সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (১৯)
, ০৫ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৭ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ০২ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সারা বিশ্বে একই দিনে পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে এবং পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে, এমন কথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোথাও বলা হয় নাই। এমনকি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাসহ চার মাযহাব উনার এমন একজন ইমাম মুজতাহিদ কেউই এমন কথা বলেন নাই যে “সারা বিশ্বে একই সাথে বা একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে ও পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে”। কেউ কেউ নতুন চন্দ্রের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য নয়, এ কথা বললেও তারও ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু উক্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে কোন ইমাম মুজতাহিদ উনারা কখনো এমন ফতওয়া দেন নাই যে, সারা বিশ্বে একই সাথে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে ও পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে। যা কোন কালেই সংঘটিত হয় নাই এবং তা কোন দিনই সম্ভব নয়।
পূর্বে প্রকাশিতের পর.........
যদি প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীর সকল মানুষকে যদি বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়, তাহলে পবিত্র ঈদের দিনে কোন মানুষ কি ভিন্ন দিনে ঈদ করবে? তখন সকলেই বলবে, না। পবিত্র রোযা শুরু করার বিষয়টিও তদ্রুপ।
মোটকথা, কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য হয়। আর বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য হয়।
উল্লেখ্য যে, পবিত্র দ্বীন ইসলামে যদি সারা বিশ্বে একই দিনে রোযা রাখা জায়েয হতো, তাহলে পৃথিবীতে কখনো ইয়াওমুশ শক বা সন্দেহের দিন নামে কোন দিন থাকত না এবং পবিত্র হাদীছ শরীফেও ইয়াওমুশ শক বা সন্দেহের দিনের বিভিন্ন হুকুম আহকাম বর্ণনা করা হতো না।
ইয়াওমুশ শক এর পরিচয় ও হুকুম:
يَوْمُ الشَّكّ বা সন্দেহের দিন বলা হয়: পবিত্র শা’বান মাসের ২৯ তারিখ দিবাগত সন্ধায় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে চাঁদ দেখা না গেলে উক্ত ৩০ তারিখকে يَوْمُ الشَّكّ (ইয়াওমুশ শক) বা সন্দেহের দিন বলা হয়। অর্থাৎ পবিত্র শা’বান মাসের ২৯ তারিখ দিবাগত সন্ধায় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে এই দিনটি কি পবিত্র শা’বান মাসের শেষ দিন, নাকি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের প্রথম দিন, এই সন্দেহের কারণেই উক্ত ৩০ তারিখকে يَوْمُ الشَّكّ (ইয়াওমুশ শক) বা সন্দেহের দিন হিসেবে ধরা হয়।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে يَوْمُ الشَّكّ (ইয়াওমুশ শক) বা সন্দেহের দিনের ব্যাপারে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا الْعِدَّةَ ثَلاَثِينَ
অর্থ: অতঃপর যদি তোমাদের নিকট আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তোমরা মাসের ত্রিশ সংখ্যা পূর্ণ করো। (বুখারী শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, সুনানে দারা কুত্বনী শরীফ, সুনানে বাইহাক্বী শরীফ, মু’জামুল কাবীর লিত্ব-ত্ববারানী শরীফ, ছহীহ ইবনে হাব্বান, মা’রিফাতুস সুনান)
ইয়াওমুশ শক দ্বারাও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, পরস্পর বেশি দূরবর্তী স্থানে নতুন চাঁদ দেখার ভিন্নতা গ্রহণ করা ফরয:
সারা বিশ্বে একই দিনে পবিত্র রোযা শুরু করা যদি কখনো সম্ভব হতো তাহলে ইয়াওমুশ শক-এর হুকুম আহকাম পালন করতে, সারা বিশ্বে একই দিনে পৃথিবীর সকল স্থানে আকাশ ঘোলাটে বা মেঘাচ্ছন্ন হওয়া আবশ্যক হতো। অথচ পৃথিবীর সকল অঞ্চলে বা স্থানে একই দিনে কখনো আকাশ ঘোলাটে বা মেঘাচ্ছন্ন হয় না ও থাকে না। বরং কোন না কোন অঞ্চলে বা দেশে আকাশ অবশ্যই পরিষ্কার থাকে। আর আকাশ পরিষ্কার থাকলে, তখন আর يَوْمُ الشَّكّ (ইয়াওমুশ শক) বা সন্দেহের দিন বলা হয় না। (অন্যদিকে ইয়াওমুশ শকের জন্যও সারা বিশে^র সকল দেশের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১৫ থেকে ২৪ ঘন্টা অর্থাৎ এক দিনেরও বেশি)
কাজেই, ইয়াওমুশ শক অর্থই হলো আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে চাঁদ না দেখতে পাওয়া। তাই পৃথিবীর কোন স্থানে যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে এবং পবিত্র শা’বান মাসের ২৯ তারিখ দিবাগত সন্ধ্যায় আকাশে নতুন চাঁদ দেখা না যায়, তাহলে উক্ত দিবসটি পবিত্র শা’বান মাসের ৩০তম দিন হিসেবেই গণ্য হবে। আর তখন দেখা যাবে সারা বিশ্বে কখনো يَوْمُ الشَّكّ (ইয়াওমুশ শক) বা সন্দেহের দিন বলে, কোন দিনের অস্তিত্ব থাকবে না এবং পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত সন্দেহের দিনের নির্দেশও পালিত হবে না। নাঊযুবিল্লাহ!
যেহেতু সূর্যাস্ত তথা মাগরিবের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে নতুন একটি তারিখ, দিন ও বার শুরু হয়ে যাওয়ার কারণে সারা বিশে^ যেমন একই দিন মিলানো অসম্ভব, তেমনি সারা বিশে^ একই দিনে ইয়াওমুশ শক হওয়াও একেবারেই অসম্ভব। সাথে সাথে তেমনি সারা বিশে^ একই দিনে পবিত্র রোযা শুরু করা ও পবিত্র ঈদ পালন করার দাবি করা আশাদ্দুদ দরজার মূর্খতা।
চলবে.......
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সকল কাফিররাই মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৫)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৪)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)