সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (১৪)
, ২৪ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৭ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ০৬ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ২২ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফের কোথাও এমনকি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন উনারাসহ চার মাযহাবের এমন একজন ইমাম মুজতাহিদও নাই, যিনি কোথাও এমন কথা বলেছেন যে, “সারা বিশ্বে একই সাথে একই দিনে ঈদ পালন করতে হবে ও রোযা শুরু করতে হবে”। ইমাম-মুজতাহিদগণ উনাদের কেউ কেউ নতুন চন্দ্রের উদয়স্থলের ভিন্নতাকে গ্রহণযোগ্য নয়, এ কথা বললেও তারও ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু উক্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে কোন ইমাম মুজতাহিদ উনারা কখনো এমন ফতওয়া দেন নাই যে, সারা বিশ্বে একইসাথে একই দিনে ঈদ পালন করতে হবে ও রোযা শুরু করতে হবে। যা কোন কালেই সংঘটিত হয় নাই এবং তা কোন দিনই সম্ভব নয়।
পূর্বে প্রকাশিতের পর.........
সমস্ত মুহাদ্দিছীনে কিরামগণ উল্লেখিত পবিত্র হাদীছে কুরাইব ছহীহ হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। এবং উক্ত হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী সকল বারীগণ ছিক্বাহ ও নির্ভরযোগ্য বলে সকলেই মেনে নিয়েছেন। উক্ত হাদীছ শরীফ ছহীহ হওয়ার ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নাই।
উক্ত হাদীছে কুরাইব দ্বারা মাত্বলা বা উদয়স্থলের ভিন্নতা অনুযায়ী দূরবর্তী অঞ্চলে পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযা শুরু করার ক্ষেত্রে দিনের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য প্রমাণ করে হযরত ইমাম-মুজতাহিদগণ উনারা অনেক দলীল দিয়েছেন। মাযহাবভিত্তিক অকাট্য দলীলসমূহ নিম্নে দেয়া হলো-
সম্মানিত হানাফী মাযহাব:
পূর্বে উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফের একাংশে বর্ণিত রয়েছে-
هٰكَذَا اَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم.
“তিনি আমাদেরকে এমনটিই আমল করতে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন” একথার দ্বারাও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেক দূরবর্তী মাত্বলা’ বা উদয়স্থলে নতুন চাঁদ দেখার ভিন্নতা প্রত্যেকের নিজস্ব মাত্বলা’ বা উদয়স্থলের জন্য নির্ধারিত।
যদি মাত্বলা’ তথা চাঁদ দেখার স্থান দূরবর্তী হয়, তাহলে সেখানের চাঁদ দেখা অন্যদের জন্য যথেষ্ট হবে না। কারণ হযরত কুরাইব বিন আবী মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৯৮ হিজরী শরীফে বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। এবং তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট তাবেয়ী ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি। আর হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট হযরত কুরাইব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শুধু নিজের চাঁদ দেখার সংবাদ দেননি বরং তখন আমীরুল মু’মিনীন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এবং শাম অঞ্চলের মুসলমানদেরও চাঁদ দেখা প্রমাণিত হওয়ার ও তদানুযায়ী আমল করার সংবাদও দিয়েছেন। সুতরাং উনার সংবাদের ভিত্তিতে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে চাঁদ দেখার এই সংবাদ গ্রহণ করে আমল করতে কোনো বাধা ছিল না। কিন্তু সিরিয়া দূরবর্তী মাত্বলা’ বা উদয়স্থল হিসেবে গণ্য হওয়ায়, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সে সংবাদ অনুযায়ী আমল করলেন না বরং বলে দিলেন-
هٰكَذَا اَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم.
