সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (১৫)
, ২৭ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১০ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ০৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ২৫ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সারা বিশ্বে একই দিনে পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে এবং পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে, এমন কথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোথাও বলা হয় নাই। এমনকি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমসহ চার মাযহাব উনার এমন একজন ইমাম মুজতাহিদ কোথাও কেউ এমন কথা বলেন নাই যে “সারা বিশ্বে একই সাথে বা একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে ও পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে”। কেউ কেউ নতুন চন্দ্রের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য নয়, এ কথা বললেও তারও ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু উক্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে, কোন ইমাম মুজতাহিদ উনারা কখনো এমন ফতওয়া দেন নাই যে, সারা বিশ্বে একই সাথে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে ও পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে। যা কোন কালেই সংঘটিত হয় নাই এবং তা কোন দিনই সম্ভব নয়।
পূর্বে প্রকাশিতের পর.........
হযরত মুহম্মদ আমীন ইবনে উমর ইবনে আব্দুল আযীয আবিদীন আদ দিমাশক্বী শামী আল হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
يُفْهَمُ مِنْ كَلَامِهِمْ فِي كِتَابِ الْحَجِّ أَنَّ اخْتِلَافَ الْمَطَالِعِ فِيهِ مُعْتَبَرٌ فَلَا يَلْزَمُهُمْ شَيْءٌ لَوْ ظَهَرَ أَنَّهُ رُئِيَ فِي بَلْدَةٍ أُخْرَى قَبْلَهُمْ بِيَوْمٍ وَهَلْ يُقَالُ كَذَلِكَ فِي حَقِّ الْأُضْحِيَّةِ لِغَيْرِ الْحُجَّاجِ؟ لَمْ أَرَهُ وَالظَّاهِرُ نَعَمْ لِأَنَّ اخْتِلَافَ الْمَطَالِعِ إنَّمَا لَمْ يُعْتَبَرْ فِي الصَّوْمِ لِتَعَلُّقِهِ بِمُطْلَقِ الرُّؤْيَةِ، وَهَذَا بِخِلَافِ الْأُضْحِيَّةِ فَالظَّاهِرُ أَنَّهَا كَأَوْقَاتِ الصَّلَوَاتِ يَلْزَمُ كُلَّ قَوْمٍ الْعَمَلُ بِمَا عِنْدَهُمْ فَتُجْزِئُ الْأُضْحِيَّةُ فِي الْيَوْمِ الثَّالِثَ عَشَرَ وَإِنْ كَانَ عَلَى رُؤْيَا غَيْرِهِمْ هُوَ الرَّابِعَ عَشَرَ
অর্থ: পবিত্র হজ্জ উনার অধ্যায়ে উনাদের আলোচনা থেকে জানা গেল যে, নিশ্চয়ই পবিত্র হজ্জ মুবারক আদায়ের ক্ষেত্রে উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য। সুতরাং যদি কোন শহরের মাত্বলা’বাসীগণ (সউদী আরবের) একদিন পূর্বে নতুন চাঁদ দেখে, তাহলে উক্ত মাত্বলা’বাসীগণের নতুন চাঁদ দেখার অনুসরণ করা (সউদী আরবের জন্য) আবশ্যক হবেনা। তাহলে হজ্জ ব্যতিত পবিত্র কুরবানী করার ক্ষেত্রে কি একই হুকুম হবেনা? আমি তো ব্যতিক্রম কিছু দেখিনা। স্পষ্ট দলীল হলো পবিত্র কুরবানী পালনের ক্ষেত্রেও উদয়স্থলের ভিন্নতা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। কেননা, শুধুমাত্র পবিত্র রোযা উনার ক্ষেত্রে মুত্বলাক রু’ইয়া (তথা এক জায়গায় নতুন চাঁদ দেখার দ্বারা সারা বিশ্বে রোযা ফরয হয়ে যাওয়ার) দ্বারা উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য নয়, একথা বলা সরাসরি পবিত্র কুরবানী উনার বিরোধী। সুতরাং স্পষ্ট কথা হলো, নিশ্চয়ই পবিত্র রোযা শুরু করাটা, পবিত্র পাঁচ ওয়াক্ত ছলাত উনার সময়সমূহের মত একই হুকুম। অর্থাৎ প্রত্যেক সম্প্রদায় যেমন তাদের স্থানীয় সময় অনুযায়ী আমল করে থাকে, তদ্রুপ প্রত্যেকের মাত্বলা’ অনুযায়ী আমল করা আবশ্যক। যার কারণে যদি অন্যদের পূর্বে কারো নতুন চাঁদ দেখা প্রমাণিত হয়, তাহলে ১৩ তারিখে তাদের পবিত্র কুরবানীর শেষ দিন হবে। এবং তাদের ১৪ তম তারিখে অন্যদের শেষ দিন হবে, যারা পরে চাঁদ দেখেছেন। (আদ দুররুল মুখতার ওয়া হাশিয়াতু ইবনু আবিদীন ২/৩৯৪)
