সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৩৩)
, ২৭ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৮ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৭, মে, ২০২৪ খ্রি:, ২৪ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
“কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য যেহেতু মান্য করা ফরয, সেহেতু বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য মেনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন”
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফেৎনায় ফেলতে পারবে না। ” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
* ৩য় কিতাব (মারাকিউল ফালাহ শরহে নূরুল ঈযাহ):
আল-ফক্বীহুল মিছরী হযরত শায়েখ আবুল ইখলাছ হাসান বিন আম্মার বিন আলী শরম্বলালী মিছরী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ: ১০৬৯ হিজরী) তিনি স্বীয় ‘মারাকিউল ফালাহ শরহে নূরুল ঈযাহ’ নামক মশহূর ও গ্রহণযোগ্য ফিকাহ্’র কিতাবের রোযা অধ্যায়ে লিখেন-
(واذا ثبت) الهلال (فى) بلدة و(مطلع قُطْر) ها (لزم سائر الناس فى ظاهر المذهب وعليه الفتوى)
সঠিক অর্থ: ‘নতুন চাঁদ দেখা, (যখন প্রমাণিত হবে) কোনো শহরে (মধ্যে) ও (কোনো অঞ্চল বা ভূখ-ের উদয়স্থলে) তখন সেই অঞ্চলের (সকল মানুষের জন্য তার অনুসরণ করা ওয়াজিব হবে। এর উপরই ফতওয়া)। ’
‘মারাকিউল ফালাহ’ কিতাবের মত ‘নূরুল ঈযাহ’ উনার ইবারত হলো-
واذا ثبت فى مطلع قُطْر لزم سائر الناس فى ظاهر المذهب وعليه الفتوى واكثر المشائخ.
সঠিক অর্থ: কোনো অঞ্চল বা ভূখ-ের উদয়স্থলে যখন নতুন চাঁদ দেখা প্রমাণিত হবে তখন হানাফী মাযহাবের প্রকাশ্য মতানুযায়ী সকল মানুষের জন্য তার অনুসরণ করা ওয়াজিব হবে। এর উপরই ফতওয়া। অধিকাংশ মাশায়িখ বা ফক্বীহ উনাদের অভিমতও এমনটিই। ’
আল-মা’রূফ লিখেছে-
اذا ثبت الهلال فى بلد لزم سائر الناس
যে কোনো একটি দেশে নতুন চাঁদ উদয় প্রমাণিত হলে বিশ্বের সকল মানুষের উপর তার অনুসরণ করা জরুরী হয়ে পরে।
আমাদের পর্যালোচনা ও জাওয়াব:
(১) মারাকিউল ফালাহ শরহে নূরুল ঈযাহ কিতাবের ইবারতের মধ্যে ثبت শব্দের পরالهلال (فى) بلدة و(مطلع قُطْر) ها বাক্যাংশটি উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আল-মা’রূফ উক্ত ইবারতাংশ উনার পরিবর্তে উক্ত স্থানে শুধু الهلال فى بلد ইবারতাংশটি লিখেছে। এতে দেখা যাচ্ছে যে, সে ইবারত থেকে و(مطلع قُطْر) ها অংশটি বাদ দিয়েছে। যার অর্থ হলো “ও (কোনো অঞ্চল বা ভূখ-ের উদয়স্থলে)। এ অংশটুকু বাদ দিয়ে সে সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র রোযা ও ঈদাঈন পালন করার দলীল ছাবিত করতে চেয়েছে। বাদ দেয়ার কারণ হলো, এ শব্দটি ইবারতে থাকলে তো সারাবিশ্বে অর্থ করা যায় না। তাই সে ইবারতের মূল অংশটিই বাদ দিয়ে জালিয়াতী করেছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, আল-মা’রূফ একজন ইবারত হেরফেরকারী, ইবারতচোর ও জালিয়াত।
উল্লেখ্য যে, قُطْر শব্দটির শাব্দিক অর্থই হলো নির্দিষ্ট অঞ্চল বা এলাকা।
(২) আব্দুল্লাহ আল-মা’রূফ سائر الناس বাক্যাংশের অনুবাদ করেছে ‘বিশ্বের সকল মানুষের উপর যা চরম মিথ্যা।
কেননা উল্লেখিত ইবারতে ‘বিশ্ব’ বা ‘পৃথিবী’ অর্থ প্রকাশক কোনো আরবী শব্দ উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও “বিশ্বের সকল মানুষের উপর” এর মধ্যে “বিশ্বের” কথাটি অতিরিক্ত সংযুক্ত করেছে। যার কারণে প্রমাণিত হলো সে অর্থচোর ও মিথ্যাবাদী।
এভাবে সে অন্যান্য ইবারত গুলিতেও মিথ্যাচার, প্রতারণা, অর্থচোরী ও ধোকাবাজী করে সারা বিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযা শুরু করার পক্ষে প্রমাণ করতে চেয়েছে।
উল্লেখ্য যে, এই ধরনের প্রতারণা, ধোঁকাবাজী, ইবারত ও অর্থ চুরি করা। এটা যে তার ভুল হয়েছে এমনটা নয়। বরং ইহুদী-খৃষ্টান, মুশরিক ও যাবতীয় বিধর্মীদের এজেন্ট হয়ে সরলপ্রাণ মু’মিন-মুসলমানদের পবিত্র রোযা, পবিত্র ঈদাঈন, পবিত্র হজ্জ ও যাবতীয় চাঁদ সংশ্লিষ্ট ইবাদত নষ্ট করার জন্যই এমন জালিয়াতীমূলক ফতওয়া লিখতে সাহস করেছে। যে ফতওয়ার কোনো দালীলিক ভিত্তিই নেই। চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সকল কাফিররাই মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৫)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৪)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)