সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৪৩)
, ০৫ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৪ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ১২ জুন, ২০২৪ খ্রি:, ২৯ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
“কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য যেহেতু মান্য করা ফরয, সেহেতু বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য মেনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন”
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফেৎনায় ফেলতে পারবে না। ” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ.
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোঁকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
এ কে এম মাহবুব সে তার বইয়ের ৮ পৃষ্ঠায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মিথ্যা অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে লিখেছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهٗ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَلصَّوْمُ يَوْمَ تَصُوْمُوْنَ وَالْفِطْرُ يَوْمَ تُفْطِرُوْنَ وَالْأَضْحَىْ يَوْمَ تُضَحُّوْنَ.
অর্থ: হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “রোযা হবে একই দিনে, যেদিন তোমরা সকলেই রোযা রাখবে। ঈদ হবে একই দিনে, যেদিন তোমরা সকলেই ঈদ করবে। কুরবানী হবে একই দিনে, যেদিন তোমরা সকলেই কুরবানী করবে। (সুনান আত তিরমিযী, হাদীছ নং ৬৯৭, সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ২৩২৪, সুনানে ইবনু মাজাহ, হাদীছ নং ১৬০৭, সুনানে আল-বায়হাকী ৭৯৯৭, মুছান্নাফু আব্দির রাযযাক্ব ৭৩০৭, দায়লামী ৩৮১৯, দারুকুতনী ৯৫, কানযুল উম্মাল ৮ম খ-, পৃষ্ঠা ৪৮৮, মাজমাঊ ফতওয়া ইবনে বায ১৫ খ-, পৃষ্ঠা ৭৭/৭৮)
জাওয়াব: এ কে এম মাহবুব উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অনুবাদ করেছে একই দিনে। যা চরম মিথ্যা। কেননা, উল্লেখিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ‘একই দিনে’ অর্থ প্রকাশক কোনো আরবী শব্দ উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও রোযা হবে একই দিনে, ঈদ হবে একই দিনে, কুরবানী হবে একই দিনে, এর মধ্যে “একই” কথাটি অতিরিক্ত সংযুক্ত করেছে। যার কারণে প্রমাণিত হলো সে অর্থচোর ও মিথ্যাবাদী।
সঠিক অনুবাদ নিম্নরূপ:
عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهٗ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: اَلصَّوْمُ يَوْمَ تَصُوْمُوْنَ وَالْفِطْرُ يَوْمَ تُفْطِرُوْنَ وَالْأَضْحَىْ يَوْمَ تُضَحُّوْنَ.
অর্থ: হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, পবিত্র রোযার দিনে তোমরা পবিত্র রোযা রাখবে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে তোমরা পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করবে। পবিত্র ঈদুল আদ্বহার দিনে তোমরা পবিত্র ঈদুল আদ্বহা পালন করবে।
উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র ঈদ, পবিত্র রোযা, পবিত্র কুরবানীর বিষয়ে সারাবিশ্বে একই দিনে পালন করার কথা মোটেও বলা হয়নি। বরং উদয়স্থলের ভিন্নতা অনুসারে শহরের প্রত্যেক শহরে অনেক মানুষের উপস্থিতিতে সম্মানিত জামায়াতের সাথে আদায় করার কথা বলা হয়েছে। একই মাতলা’ভুক্ত অঞ্চলে ভিন্ন দিনে আগপিছ করে কেউ যেন আলাদা জামায়াত না করে, এ কথাই বলা হয়েছে। তার প্রমাণ হলো নিম্নোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ فِطْرُ كُلِّ بَلْدَةٍ يَوْمَ يُفْطِرُ جَمَاعَتُهُمْ وَأَضْحَىْ كُلِّ بَلْدَةٍ يَوْمَ يُضَحِّيْ جَمَاعَتُهُمْ.
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রত্যেক শহরবাসী ঐদিন পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করবে যে দিন উক্ত শহরের সকলে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করে। প্রত্যেক শহরবাসী ঐদিন পবিত্র ঈদুল আদ্বহা পালন করবে যে দিন উক্ত শহরের সকলেই পবিত্র ঈদুল আদ্বহা পালন করে। (আল মাজমূউ শরহুল মুহাযযাব ৭/৩৩৮, আল ইখতিয়ারু লি তা’লীলিল মুখতার) চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল কায়িনাত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করা ও তা’যীমার্থে ক্বিয়াম শরীফ করা সুন্নত হওয়ার অকাট্য প্রমাণ
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে রজম বা ছঙ্গেছারের বিধান (৩)
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মর্যাদা-মর্তবা ও ফযীলত মুবারক প্রসঙ্গে (৩৭)
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কর্তব্য কাজে দৃঢ়তা এনে দেয় সন্তুষ্টি ও নিয়ামত
১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
উলামায়ে সূ’ ধর্ম ব্যবসায়ীদের পরিচিতি ও হাক্বীক্বত (৪)
১২ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
১২ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১২ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)