সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬০)
, ১৯ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৫ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ২৩ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ০৭ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফেৎনায় ফেলতে পারবে না।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ.
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোঁকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
তিন. বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় প্রতিদিনই এক দেশ থেকে অন্য দেশে বহুলোক যাতায়াত করছে। এ ধারাবাহিকতায় মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে রোযা শুরু করে বাংলাদেশে এসে ঈদ করলে ঐ ব্যক্তির রোযা ৩১ বা ৩২টি হওয়ার সম্ভাবনা। আবার বাংলাদেশে এসে রোযা শুরু করে অন্য দেশে গিয়ে ঈদ করলে ঐ ব্যক্তির রোযা ২৭টি বা ২৮টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, আরবী মাস ২৯ এর কমে হবে না এবং ৩০ এর বেশি হবে না। ...কিন্তু একক চন্দ্র তারিখ অনুসরণ করলে এ রকম কোন সমস্যা হবে না।
জাওয়াব: প্রথমত: সারাবিশ্বে মূলত: একদিনের সময়ের বেশি পার্থক্য নাই। তাসত্ত্বেও দুইদিনের পার্থক্য দেখানো এটা মাহবুব উরফে মাকযূব এর অজ্ঞতা। আর একদিনের পার্থক্যের কারণে উল্লেখিত সমস্যার সমাধান বিগত চৌদ্দশত বৎসর ধরেই বিভিন্ন ফিক্বহের কিতাবে তার স্পষ্ট সমাধান বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং মাহবুব উরফে মাকযূব এর অজ্ঞতা ও মিথ্যাচারিতার প্রমাণ পড়তে পড়তে পাঠক যেমন ক্লান্ত, তেমনি লেখকের অবস্থাও।
দ্বিতীয়ত: একক চন্দ্র তারিখ অনুসরণ করলে এ রকম কোন সমস্যা হবে না। এ কথাও মাহবুব উরফে মাকযূব এর মিথ্যাচারিতা। যা আমরা ইতিপূর্বে প্রমাণ করে দিয়েছি।
মাহবুব উরফে মাকযূব উক্ত বইয়ের ৫৫ পৃষ্ঠায় আরো লিখেছে- উদয়স্থলের ভিন্নতা অনুসারে যদি ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ করা হয়, তাহলে কতিপয় জটিল সমস্যা হবে যার কোন সমাধান নাই।
নিম্নের চার নাম্বার থেকে নয় নাম্বার পর্যন্ত প্রায়ই একই কথা। তাই একটি উত্তরই শেষে দেয়া হলো:
চার. আমাদের দেশে তাকবীরে তাশরীক বলা শুরু হয় এখানকার স্থানীয় ৯ই যিলহজ্জ থেকে। যেদিন সারা পৃথিবীতে ১০ বা ১১ যিলহজ্জ। ফলে সে দিনটি আরাফার দিন তো নয়ই বরং আরাফার দিনের পরের দিন। তাহলে ফলাফল দাঁড়ালো বাংলাদেশের স্থানীয় তারিখ অনুসরণের কারণে আমাদের পাঁচ বা দশ ওয়াক্ত নামাযের ওয়াজিব তাকবীর ছুটে যাচ্ছে। আবার শেষ দিকে গিয়ে এমন এক বা দু’দিন তাকবীর বলছি যখন আমলটির ওয়াজিব আর বাকী থাকে না।
পাঁচ. যে সকল সম্মানিত ভাইয়েরা একাধিক পশু কুরবানী দেন, তাদের অনেকেই বাংলাদেশের স্থানীয়, ১১ বা ১২ই যিলহজ্জ তারিখে কুরবানী দিয়ে থাকেন। কিন্তু কুরআন-সুন্নাহর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঐ সময়ে সারাবিশ্বে ১৩ বা ১৪ই যিলহজ্জ। (যদি চাঁদ দেখায় দু’দিন তারতম্য হয়)। তাহলে ফলাফল দাঁড়ালো তাদের দু’দিনের কুরবানীই বিফলে যাচ্ছে। কারণ কুরবানী করার সময় ১০ থেকে ১২ যিলহজ্জ, ১৩ ও ১৪ই যিলহজ্জ কুরবানী করা যায় না।
ছয়. পবিত্র হাদীছে ঘোষিত মহান পূণ্য লাভের আশায় অগণিত মুসলিম নর-নারী বাংলাদেশের স্থানীয় ৯ই যিলহজ্জ রোযা রাখেন কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো; ওইদিন মক্কা মুয়াজ্জামাসহ সারাবিশ্বে ১০ বা ১১ যিলহজ্জ। অর্থাৎ কোনভাবেই ঐ দিনটি আরাফার দিন নয়। চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)