্তরখানা বা প্লেট পরিস্কার করে খাওয়া “সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ” আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সেই সুন্নত মুবারক যথাযথ পালন করেছেন। তিনি সব অবস্থায়, সব পরিবেশে, সব কিছুর উপর সুন্নতকে প্রাধান্য দিয়েছেন বা দিতেন। উক্ত ঐতিহাসিক ঘটনায় তা বেমেছালভাবে ফুটে উঠেছে। সুবহানাল্লাহ!
-মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ থেকে সংকলিত।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বাম দিক থেকে শুরু করা হলেও যে আমলগুলো মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ওযূর একটি মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক অনিচ্ছাকৃত তরক করায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সতর্কতা মুবারক
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ঘুমানোর মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নতী তারতীব মুবারক - ২
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ঘুমানোর মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নতী তারতীব মুবারক -১
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হাত ও পায়ের নখ কাটার মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেসব দিনে গোসল করা ও গোসলে কি কি ব্যবহার করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
চিকিৎসা গ্রহণ করা খাছ সুন্নত মুবারক (২)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
চিকিৎসা গ্রহণ করা খাছ সুন্নত মুবারক (১)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (৫)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (৪)
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (৩)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












