সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (১৬)
, ২৮ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১১ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ১০ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ২৬ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সারা বিশ্বে একই দিনে পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে এবং পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে, এমন কথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোথাও বলা হয় নাই। এমনকি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাসহ চার মাযহাব উনার এমন একজন ইমাম মুজতাহিদ কেউই এমন কথা বলেন নাই যে “সারা বিশ্বে একই সাথে বা একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে ও পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে”। কেউ কেউ নতুন চন্দ্রের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য নয়, এ কথা বললেও তারও ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু উক্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে কোন ইমাম মুজতাহিদ উনারা কখনো এমন ফতওয়া দেন নাই যে, সারা বিশ্বে একই সাথে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে ও পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে। যা কোন কালেই সংঘটিত হয় নাই এবং তা কোন দিনই সম্ভব নয়।
পূর্বে প্রকাশিতের পর.........
হযরত ইমাম আলী ইবনে আবী বকর ইবনে আব্দিল জলীল আল ফারাগানী আল মারগিনানী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ: ৫৯৩ হিজরী শরীফ) তিনি বলেন-
هذا إذا كان بين البلدين تقارب بحيث لا تختلف المطالع فإن كان يختلف لا يلزم أحد البلدين حكم الآخر
অর্থাৎ ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ বক্তব্য দুটি শহরের নিকটবর্তী মাত্বলা’ তথা উদয়স্থলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যে দুই শহরে উদয়স্থলের ভিন্ন হয় না। যদি উদয়স্থল ভিন্ন হয়, তাহলে এক শহরের মাত্বলা’র হুকুম অপর শহরের মাত্বলা’র উপর প্রযোজ্য হবে না। (আততাজনিছু ওয়াল মাজিদ ২/৪২৩, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বৈরুত)
হযরত শায়েখ খলীল আহমদ সাহারানপূরী আল হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ: ১৩৪৬ হিজরী শরীফ) তিনি বলেন-
)أفلا تكتفي برؤبة معاوية وصيامه قال لا هكذا أمرنا رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ(
وهذا الحديث حجة لمن قال باعتبار اختلاف المطالع فلا يلزم الصوم برؤية أهل بلد على أهل بلد آخر
অর্থ: (হযরত কুরাইব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে প্রশ্ন করলেন যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চাঁদ দেখা এবং পবিত্র রোযা রাখা কি আপনার জন্য যথেষ্ট নয়? তিনি জবাব দিলেন না, যথেষ্ট নয়। এইরূপ আমল করতেই মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।)
যারা বলেন মাত্বলা’ তথা চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণ করা আবশ্যক; তাদের দলীল হিসেবে উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানাই যথেষ্ট। সুতরাং এক শহরের মাত্বলা’ বাসীদের চাঁদ দেখার দ্বারা অন্য শহরের মাত্বলা’ বাসীদের জন্য রোযা রাখা আবশ্যক নয়। (বযলুল মাজহুদ ফী হাল্লি সুনানী আবী দাঊদ ৮/৪৬৩)
হযরত মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আশ-শাওকানী আল ইয়ামানী আল-হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ: ১২৫০ হিজরী শরীফ) তিনি বলেন-
أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ لَمْ يَعْمَلْ بِرُؤْيَةِ أَهْلِ الشَّامِ وَقَالَ فِي آخِرِ الْحَدِيثِ هَكَذَا أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَدَلَّ ذَلِكَ عَلَى أَنَّهُ قَدْ حَفِظَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ لَا يَلْزَمُ أَهْلَ بَلَدٍ الْعَمَلُ بِرُؤْيَةِ أَهْلِ بَلَدٍ آخَرَ
অর্থ: নিশ্চয়ই হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শাম অঞ্চলের চাঁদ দেখার সংবাদ পেয়ে তদানুযায়ী আমল করেন নাই। তিনি অত্র হাদীছ শরীফ উনার শেষে বলেছেন, মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে এমন আমল করতেই নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। সুতরাং এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, নিশ্চয়ই তিনি উক্ত নির্দেশ মুবারক স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে মুখস্ত করে রেখেছিলেন যে, এক শহরের মাত্বলা’ বাসীদের নতুন চাঁদ দেখা অন্য শহরের মাত্বলা’ বাসীদের জন্য অনুসরণযোগ্য নয়। (নাইলুল আওতার ৪/২৩০, তুহফাতুল আহওয়াজী ৩/৩০৮)
قال المحققون من الحنفية والمالكية وعامة الشافعية: إن كان بين البلدين مسافة قريبة لا تختلف المطالع لأجلها كبغداد والبصرة مثلاً لزم أهلهما الصوم برؤية الهلال في أحدهما وإن كان بينهما بعد كالعراق والحجاز والشام فلكل أهل بلد رؤيتهم
অর্থ: হযরত হানাফী, মালেকী ও আম শাফেয়ী মুহাক্কিক্বীন উলামাগণ উনাদের সিদ্ধান্ত হলো, যদি দুই শহরের অন্তর্ভুক্ত দুটি মাত্বলা’র দূরত্ব নিকটবর্তী হয় অর্থাৎ এক হয়, তাহলে উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য হবে না। যেমন, বাগদাদ ও বছরা। আর ইরাক, হিজাজ ও শাম অঞ্চলের মত পরস্পর দূরবর্তী মাত্বলা’ বা অঞ্চল হলে প্রত্যেকের নিজস্ব নতুন চাঁদ দেখার ভিন্নতার অনুসরণ করাই আবশ্যক হবে। সুতরাং প্রত্যেক অর্থাৎ অনেক শহরের অন্তর্ভুক্ত মাত্বলা’ বাসীদের ভিন্ন মাত্বলা’ বা নতুন চাঁদ উদয়ের ভিন্ন স্থান রয়েছে। (মিন্নাতুল মুনয়িম ফী শারহি ছহীহ মুসলিম ২/১৫০, মিরয়াতুল মাফাতীহ শরহু মিশকাতিল মাছাবীহ ৬/৪২৬)
فإن اختلاف المطالع معتبر في جميع المسائل عند جميع الأئمة كالزكاة والأضحية وأوقات الصلاة، فالمعتبر عند كل أهل بلد رؤيتهم
অর্থ: সম্মানিত সকল ইমামগণ উনাদের নিকট সমস্ত মাসয়ালা-মাসায়িলের ক্ষেত্রে উদয়স্থলের ভিন্নতা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। যেমন, পবিত্র যাকাত, পবিত্র কুরবানী, পবিত্র ছলাত উনার নির্দিষ্ট সময়। সুতরাং প্রত্যেক অর্থাৎ অনেক শহরের অন্তর্ভুক্ত মাত্বলা’ বাসীদের জন্য তাদের চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে উদয়স্থলের ভিন্নতা রয়েছে। (আল কাওকাবুদ দুররী আলা জামিয়ে’ তিরমিযী ২/৩৩)
চলবে........
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সকল কাফিররাই মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৫)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৪)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)