সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ
সুওয়াল: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইন্তিকাল দিবস হচ্ছে দুঃখের দিন। আর দুঃখের দিনে খুশি প্রকাশ করাটা অন্যায়।” এ বক্তব্য কতটুকু পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফসম্মত? দয়া করে জানাবেন।
১২ই শরীফ কি দুঃখের দিন?
, ০৬ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৪ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৭ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ উনাদের শানে ইন্তিকালের হুকুম:
হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারক সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَلْاَنْبِيَاءُ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ اَحْيَاءٌ فِىْ قُبُوْرِهِمْ.
অর্থ: “হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনারা উনাদের রওজা শরীফে জীবিত রয়েছেন।” (দায়লামী শরীফ)
মূলতঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ, পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ এবং উনাদের বিশেষ ঘটনা সংঘটিত হওয়ার দিনসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ দিনসমূহের অন্তর্ভুক্ত এবং এ দিনসমূহে উম্মতকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য অর্থাৎ পালন করার বা ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য পবিত্র কুরআন শরীফে সূরা ইবরাহীম শরীফ উনার ৫নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আদেশ মুবারক করা হয়েছে। কেননা এ দিনসমূহে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে খাছ রহমত, বরকত, সাকীনা, শান্তি বর্ষিত হয়। সুবহানাল্লাহ!
যেমন, এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَمُوْتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا.
অর্থ: “হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম উনার প্রতি সালাম (শান্তি) যে দিন তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেছেন এবং যেদিন তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করবেন এবং যেদিন পুনরুত্থিত হবেন।” (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)
অনুরূপ হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনার সম্পর্কে উনার নিজের বক্তব্য মুবারক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدْتُّ وَيَوْمَ أَمُوْتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا.
অর্থ: “আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করি, যেদিন আমি বিছাল শরীফ গ্রহণ করি এবং যেদিন পুণরুত্থিত হব।” (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
حَيَاتِىْ خَيْرٌ لَّكُمْ وَمَمَاتِىْ خَيْرٌ لَّكُمْ.
অর্থ: “আমার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করা এবং পবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান মুবারক করা (ইহকাল ও পরকাল) সব অবস্থাই তোমাদের জন্য কল্যাণ ও খায়ের বরকতের কারণ।” (কানযুল উম্মাল শরীফ)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فِيْهِ خُلِقَ آدَمُ وَفِيْهِ قُبِضَ.
অর্থ: “তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে জুমুয়ার দিন, ঐ দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি সৃষ্টি হয়েছেন এবং ঐ দিনেই তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন।” (নাসাঈ শরীফ)
অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّ هٰذَا يَوْمُ عِيْدٍ جَعَلَهُ اللهُ لِلْمُسْلِمِيْنَ.
অর্থ: “এই জুমুয়ার দিন হচ্ছে ঈদের দিন। এদিনকে মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।” (ইবনে মাজাহ্, মুসনাদে আহমদ শরীফ)
সুতরাং বুঝা গেলো যে, জুমুয়ার দিনটি মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত আবুল বাশার আদম ছফীউল্লাহ্ আলাইহিস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের দিন হওয়া সত্ত্বেও মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজেই সে দিনটিকে খুশির দিন হিসেবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তাহলে কি মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যায় করলেন? নাউযুবিল্লাহ!
আর মহান আল্লাহ পাক উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজেই জুমুয়ার দিনকে খুশির দিন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি এ ঘোষণা দিয়ে অন্যায় করলেন? নাউযুবিল্লাহ!
উল্লেখ্য, সুওয়ালে বিবৃত বক্তব্য মুতাবিক বুঝা যাচ্ছে যে, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিছাল শরীফ উনার দিন খুশি প্রকাশ করা অন্যায়মূলক কাজ; তাহলে তাদের ভাষায় বলতে হয় যে, “মহান আল্লাহ্ পাক স্বয়ং তিনি নিজেই হযরত আবুল বাশার আদম আলাইহিস সালাম উনার বিছাল শরীফ গ্রহণের দিন (জুমুয়ার দিন) খুশির দিন হিসেবে নির্দিষ্ট করে আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই নির্দিষ্ট দিন খুশির দিন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে অন্যায় করেছেন?” নাউযুবিল্লাহ!
এ আক্বীদা যদি কোন ব্যক্তি বা মুসলমান পোষণ করে তবে সে কাট্টা কাফির হয়ে চির জাহান্নামী হবে। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমন, বিদায়, পুনরুত্থান প্রত্যেকটিই রহমত, বরকত ও সাকীনার কারণ।
অতএব, অন্যান্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিলাদত শরীফ, বিছাল শরীফ এক কথায় সবকিছুই যেখানে রহমত, বরকত, সাকীনার দ্বারা পরিপূর্ণ সেখানে যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়টি তো বলার অপেক্ষা রাখেনা। (চলবে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ ছবি তোলা এবং ছবি সংরক্ষণ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গঃ ঘরের কাজে আহালের ভূমিকা
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ : নামাযের পর ঘুরে বসা
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সুওয়াল : নামাজে পুরুষ ও মেয়েদের হাত বাঁধার সুন্নত তরীক্বা কি?
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রসঙ্গ: মৃত ব্যক্তিকে দেখানো
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সুওয়াল-জাওয়াব
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: আহলিয়া বা স্ত্রীকে তালাক দেয়া
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রসঙ্গ: ইন্তেকালের পর পরিত্যক্ত সম্পত্তি বণ্টন
২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)