সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (২১)
, ১১ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৩ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ২২ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ০৮ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সারা বিশ্বে একই দিনে পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে এবং পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে, এমন কথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোথাও বলা হয় নাই। এমনকি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাসহ চার মাযহাব উনার এমন একজন ইমাম মুজতাহিদ কেউই এমন কথা বলেন নাই যে “সারা বিশ্বে একই সাথে বা একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে ও পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে”। কেউ কেউ নতুন চন্দ্রের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য নয়, এ কথা বললেও তারও ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু উক্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে কোন ইমাম মুজতাহিদ উনারা কখনো এমন ফতওয়া দেন নাই যে, সারা বিশ্বে একই সাথে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে ও পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে। যা কোন কালেই সংঘটিত হয় নাই এবং তা কোন দিনই সম্ভব নয়।
যদি প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীর সকল মানুষকে যদি বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়, তাহলে পবিত্র ঈদের দিনে কোন মানুষ কি ভিন্ন দিনে ঈদ করবে? তখন সকলেই বলবে, না। পবিত্র রোযা শুরু করার বিষয়টিও তদ্রুপ।
মোটকথা, কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য হয়। আর বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য হয়।
পূর্বে প্রকাশিতের পর.........
সারা বিশে^ ভিন্ন ভিন্ন দিনে মাকরূহ সময় মানতে বাধ্য হয়েও যারা পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযা পালন করতে দিনের ভিন্নতাকে মানে না তারা সময়কে নাসীকারী অর্থাৎ তারা মুনাফিক ও মুরতাদ:
পবিত্র পাঁচ ওয়াক্ত ছলাত উনার মাকরূহ সময়ের আগমন ও প্রস্থানের দ্বারাও নতুন চাঁদ উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য হওয়া অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়। সূর্য উদিত হওয়ার সময় পবিত্র ছলাত আদায় করা হারাম, কারণ ঐ সময় শয়তান সূর্যের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, তখন সূর্যপূজারী মুশরিকরা সূর্যকে সিজদা করতে থাকে। মাকরূহ সময় সারা পৃথিবীতে একই সময় আসে না বরং উদয়স্থলের পার্থক্য অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল বা শহরে ভিন্ন সময়ে এবং ভিন্ন দিনে এসে থাকে। ফলে সারা বিশে^ মাকরূহ সময়টি একই সময় আসেনা বরং ভিন্ন দিনে আসে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ عَنْ أَبِي عَبْدِ اللَّهِ الصُّنَابِحِيِّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ الشَّمْسَ تَطْلُعُ بَيْنَ قَرْنَيِ الشَّيْطَانِ أَوْ قَالَ يَطْلُعُ مَعَهَا قَرْنَا الشَّيْطَانِ فَإِذَا ارْتَفَعَتْ فَارَقَهَا فَإِذَا كَانَتْ فِي وَسَطِ السَّمَاءِ قَارَنَهَا فَإِذَا دَلَكَتْ أَوْ قَالَ زَالَتْ فَارَقَهَا فَإِذَا دَنَتْ لِلْغُرُوبِ قَارَنَهَا فَإِذَا غَرَبَتْ فَارَقَهَا فَلَا تُصَلُّوا هَذِهِ السَّاعَاتِ الثَّلَاثَ
অর্থ: হযরত আত্বা ইবনে ইয়াসার রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি হযরত আবূ আব্দুল্লাহ সুনাবিহ্হি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের উপর উদিত হয়। অথবা বলেছেন, সূর্যের সাথে শয়তানের দুই শিং উদিত হয়। যখন উদিত হয়ে যায়, তখন শয়তান বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যখন সূর্য আসমানের মাঝ বরাবর অর্থাৎ মাথার উপর আসে তখন সূর্যের সাথে মিলিত হয়। যখন তা পশ্চিমে ঢলে পড়ে তখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যখন অস্ত যাওয়ার নিকটবর্তী হয় তখন মিলিত হয় এবং অস্ত হয়ে গেলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা এই তিন সময় পবিত্র ছলাত আদায় করবে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ ১/৩৯৭)
عَن حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَا يَتَحَرَّى أَحَدُكُمُ الصَّلَاةَ طُلُوْعَ الشَّمْسِ وَلَا غُرُوبَهَا فَإِنَّهَا تَطْلُعُ بَيْنَ قَرْنَيِ الشَّيْطَانِ
অর্থ: হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের কেউ যেন সূর্য উদয়ের সময় ও সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় পবিত্র ছলাত আদায় না করে। কেননা, সূর্য উদয় হয় এবং অস্ত যায় শয়তানের দুই শিংয়ের উপর। (মুসনাদে আহমদ শরীফ)
উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহের ব্যাখ্যায় উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য প্রমাণে বলা হয়েছে-
فَإِذَا طَلَعَتِ الشَّمْسُ فَأَمْسِكْ عَنِ الصَّلَاة فَإِنَّهَا تَطْلُعُ بَيْنَ قَرْنَي الشَّيْطَانِ- رَوَاهُ مُسلِمٌ
فالتعريفُ محمول على أن الشيطان ينتصب نفسه والتنكير على أنه يولِّي كل شيطان من أعوانه على حسب اختلاف المطالع في البلدان-
অর্থ: মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সূর্য উদয়ের সময় পবিত্র ছলাত আদায় করা থেকে বিরত থাকো কেননা, শয়তানের দুই শিংয়ের উপর সূর্য উদয় হয়। (মুসলিম শরীফ)
সুতরাং জানা গেল যে, উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা যা উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে তা হলো, নিশ্চয়ই শয়তান নিজেকে সূর্যোদয়ের সময় সূর্যের সামনে দাঁড় করায় এবং পৃথিবীর অন্যান্য শহরসমূহের “উদয়স্থলের ভিন্নতা অনুসারে” সূর্যের সামনে দাঁড়ানোর জন্য শয়তান তার সাহায্যকারী অন্যান্য শয়তানদের কর্তৃত্ব দেয়। (লুময়াতুত তানক্বীহ ফী মিশকাতিল মাছাবীহ ২/৩৩৮)
والتنكير تنبيه على أن الشيطان يباشر هذا الأمر بنفسه ويوليه كل شيطان مريد من أعوانه على حسب اختلاف المطالع في البلدان، والوقت المنهى عنه للصلاة يختلف على حسب ذلك الاختلاف
অর্থ: শয়তানের সূর্যের সাথে উদিত হওয়া, এটার দ্বারা এ কথা অবহিত করা হয়েছে যে, নিশ্চয়ই শয়তান উক্ত কাজটি সে নিজেই নিজেই শুরু করে এবং “সূর্যোদয়ের ভিন্নতা অনুসারে” পৃথিবীর অন্যান্য শহরসমূহে তার সাহায্যকারী অন্যান্য দুষ্ট শয়তানদের সে উক্ত কাজের দায়িত্ব দেয়। (আল মুয়াসসারু ফী শরহি মাছাবীহিস সুন্নাহ লিত-তুরবুশতী ১/১৭৯)
সুতরাং মাকরূহ সময় যেমন সারা পৃথিবীতে একই সময়ে ও একই দিনে আসে না তদ্রুপ পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযা শুরুর বিষয়টিও সারাবিশে^ একই দিনে বা একই সময়ে আসে না। চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সকল কাফিররাই মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৫)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৪)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)