সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬১)
, ০১ লা জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৭ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ০৪ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৯ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
“কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য যেহেতু মান্য করা ফরয, সেহেতু বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য মেনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন”
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফেৎনায় ফেলতে পারবে না। ” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ.
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোঁকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
সাত. পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতুল মি’রাজ এবং লাইলাতুল বরাত মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সুনির্দিষ্ট একক রাত। যা সমগ্র বিশ্বের সকল মানুষের জন্য একই রাতে সংঘটিত হয়। কিন্তু বিশে^র বিভিন্ন জনগোষ্ঠির জন্য বিভিন্ন দিন এ রাতগুলো নির্ধারণ করার ফলে এ সকল রাতের ফযীলত থেকে দেশবাসীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। যখন সংবাদ পৌঁছেনি তখন স্থানীয় চাঁদ দেখার ভিত্তিতে এসব পর্ব পালন ওজর হিসেবে যুক্তিযুক্ত ছিল। কিন্তু বর্তমানে সে ওজর নেই।
আট. মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি এ কুরআন শরীফ উনাকে ক্বদরের রাতে নাযিল করেছি। পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর আল কুরআন শরীফ ঘোষিত মর্যাদাপূর্ণ একটি রাত। যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। বাংলাদেশে একদিন পর রোযা শুরু করায় এ দেশবাসী কখনই ক্বদরের রাত পান না। কারণ সমগ্র বিশে^ যেদিন বেজোড় রাত বাংলাদেশে সে দিন জোড় রাত। তাদের বেজোড় রাত হিসাবে ক্বদর হলে আমরা কখনই ক্বদরের রাত পেতে পারি না। কারণ এ রাত তো একটিই। যা অঞ্চলের ভিন্নতায় কয়েক রাত মেনে নেয়া হাস্যকর বৈকি?
নয়. পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন মু’মিনের ঈমান তাজা করার একটি বড় পর্ব। প্রিয় নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা মুর্কারমায় এ ধরাধামে তাশরীফ আনেন তাই মক্কা মুর্কারমার হিসাব অনুযায়ী ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উদযাপন করাই যুক্তিযুক্ত। বর্তমানে সমগ্র বিশে^ জানতে পারে কবে ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, কবে ২৭শে রজব মে’রাজ শরীফ। যদি বাংলাদেশের হিসেবে দিবসগুলো পালন করা হয় তাহলে সঠিক তারিখ না হয়ে ১দিন বা ২দিন পরে উদযাপন করতে হচ্ছে। যা আদৌ কাম্য নয়।
জাওয়াব: সারাবিশ্বে একই দিনে কোন ইবাদত বন্দেগী করা কখনোই সম্ভব নয়। তা আমরা ইতি পূর্বেই অকাট্যভাবে প্রমাণ করে দিয়েছি। উদয়স্থলের ভিন্নতার কারণে দূরবর্তী অঞ্চলের তারিখ, বার ও দিনের ভিন্নতানুযায়ী পবিত্র রোযা, পবিত্র ঈদসহ অন্যান্য সকল ইবাদত বন্দেগী করাই ফরয, যেমন সারাবিশ্বে সকলে ভিন্ন ওয়াক্তে ও দিনে পবিত্র ছলাত আদায় করে থাকে। তাও আমরা ইতিপূর্বে প্রমাণ করে দিয়েছি। উদয়স্থলের ভিন্নতা অনুযায়ী সারাবিশ্বে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও পবিত্র রোযা শুরু করার আমলটি বিগত চৌদ্দশত বৎসর ধরেই সারাবিশ্বে এভাবেই চলে আসছে। সুতরাং, মাহবুব উরফে মাকযূব এর উল্লেখিত দাবিগুলি মিথ্যা, বানোয়াট, ধোঁকাবাজি ও কুফরী এবং মুনাফিক্বী ছাড়া অন্য কিছু নয়।
মাহবুব উক্ত বইয়ের ৬২ পৃষ্ঠায় লিখেছে-
চন্দ্র মাসের ১ম তারিখের নতুন চাঁদ সব সময় মক্কা শরীফ ও তার পাশর্^বর্তী অঞ্চল হতেই সর্বপ্রথম দৃশ্যমান হবে। কেননা, আয়াতে কা’বা গৃহের পাশাপাশি “বাক্কা” বা মক্কা শরীফেরও উল্লেখ রয়েছে।
জাওয়াব: এটা তাফসীর বির রায়, তাফসীর বির রায় শয়তানের ওয়াসওয়াসায় হয়, অন্তরে তো তাদের শয়তানই বসা থাকে, আর মুখে মাত্র পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কথা।
বলাবাহুল্য যে, পবিত্র আয়াত শরীফে কা’বা গৃহের পাশাপাশি “বাক্কা” বা মক্কা শরীফেরও কথা উল্লেখ থাকলে চন্দ্র মাসের ১ম তারিখের নতুন চাঁদ সব সময় মক্কা শরীফ ও তার পাশর্^বর্তী অঞ্চল হতেই সর্বপ্রথম দৃশ্যমান হবে এ কথা তাকে ইবলীস ছাড়া কেউ বলে নাই। আর আমরা ইবলীসকে মানি না। কেননা সে মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমন ও শত্রু, সে হিসাবে মাহবুব ও তার চেলারাও মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমন ও শত্রু। মূলতঃ তার উক্ত অপব্যাখ্যা যেমন বাস্তবতা বহির্ভূত, তেমনি তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ বিরোধী। কেননা, পবিত্র কা’বা শরীফ উনার পশ্চিমে অনেক দেশ রয়েছে, উক্ত দেশসমূহ থেকে শুরু করে পৃথিবীর যে কোন দেশ স্বাভাবিকভাবে সৌদি আরবের আগে নতুন চাঁদ দেখতে পারে। কাজেই সর্বপ্রথম চাঁদ দেখাকে কা’বা শরীফ উনার সাথে শর্ত বা দাবি করাটা বরাবরের মতো মাহবুবের চরম অজ্ঞতা ও মিথ্যাচারের বহিঃপ্রকাশ। চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বর্তমান এই পরিস্থিতিতে সমগ্র দেশবাসীর জন্য যা আবশ্যিকভাবে করণীয়
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৪)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৫)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (২৭)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে হবে
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তাওয়াক্কুল তথা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ভরসা করার ফযীলত
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
“সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)