সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৩৪)
, ২৯ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১০ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৯, মে, ২০২৪ খ্রি:, ৩০ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
“কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য যেহেতু মান্য করা ফরয, সেহেতু বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য মেনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন”
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফেৎনায় ফেলতে পারবে না। ” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
আল-মা’রুফ সে তার “আল-হেলাল” বইয়ে হযরত কুরাইব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ সম্পর্কে যে সকল মিথ্যাচারিতা করেছে তার কতিপয় প্রমাণ ও সঠিক জবাব নিম্নরূপ:
“আল-হেলাল” বইয়ের ৯ পৃষ্ঠায় লিখেছে যে, তিরমিযীর বর্ণনায় রয়েছে- ‘তুমি বিষ্যুদবার দিবাগত রাত্রে দেখেছ? আমি উত্তর করলাম, লোকেরা দেখেছে। (এখানে নিজে দেখার স্বীকৃতি নাই)
জাওয়াব: তিরমিযী শরীফে বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফ উনার শুরুতেই স্পষ্ট করে হযরত কুরাইব রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
فَرَاَيْتُ الْهِلَالَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ
অর্থ: অতঃপর আমি পবিত্র জুমুয়ার রাত্রে নতুন চাঁদ দেখেছি।
তারপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কখন নতুন চাঁদ দেখেছেন? হযরত কুরাইব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জবাব দিলেন-
فَقُلْتُ رَاَيْنَاهُ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ
অর্থ: হযরত কুরাইব রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমরা পবিত্র জুমুয়ার রাত্রে নতুন চাঁদ দেখেছি।
অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন-
فَقَالَ اَنْتَ رَاَيْتَهٗ ؟ فَقُلْتُ: نَعَمْ وَرَآهُ النَّاسُ
অর্থ: আপনি কি নিজ চোখেই চাঁদ দেখেছেন? আমি আবারো জাওয়াবে বললাম- হ্যাঁ, এমনকি অন্যান্য মানুষেরাও নতুন চাঁদ দেখেছেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফে উল্লেখিত আমি নতুন চাঁদ দেখেছি, আমরা নতুন চাঁদ দেখেছি, আপনি কি নিজ চোখে চাঁদ দেখেছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ।
তিরমিযী শরীফে বর্ণিত উল্লেখিত ¯পষ্ট ও পরিষ্কার শব্দ ও বাক্যগুলি দ্বারা হযরত কুরাইব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজ চোখে চাঁদ দেখা সাব্যস্ত ও প্রমাণিত হওয়ার পরেও আল-মা’রুফ এর দাবি তিনি নিজে দেখার স্বীকৃতি নাই। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিষয়ে তার উল্লেখিত মিথ্যাচার ও ধোঁকাবাজির দ্বারা সে মুরতাদ হয়ে গেছে।
কেননা, এই মিথ্যাচারিতা সে শুধু হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত কুরাইব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের প্রতিই করে নাই। বরং সে এই জঘন্য মিথ্যাচারিতা স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতিও করেছে। যেহেতু উক্ত হাদীছ শরীফে উল্লেখ রয়েছে-
هٰكَذَا اَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
আর এ ধরনের মিথ্যাচারিতা মুনাফিক ছাড়া কোন মুসলমান করতে পারে না।
উক্ত বইয়ের ৯ পৃষ্ঠায় সে লিখেছে যে-
জ্ঞানী পাঠকবৃন্দ, বাহ্যতঃ এ হাদীছটি প্রমাণ করে যে, এক দেশের দেখা দিয়ে অন্যদেশের কাজ চলবে না। এজন্য শাফেয়ী মাযহাবে এ হাদীছটিকে তাদের মতের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেন। কিন্তু অন্য তিনটি মাযহাবের ইমামগণ এ হাদীছটিকে নানা কারণে গ্রহণ করেননি।
জাওয়াব: মা’রুফের দাবি “অন্য তিনটি মাযহাবের ইমামগণ এ হাদীছটিকে নানা কারণে গ্রহণ করেননি” এটাও তার চরম মিথ্যা কথা। আমরা ইতি পূর্বে প্রমাণ করে দিয়েছি যে, সম্মানিত চার মাযহাবের সকল ইমাম মুজতাহিদগণ উনারা উক্ত হাদীছ শরীফকে ছহীহ মেনে উদয়স্থলের ভিন্নতানুযায়ী আজীবন রোযা রেখেছেন ও পবিত্র ঈদ করেছেন। চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)