সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (২৯)
, ২১ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
“কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য যেহেতু মান্য করা ফরয, সেহেতু বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য মেনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন”
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবে না।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
বি:দ্র: কোন কোন কিতাবে রয়েছে, কোন শহরে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে তা আহলে মাশরিক ও মাগরিব সকলের উপরে চাঁদ দেখার একই হুকুম বর্তাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, তখনকার যুগে আহলে মাশরিক বলতে বর্তমান আফগানিস্তান, খোরাসান, ইরান, গজনী প্রভৃতি অঞ্চলকে এবং আহলে-মাগরিব বলতে মরক্কো স্পেন প্রভৃতি অঞ্চলকে বুঝানো হতো। সুতরাং আহলে মাশরিক ও আহলে মাগরিব দ্বারা সারা পৃথিবীকে বুঝানো সঠিক নয়।
যেমন, এই বিষয়ে হযরত আব্দুল করীম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে হামদ আল খদ্বীর হাম্বলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
وإذا رؤي الهلال في المشرق لزم أهل المغرب الصيام أو العكس وهذا القول مبني على القول باتحاد المطالع
অর্থ: পূর্বাঞ্চলে নতুন চাঁদ দেখা গেলে পশ্চিমাঞ্চলেও রোযা রাখা ফরয হয়ে যাবে অথবা পশ্চিমাঞ্চলে নতুন চাঁদ দেখা গেলে পূর্বাঞ্চলেও রোযা রাখা ফরয হবে এ কথার ভিত্তি হলো একই মাত্বলা’ বা উদয়স্থলের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলসমূহের উপর। (মুহিম্মাতুন শরহু কিতাবিস সিয়াম ৮ পৃষ্ঠা)
তাছাড়া আমরা অকাট্যভাবে প্রমাণ করেছি যে, একই সময় তো দূরের কথা সারা বিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও পবিত্র রোযা শুরু করা কোন দিনই সম্ভব নয়। কেননা, সারা বিশ্বে ১৫ থেকে ২৪ ঘন্টার চেয়েও বেশি সময়ের পার্থক্য রয়েছে। এক স্থানে রাত হলে অন্য স্থানে দিন থাকে।
বলাবাহুল্য যে, মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর যমীনে কোন দিনই একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও পবিত্র রোযা শুরু করা হয় নাই। ভবিষ্যতেও কোন দিন হবে না। সুতরাং সারা বিশ্বে একই দিন দাবি একটি অবান্তর, অযৌক্তিক, আক্বল-সমঝের হীনতা, চরম অজ্ঞতা ও হাস্যকর দাবি।
তাদের মিথ্যাচারিতা ও ধোকাবাজির কতিপয় প্রমাণ ও জবাব নিম্নরূপ:
সারা বিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযা শুরু করার দাবিকারীদের এক গুরু “আব্দুল্লাহ আল-মা’রূফ শাহ আলম” কর্তৃক লিখিত মিথ্যাচারে পরিপূর্ণ ‘আল-হেলাল’ নামক বইয়ে যে সকল ধোকাবাজী ও প্রতারণা করেছে তার কতিপয়ের হাক্বীক্বত ফাঁস করা হলো-
আব্দুল্লাহ আল-মা’রূফ তার উক্ত ‘আল-হেলাল’ নামক বইয়ের ২ পৃষ্ঠায় বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে ইবারত কাটছাট করে একসাথে করে কতিপয় ইবারত উল্লেখ করেছে। উক্ত ইবারতগুলিতে যেমন ইহুদীদের কথিত আলিমদের মত শব্দের হেরফের করেছে, তদ্রুপ উক্ত ইবারতগুলির অর্থ করার ক্ষেত্রেও মিথ্যা অর্থ করেছে। আর মিথ্যা দাবি করেছে যে, ইহাই নাকি সারাবিশ্বে একইদিনে পবিত্র রোযা ও ঈদ করার স্বপক্ষে সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। নাঊযুবিল্লাহ!
তা হলো:
اذا ثبت الهلال فى بلد لزم سائر الناس (১)
যে কোন একটি দেশে নতুন চাঁদ উদয় প্রমাণিত হলে বিশ্বের সকল মানুষের উপর তার অনুসরণ করা জরুরী হয়ে পড়ে। (১)
আল-মা’রূফ যে সকল সর্বজনমান্য, নির্ভরযোগ্য ও বিশ্ববিখ্যাত কিতাবগুলোকে দলীল হিসেবে পেশ করেছে তা নিম্নরূপ:
১ নং ইবারতের স্বপক্ষে কিতাব: আল-মুখতার’ ১ম খ-: ১২৯ পৃষ্ঠা/ফতহুল কাদীর (শরহে ফাত্হুল কাদীরসহ) ১ম খ-: পৃষ্ঠা ২৪৩/মারাকীউল ফালাহ’ পৃষ্ঠা ৫৪০-৫৪১/আল্-বাহরুর রায়েক ২য় খ- পৃষ্ঠা ২৯০
জালিয়াতী ও কারচুপিমূলক বিকৃতি ইবারতের দলীল ভিত্তিক সঠিক জাওয়াব:
আল-মা’রূফের উল্লেখ করা (১) নম্বর ধোকাবাজীমূলক ইবারত ও তার মিথ্যা অনুবাদ নিম্নরূপ:
اذا ثبت الهلال فى بلد لزم سائر الناس
যে কোনো একটি দেশে নতুন চাঁদ উদয় প্রমাণিত হলে বিশ্বের সকল মানুষের উপর তার অনুসরণ করা জরুরী হয়ে পড়ে।’ নাঊযুবিল্লাহ!
অত্র কারচুপিমূলক ও জোড়াতালিযুক্ত ইবারতটির প্রমাণস্বরূপ সে ‘আল-মুখতার, ফতহুল ক্বদীর, মারাকিউল ফালাহ ও আল-বাহরুর রায়িক’ এই ৪টি ফিক্হ ও ফতওয়ার কিতাবের নাম উল্লেখ করেছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো: উক্ত ইবারত হুবহু ঐভাবে প্রথম তিনটি কিতাবের কোথাও নেই। এবং তার চাইতে আশ্চর্যের বিষয় হলো: চতুর্থ কিতাব ‘আল-বাহরুর রায়িক’-এ উক্ত ইবারতখানা মোটেও উল্লেখ নাই।
চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)