হযরত ক্বাযী মুহম্মদ ইবনে ফারামূয আল-হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ: ৮৮৫ হিজরী) তিনি বলেন-
إنْ كَانَ بَيْنَهُمَا تَقَارُبٌ بِحَيْثُ لَا تَخْتَلِفُ الْمَطَالِعُ يَجِبُ، وَإِنْ كَانَ بِحَيْثُ تَخْتَلِفُ لَا يَجِبُ وَأَكْثَرُ الْمَشَايِخِ عَلَى أَنَّهُ لَا يُعْتَبَرُ قَالَ الزَّيْلَعِيُّ: وَالْأَشْبَهُ أَنْ يُعْتَبَرَ؛ لِأَنَّ كُلَّ قَوْمٍ مُخَاطَبُونَ بِمَا عِنْدَهُمْ وَانْفِصَالُ الْهِلَالِ عَنْ شُعَاعِ الشَّمْسِ يَخْتَلِفُ بِاخْتِلَافِ الْأَقْطَارِ كَمَا أَنَّ دُخُولَ الْوَقْتِ وَخُرُوجَهُ يَخْتَلِفُ بِاخْتِلَافِهَا أَقُولُ يُؤَيِّدُهُ مَا مَرَّ فِي أَوَّلِ كِتَابِ الصَّلَاةِ أَنَّ صَلَاةَ الْعِشَاءِ وَالْوِتْرِ لَا تَجِبُ لِفَاقِدِ وَقْتِهِمَا
অর্থ: পরস্পর দু’টি নিকটবর্তী অঞ্চল, যাদের উদয়স্থলের কোন ভিন্নতা নাই, এমন অঞ্চলসমূহে এক অঞ্চলের চাঁদ দেখার দ্বারা অন্য অঞ্চলের লোকেদের উপর রোযা রাখা ওয়াজিব হবে। আর যদি একই মাত্বলা’ তথা উদয়স্থলের অন্তর্ভুক্ত না হয়, তাহলে এক অঞ্চলের চাঁদ দেখার দ্বারা অন্য অঞ্চলের লোকদের উপর রোযা রাখা ওয়াজিব হবেনা। হযরত ইমাম যাইলায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উপরোক্ত কথার অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ কথা হলো: চন্দ্র উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য হবে।
কেননা পবিত্র ইবাদত-বন্দেগীর ক্ষেত্রে প্রত্যেক ক্বওম তথা সম্প্রদায়ের লোকেরা যেমনিভাবে তাদের নিজস্ব সময়ের প্রতি সম্বোধিত, তেমনিভাবে মাত্বলা’ তথা সূর্যোদয় ও নতুন চন্দ্র উদয়স্থলের ভিন্নতার কারণে অঞ্চলের ভিন্নতার প্রতিও সম্বোধিত। যেমনটি অঞ্চলের ভিন্নতার কারণে সময়ের শুরু ও শেষ হওয়ার ক্ষেত্রেও ভিন্ন হয়ে থাকে। উক্ত গ্রন্থের মুছান্নিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উপরোক্ত কথাকে আরো শক্তিশালী করতে আমি বলবো যে, কোন অঞ্চলের পবিত্র ইশা ও বিতরের ছলাত উনার সময় শেষ হলে, অন্য অঞ্চলে উক্ত সময় অবশিষ্ট থাকলেও তা আদায় করার আবশ্যকতা থাকেনা। (দুরারুল হুক্কাম শরহু গুরারিল আহকাম ১/২০১)
হযরত আহমদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে আহমদ জা’ফর ইবনে হামদান হযরত ইমাম আবূল হাসান আল কুদুরী আল-হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৪২৮ হিজরী) তিনি বলেন-
إذا كان بين البلدتين تفاوت. لا تختلف فيه مطلع الهلال. فأما إذا بعد أهل البلدين من الآخر بعدا كثيرا لم يلزم أهل أحد البلدين حكم الآخر لأن مطالع البلاد تختلف
অর্থাৎ যদি পরস্পর দুই শহরের মাঝে দূরত্ব পরিলক্ষিত হয় কিন্তু উদয়স্থল দুটি ভিন্ন না হয়। তাহলে এক মাত্বলা’র হুকুম বর্তাবে। তবে যদি উভয় শহরে মাত্বলা’ দুটি হয়, তাহলে এক শহরের মাত্বলা’ এর বিধান অপর শহরের মাত্বলা’বাসীদের অনুসরণ করা আবশ্যক হবে না। কারণ, প্রত্যেক দূরবর্তী শহরসমূহে মাত্বালি’ তথা উদয়স্থলসমূহ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। (শারহু মুখতাসারিল কারখী)
চলবে........
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সকল কাফিররাই মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৫)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৪)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)