সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৪৪)
, ০৬ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৫ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ১৩ জুন, ২০২৪ খ্রি:, ৩০ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
“কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য যেহেতু মান্য করা ফরয, সেহেতু বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য মেনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন”
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফেৎনায় ফেলতে পারবে না। ” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ.
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোঁকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
এ কে এম মাহবুব সে তার বইয়ের ৯ পৃষ্ঠায় লিখেছে-
বুখারী শরীফের বিখ্যাত শরাহ ফতহুল বারীতে উল্লেখ করা হয়েছে-
فلايتوقف الحال علي رؤيةكل واحد فلايتقيد بالبلد
“মাস প্রমাণের জন্য এ শর্ত করা যাবে না যে, প্রত্যেক ব্যক্তিকেই চাঁদ দেখতে হবে। আবার এ শর্তও করা যাবে না যে, প্রত্যেক দেশ থেকেই চাঁদ দেখতে হবে। (ফতহুল বারী ৪র্থ খ-, ১৫৪ পৃষ্ঠা)
জাওয়াব: উল্লেখিত ইবারতে সে ইবারতের শেষাংশ فلايتقيد بالبلد এর অর্থ করেছে “আবার এ শর্তও করা যাবে না যে, প্রত্যেক দেশ থেকেই চাঁদ দেখতে হবে”। যা মিথ্যা।
সঠিক অর্থ হলো: নতুন চাঁদ দেখাকে কোন শহরের সাথে নির্দিষ্ট করা যাবে না।
তাহলে, সম্পূর্ণ ইবারতের অর্থ হলো: পবিত্র রোযা শুরু করার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকেই চাঁদ দেখতে হবে এই শর্ত করা যাবে না এবং নতুন চাঁদ দেখাকে কোন শহরের সাথে নির্দিষ্ট করা যাবে না। অর্থাৎ মা’রুফের মতো সেও অর্থ চোর হিসেবে নিজেকে বরাবরের ন্যায় প্রমাণ করলো।
এ কে এম মাহবুব সে তার বইয়ের ৭৯ পৃষ্ঠায় লিখেছে-
বাংলাদেশের জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি একটু আন্তরিক হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করলেই আমাদের দেশেও বিশ্বে সর্বপ্রথম নতুন চাঁদ দেখার তারিখ অনুযায়ী একই দিনে রোযা, ঈদ ও অন্যান্য ইবাদত পালন করা সম্ভব।
জাওয়াব: মাহবুবের উল্লেখিত দাবিটি প্রমাণ করে যে, সে সারাবিশ্বের সময়ের পার্থক্য ও ভৌগলিক দূরত্বের সঠিক অবস্থান সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। কেননা পৃথিবীর ভৌগলিক অবস্থা সম্পর্কে যার নূন্যতম জ্ঞান রযেছে সে উল্লেখিত দাবিটি করতে পারে না।
কেননা, প্রত্যেক অঞ্চলেই সূর্যাস্ত হওয়ার সাথে সাথেই নতুন করে একটি দিন, তারিখ ও বার শুরু হয়। যার কারণে এক অঞ্চলের রাত ও অন্য অঞ্চলের দিন মিলিয়ে ১৫ থেকে ২৪ ঘন্টা সময়ের পার্থক্য থাকায় কখনোও একই দিনে পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযা শুরু করা সম্ভব নয়। তার আলোচনা ও প্রমাণ আমরা পূর্বেই পেশ করেছি। তাছাড়া, সমগ্র পৃথিবীতে সকল দেশেই মুসলমানরা অবস্থান করেন ও বসবাস করেন। সকলের উপরেই পবিত্র রোযা রাখা ও পবিত্র ঈদ পালন করা ফরয-ওয়াজিব। শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র রোযা, ঈদ ও অন্যান্য ইবাদত পালন করা সম্ভব নয়।
এ কে এম মাহবুব সে তার বইয়ের ৯ পৃষ্ঠায় আরো লিখেছে- সারাবিশ্বে পূর্বাপর প্রায় সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণ এ মতের পক্ষে জোড়ালো বক্তব্য রেখেছেন।
জাওয়াব: তার এ কথাটি শুধু মিথ্যা নয় বরং দিবালোকের ন্যায় জঘন্য মিথ্যা। তার প্রমাণ আমরা ইতিপূর্বে “উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে সম্মানিত চার মাযহাবের ইমাম-মুজতাহিদ ও অন্যান্য ফক্বীহগণের সিদ্ধান্ত” উক্ত আলোচনাসহ বিভিন্ন স্থানে অকাট্যভাবে প্রমাণ করে দিয়েছি। চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)