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে এমনটিই আমল করতে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।
এ কথা থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই দূরবর্তী মাত্বলা’ বা উদয়স্থলের চাঁদ দেখার ভিন্নতাকে গ্রহণ করে যার যার উদয়স্থল ভিত্তিক নতুন চাঁদ দেখে পবিত্র রোযা শুরু করতেন ও পবিত্র ঈদ পালন করতেন।
হযরত মুল্লা আলী ক্বারী আল-হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ: ১০১৪ হিজরী শরীফ) তিনি বলেন-
ولا شك أَنَّ هذا أَولى لأَنه نَصّ، وذلك يحتمل أَنْ يكون المراد: أَمَرَ أَهل كل مطلع بالصوم إِذا رَأَوْه. هكذا قال بعض المحققين.
অর্থ: এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই যে, উল্লেখিত পবিত্র হাদীছে কুরাইব একটি শক্তিশালী নস বা দলীল। এর দ্বারা যে উদ্দেশ্য গ্রহণ করা হয়েছে তা হলো- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যেক মাত্বলা’বাসীদেরকে চাঁদ দেখে পবিত্র রোযা শুরু করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। তদ্রুপ কতিপয় মুহাক্কিক্বীনগণও বলেছেন। (ফাতহু বাবিল ইনায়া বিশরহিন নিক্বায়া ২/২০২)
তাবয়ীনুল হাক্বায়িক শরহু কানযিদ্দাক্বায়িক ওয়া হাশিয়াতুশ শালবিয়্যি (১/৩১৭) কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-
وَلَا شَكَّ أَنَّ هَذَا أَوْلَى لِأَنَّهُ نَصٌّ وَذَاكَ مُحْتَمَلُ الْمُرَادِ أَنَّ كُلَّ أَهْلِ مَطْلَعٍ مُكَلَّفُونَ بِالصَّوْمِ لِرُؤْيَتِهِمْ.
আর এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই যে, উল্লেখিত পবিত্র হাদীছে কুরাইব একটি শক্তিশালী নস বা দলীল, এর দ্বারা যে উদ্দেশ্য গ্রহণ করা হয়েছে তা হলো- নিশ্চয়ই প্রত্যেক মাত্বলা’বাসী পবিত্র রোযা শুরু করার বিষয়ে চাঁদ দেখা কর্তব্য।
হযরত উছমান ইবনে আলী ইবনে মিহজান আল বারিয়ী ইমাম ফখরুদ্দীন যাইলায়ী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ: ৭৪৩) বলেন-
وَالْأَشْبَهُ أَنْ يُعْتَبَرَ لِأَنَّ كُلَّ قَوْمٍ مُخَاطَبُونَ بِمَا عِنْدَهُمْ وَانْفِصَالُ الْهِلَالِ عَنْ شُعَاعِ الشَّمْسِ يَخْتَلِفُ بِاخْتِلَافِ الْأَقْطَارِ كَمَا أَنَّ دُخُولَ الْوَقْتِ وَخُرُوجَهُ يَخْتَلِفُ بِاخْتِلَافِهَا.
অর্থ: উপরোক্ত কথার অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ কথা হলো- চন্দ্র উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য হবে। কেননা, পবিত্র ইবাদত-বন্দেগীর ক্ষেত্রে প্রত্যেক ক্বওম তথা সম্প্রদায়ের লোকেরা যেমনিভাবে তাদের নিজস্ব সময়ের প্রতি সম্বোধিত, তেমনিভাবে মাত্বলা’ তথা সূর্যোদয় ও নতুন চন্দ্র উদয়স্থলের ভিন্নতার কারণে অঞ্চলের ভিন্নতার প্রতিও সম্বোধিত। যেমনটি অঞ্চলের ভিন্নতার কারণে সময়ের শুরু ও শেষ হওয়ার ক্ষেত্রেও ভিন্ন হয়ে থাকে। (তাবয়ীনুল হাক্বায়িক্ব ১/৩২১, ইছবাতুল আহিল্লাহ ফী যিল্লিল মুতাগয়িরতিল মুয়া’ছারাহ পৃষ্ঠা ৩৭৪)
চলবে........
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সকল কাফিররাই মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৫)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৪)
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)