সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (২০)
, ০৮ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২০ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ১৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ০৫ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সারা বিশ্বে একই দিনে পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে এবং পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে, এমন কথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোথাও বলা হয় নাই। এমনকি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাসহ চার মাযহাব উনার এমন একজন ইমাম মুজতাহিদ কেউই এমন কথা বলেন নাই যে “সারা বিশ্বে একই সাথে বা একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে ও পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে”। কেউ কেউ নতুন চন্দ্রের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য নয়, এ কথা বললেও তারও ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু উক্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে কোন ইমাম মুজতাহিদ উনারা কখনো এমন ফতওয়া দেন নাই যে, সারা বিশ্বে একই সাথে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে ও পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে। যা কোন কালেই সংঘটিত হয় নাই এবং তা কোন দিনই সম্ভব নয়।
যদি প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীর সকল মানুষকে যদি বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়, তাহলে পবিত্র ঈদের দিনে কোন মানুষ কি ভিন্ন দিনে ঈদ করবে? তখন সকলেই বলবে, না। পবিত্র রোযা শুরু করার বিষয়টিও তদ্রুপ।
মোটকথা, কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য হয়। আর বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য হয়।
পূর্বে প্রকাশিতের পর.........
আর মূর্খতাবশতঃ সৌদি আরব কেন্দ্রিক রোযা শুরু করলে, কোন কোন অঞ্চলে ইয়াওমুশ শকের দিনেও রোযা রাখতে বাধ্য হবে। নাঊযুবিল্লাহ!
নতুন চাঁদ না দেখে সন্দেহের দিনে রোযা রাখার পরিণতি:
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبي اليَقَظَانِ عَمَّارِ بن يَاسِرٍ رَضِيَ اللهُ تعالي عَنْهُ قَالَ مَنْ صَامَ اليَوْمَ الَّذِي يُشَكُّ فِيهِ فَقَدْ عَصَى أَبَا القَاسِمِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: হযরত আবুল ইয়াক্বাযান আম্মার ইবনে ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি সন্দেহের দিনে ছিয়াম (রোযা) রাখলো, সে অবশ্যই হযরত আবুল ক্বাসিম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাফরমানী করলো। (আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনু মাজাহ শরীফ, দারিমী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ مَالِك رحمة الله عليه أَنَّهُ سَمِعَ أَهْلَ الْعِلْمِ يَنْهَوْنَ أَنْ يُصَامَ الْيَوْمُ الَّذِي يُشَكُّ فِيهِ مِنْ شَعْبَانَ إِذَا نَوَى بِهِ صِيَامَ رَمَضَانَ وَيَرَوْنَ أَنَّ عَلَى مَنْ صَامَهُ عَلَى غَيْرِ رُؤْيَةٍ ثُمَّ جَاءَ الثَّبْتُ أَنَّهُ مِنْ رَمَضَانَ أَنَّ عَلَيْهِ قَضَاءَهُ وَلَا يَرَوْنَ بِصِيَامِهِ تَطَوُّعًا بَأْسًا قَالَ مَالِك وَهَذَا الْأَمْرُ عِنْدَنَا وَالَّذِي أَدْرَكْتُ عَلَيْهِ أَهْلَ الْعِلْمِ بِبَلَدِنَا
অর্থ: হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই তিনি আহলে ইলিম উনাদেরকে ইয়াওমুশ শক বা যেই দিনে সন্দেহ হয়, সেই দিনে রোযা রাখতে নিষেধ করতে শুনেছেন। উনারা ফায়ছালা দিয়েছেন যে, যদি কোন ব্যক্তি সন্দেহের দিনে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের নতুন চাঁদ না দেখে রোযা শুরু করে, অতঃপর সেই দিন রমাদ্বান শরীফ বলে প্রমাণিত হয়, তার উপর সেই রোযার ক্বাযা ওয়াজিব হবে। তবে (সন্দেহের দিনে) নফল রোযা রাখতে উনারা কোন দোষ মনে করেন না। হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মাসয়ালা আমাদের নিকট এইরূপই এবং আমি এর উপর আমাদের শহরের আহলে ইলিমকে একমতাবলম্বী পেয়েছি। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)
قوت المغتذي على جامع الترمذي
কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে-
حَدِيثُ عَمَّارٍ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَالعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ أَكْثَرِ أَهْلِ العِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَنْ بَعْدَهُمْ مِنَ التَّابِعِينَ وَبِهِ يَقُولُ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ وَمَالِكُ بْنُ أَنَسٍ وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ المُبَارَك وَالشَّافِعِيُّ وَأَحْمَدُ وَإِسْحَاقُ كَرِهُوا أَنْ يَصُومَ الرَّجُلُ اليَوْمَ الَّذِي يُشَكُّ فِيهِ وَرَأَى أَكْثَرُهُمْ إِنْ صَامَهُ فَكَانَ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ أَنْ يَقْضِيَ يَوْمًا مَكَانَهُ
অর্থ: হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফাখানা হাদীছে হাসান, এই পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুযায়ী অধিকাংশ আহলে ইলিমগণ আমল করেছেন, উনাদের মধ্যে যারা রয়েছেন উনারা হলেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, উনাদের পরে হযরত তাবেয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এ ব্যাপারে অনুরূপ কথা বলেছেন। উনাদের কয়েকজন হলেন, হযরত ছুফিয়ান ছাওরী, হযরত মালিক ইবনে আনাস, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক, হযরত ইমাম শাফেয়ী, হযরত ইমাম আহমদ, হযরত ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহিম। কোন লোক উক্ত সন্দেহের দিনে রোযা রাখাকে উনারা মাকরূহে তাহরীমী বলেছেন। এবং উনাদের অধিকাংশই বলেছেন যে, যে ব্যক্তি সন্দেহের দিনে রোযা রেখেছে, অতঃপর সেই দিন পবিত্র রমাদ্বান শরীফ বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে তার স্থানে একটি রোযা ক্বাযা করতে হবে।
شرح كتاب الصيام من سنن الترمذي কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে-
نقل عن أبي حنيفة بأنه قال لا يجوز صومه أي صوم يوم الشك عن فرض رمضان ويجوز عما سوى ذلك
অর্থ: এ ব্যাপারে ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, উক্ত দিনে রোযা রাখা জায়েয নাই, অর্থাৎ সন্দেহের দিনে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের ফরয রোযা রাখা জায়েয নাই। এছাড়া অন্য যে কোন রোযা রাখা জায়েয আছে।
চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সকল কাফিররাই মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৫)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৪)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)