সুওয়াল-জাওয়াব
সুওয়াল: জনৈক মাওলানা ছাহিব বলেছে যে, নামাযের ক্বাযা আছে, কিন্তু কাফফারা নেই। এ বিষয়ে দলীলভিত্তিক জাওয়াব জানতে বাসনা রাখি।
প্রসঙ্গ: নামাযের মাসায়িল
, ১৮ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৫ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ০৪ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ১৯ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
ক্বিল্লতে ইলম ক্বিল্লতে ফাহম অর্থাৎ কম জ্ঞান কম বুঝই হচ্ছে ফিতনা সৃষ্টির কারণ। আর ফিতনা সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَلْفِتْنَةُ اَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ.
অর্থ: ফিতনা হচ্ছে কতল অপেক্ষা বড় গুনাহ। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯১)
আর না জেনে কোন মাসয়ালা বললে বা মাসয়ালার জাওয়াব প্রদান করলে তার অপরাধ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
مَنْ اُفْتِىَ بِغَيْرِ عِلْمٍ كَانَ اِثْمُهٗ عَلٰى مَنْ اَفْتَاهُ.
অর্থ: যাকে ইলম ছাড়াই (ভুল) ফতওয়া দেয়া হয়েছে (ভুল ফতওয়া আমল করার কারণে) তার যত গুনাহ হবে তা ফতওয়াদাতার উপর বর্তাবে। (মিশকাত শরীফ)
মূলতঃ যে মাওলানা মুফতী ছাহিবের তাকওয়া-পরহেযগারিতা নেই এমন মুফতী মাওলানারাই মনগড়া, ভুল ফতওয়া দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে থাকে।
এ শ্রেণীর মাওলানা-মুফতী, আলিম-উলামা নামধারী ব্যক্তির থেকে দূরে থাকার জন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِىْ اٰخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُوْنَ كَذَّابُوْنَ يَأْتُوْنَكُمْ مِنَ الْاَحَادِيْثِ بِمَا لَـمْ تَسْمَعُوْا اَنْتُمْ وَلَا اٰبَاؤُكُمْ فَاِيَّاكُمْ وَاِيَّاهُمْ لَا يُضِلُّوْنَكُمْ وَلَا يُفْتِنُوْنَكُمْ.
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা বলবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও কখনো শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবেই তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফিতনায় ফেলতে পারবেনা। ” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফখানা মূলত আলিম নামধারী ব্যক্তিদের সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক হয়েছে। এখানে তাদেরকে দাজ্জালে কাযযাব অর্থাৎ চরম মিথ্যাবাদী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু অন্য বর্ণনায় তাদেরকে উলামায়ে ‘সূ’ অর্থাৎ নিকৃষ্ট আলিম, শাররাশ শাররি অর্থাৎ সৃষ্টির নিকৃষ্টতর প্রাণী বলা হয়েছে এবং আরো বলা হয়েছে যে, তাদের আবাসস্থল জাহান্নামের সর্বনিকৃষ্টতম স্থান জুব্বুল হুযনে। নাউযুবিল্লাহ!
অতএব, সুওয়ালে উল্লেখিত মাওলানা উলামায়ে ‘সূ’দেরই অন্তর্ভুক্ত। এদের থেকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মাসয়ালা-মাসায়িল জানা বা গ্রহণ করা জায়িয নেই।
ছহীহ মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ هٰذَا الْعِلْمَ دِيْنٌ فَانْظُرُوْا عَمَّنْ تَأْخُذُوْنَ دِيْنَكُمْ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই (পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ) উনাদের ইলমই হচ্ছে দ্বীন। অতঃপর তোমরা লক্ষ্য করো কার নিকট থেকে দ্বীন গ্রহণ করছো। ” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অতএব, যাকে তাকে অনুসরণ করা, যার তার নিকট ইলম শিক্ষা করা, মাসয়ালা জিজ্ঞেস করা বা তা গ্রহণ করা জায়িয নেই। এটা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মুবারক নির্দেশ। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَاسْئَلُوْا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ.
অর্থ: তোমাদের কোন বিষয় জানা না থাকলে যাঁরা আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালা উনাদেরকে জিজ্ঞেস করে তা জেনে নাও। (পবিত্র সূরা নহল শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩)
যিনি আল্লাহওয়ালা উনার দায়িত্ব হচ্ছে জিজ্ঞাসিত বিষয়ের সঠিক জাওয়াব প্রদান করা। এ লক্ষ্যেই যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার মধ্যে সঠিক এবং দলীলভিত্তিক জাওয়াব প্রদান করা হয়।
কাজেই, সুওয়ালে উল্লেখিত নামাযের কাফফারা সম্পর্কে জনৈক মাওলানা যে মাসয়ালা দিয়েছে তা মোটেও শুদ্ধ হয়নি। তা হানাফী মাযহাবের সম্পূর্ণ বিপরীত হয়েছে। কেননা হানাফী মাযহাব মতে নামাযের যেরূপ ক্বাযা রয়েছে তদ্রুপ কাফফারও রয়েছে। নামাযের ক্বাযার বিষয়টি যেমনিভাবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে ঠিক তেমনি নামাযের কাফফারার বিষয়টিও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনার দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ لَا يُصَلِّىْ اَحَدٌ مِّنْ اَحَدٍ وَلَا يَصُوْمُ اَحَدٌ مِّنْ اَحَدٍ وَلٰكِنْ يُطْعِمُ عَنْهُ مَكَانَ كُلِّ يَوْمٍ مُدًّا مِّنْ حِنْطَةٍ.
অর্থ: রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একজন আরেকজনের পক্ষ থেকে নামায আদায় করবে না এবং একজন আরেকজনের পক্ষ থেকে রোযা রাখবে না। বরং প্রতিদিনের (রোযার) পরিবর্তে তার পক্ষ থেকে এক মুদ করে গম খাদ্য হিসেবে প্রদান করবে। (নাসায়ী শরীফ) (চলবে............)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সুওয়াল-জাওয়াব
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুওয়াল-জাওয়াব
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ ছবি তোলা এবং ছবি সংরক্ষণ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গঃ ঘরের কাজে আহালের ভূমিকা
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ : নামাযের পর ঘুরে বসা
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ মূর্তি-ভাস্কর্য দ্বীন ইসলামে নিষিদ্ধ
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সুওয়াল : নামাজে পুরুষ ও মেয়েদের হাত বাঁধার সুন্নত তরীক্বা কি?
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রসঙ্গ: মৃত ব্যক্তিকে দেখানো
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সুওয়াল-জাওয়াব
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)