সুওয়াল-জাওয়াব
সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলমে গইব সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বার লোকেরা বিভিন্ন প্রকার চু-চেরা করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দলীল সহকারে জাওয়াব প্রদান করলে ঈমান-আক্বীদা হিফাযতে সহায়ক হবে।
, ০৬ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২১ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৫ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো অবশ্যই ইলমে গইব মুবারকের অধিকারী। এমনকি উনার যারা উম্মতের অন্তর্ভুক্ত অন্য সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা এবং মনোনীত হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও ইলমে গইব মুবারকের অধিকারী।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহের দ্বারাই প্রমাণিত যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ইলমে গইব মুবারকের অধিকারী।
এ প্রসঙ্গে যিনি খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা জিন শরীফ উনার ২৬ ও ২৭ নং পবিত্র আয়াত শরীফের মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلٰى غَيْبِهِ اَحَدًا اِلَّا مَنِ ارْتَضٰى مِنْ رَّسُولٍ
অর্থ: তিনি (মহান আল্লাহ পাক) আলিমুল গইব, তিনি উনার ইলমে গইব উনার মনোনীত রসূল ব্যতীত কারো নিকট প্রকাশ করেন না। অর্থাৎ হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে তিনি ইলমে গইব হাদিয়া করেছেন।
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে খাযিন ও তাফসীরে বাগবী ” কিতাবের মধ্যে উল্লেখ আছে যে-
يَعْنِى اِلَّا مَنْ يَّصْطَفِيْهِ لِرَسَالَتِهِ وَنُبُوَّتِهِ فَيُظْهِرُهُ عَلَى مَا يَشَاءُ مِنَ الْغَيْبِ حَتَّى يَسْتَدِلَّ عَلَى نُبُوَّتِهِ مِمَّا يُخْبِرُ بِهِ مِنَ الْـمُغَيَّبَاتِ
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে উনার সম্মানিত নুবুওওয়াত ও সম্মানিত রিসালাত উনার জন্য মনোনীত করেন, উনাকে যতখানি ইচ্ছা ইলমে গইব হাদিয়া করেন। উনার ইলমে গইব উনার সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারকের প্রমাণ স্বরূপ এবং উনার সম্মানিত মু’জিযা মুবারকও বটে। শাব্দিক কিছু পার্থক্যসহ অনুরূপ ব্যাখ্যা তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে জালালাইন, তাফসীরে সাবী ও তাফসীরে আযীযীতেও উল্লেখ আছে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ উনার ১৭৯নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا كَانَ اللّٰهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلٰكِنَّ اللّٰهَ يَجْتَبِىْ مِنْ رُّسُلِهِ مَنْ يَّشَاءُ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার দায়িত্ব নয় যে, গইব সম্পর্কে তোমাদের (সাধারণ লোকদের) অবহিত করবেন। তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল হিসেবে যাদেরকে মনোনীত করেছেন উনাদেরকে ইলমে গইব হাদিয়া করেন।
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত ও মশহূর তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে জালালাইন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-
وَلَكِنَّ اللهَ يَجْتَبِىْ وَيَخْتَارُ مَنْ يَّشَاءُ فَيُطْلِعَ عَلَى غَيْبِهِ كَذَا اَطْلَعَ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى حَالِ الْمُنَافِقِيْنَ.
অর্থ: তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে (রসূল হিসেবে) মনোনীত করেন, উনাকে ইলমে গইব হাদিয়া করেন। যেমন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুনাফিকদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল।
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার উক্তরূপ ব্যাখ্যা তাফসীরে বাইযাবী, তাফসীরে খাযিন, তাফসীরে কবীর, তাফসীরে জুমাল, তাফসীরে সাবীসহ আরো বহু নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ আছে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আর-রহমান শরীফ উনার ১-৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلرَّحْمٰنُ. عَلَّمَ الْقُرْانَ. خَلَقَ الْإِنْسَانَ. عَلَّمَهُ الْبَيَانَ
অর্থ: দয়াময় মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি ইনসান সৃষ্টি করেছেন এবং উনাকে বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন।
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে খাযিনে উল্লেখ আছে-
قِيْلَ الْـمُرَادُ بِالْاِنْسَانِ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْبَيَانُ يَعْنِى بَيَانَ مَا كَانَ وَمَا يَكُوْنُ لِاَنَّهُ يُنْبِئُ عَنْ خَبْرِ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاَخِرِيْنَ وَعَنْ يَوْمِ الدِّيْنِ
অর্থ: বলা হয়েছে যে, ইনসান দ্বারা উদ্দেশ্য হলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর বয়ান দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, যা ঘটেছে এবং যা ঘটবে, পূর্বাপর সমস্ত কিছুর ইলিম মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে হাদিয়া মুবারক করেছেন। যার কারণে তিনি পূর্ববর্তী-পরবর্তী এবং পরকাল সম্পর্কে সকল গইবি বিষয়ে ইলিম মুবারক অবহিত করেন।
স্মরণীয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো অবশ্যই এমনকি অন্য সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই যে ইলমে গইব মুবারকের অধিকারী ছিলেন তার সুস্পষ্ট প্রমাণ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে। যেমন হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا تَأْكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِي بُيُوتِكُمْ
অর্থ: তোমরা কি খেয়েছ আর কি ঘরে রেখে এসেছ সবই আমি (হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম) তোমাদেরকে বলে দিতে পারি। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৯) (অসমাপ্ত)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সুওয়াল-জাওয়াব
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুওয়াল-জাওয়াব
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ ছবি তোলা এবং ছবি সংরক্ষণ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গঃ ঘরের কাজে আহালের ভূমিকা
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ : নামাযের পর ঘুরে বসা
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সুওয়াল : নামাজে পুরুষ ও মেয়েদের হাত বাঁধার সুন্নত তরীক্বা কি?
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রসঙ্গ: মৃত ব্যক্তিকে দেখানো
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সুওয়াল-জাওয়াব
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)