সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (১২)
, ২২ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৫ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ০৪ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ২০ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফের কোথাও এমনকি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন উনারাসহ চার মাযহাবের এমন একজন ইমাম মুজতাহিদও নাই, যিনি কোথাও এমন কথা বলেছেন যে, “সারা বিশ্বে একই সাথে একই দিনে ঈদ পালন করতে হবে ও রোযা শুরু করতে হবে”। ইমাম-মুজতাহিদগণ উনাদের কেউ কেউ নতুন চন্দ্রের উদয় স্থলের ভিন্নতাকে গ্রহণযোগ্য নয়, এ কথা বললেও তারও ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু উক্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে কোন ইমাম মুজতাহিদ উনারা কখনো এমন ফতওয়া দেন নাই যে, সারা বিশ্বে একইসাথে একই দিনে ঈদ পালন করতে হবে ও রোযা শুরু করতে হবে। এবং নিজেরাও কখনো সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে রোযা ও ঈদ কোনটা পালন করেন নাই। বরং এটা এমন এক শ্রেণীর বিদয়াতী ও গোমরাহ লোকদের গোমরাহী ও কুফরী বক্তব্য, যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে মুসলমানদের ইবাদত বন্দেগীসমূহ নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এবং এরা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফের বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফিৎনা সৃষ্টি করে ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে।
তিনটি কারণে একই দিনে সারাবিশ্বে রোযা শুরু করা ও ঈদ পালন করা একেবারেই অসম্ভব তা হলো:
(১) اِخْتِلَافُ الْاَوْقَاتِ: সময়ের পার্থক্য।
(২) اِخْتِلَافُ الْمَطَالِعِ: নতুন চাঁদ উদয়স্থলের পার্থক্য।
(৩) اَلْمَسَافَاتُ الْجِغْرَافِيَّةُ: ভৌগলিক দূরত্ব।
পূর্বে প্রকাশিতের পর.........
পবিত্র তাফসীর থেকে নতুন চাঁদ উদয়স্থলের ভিন্নতার প্রমাণ:
নতুন চাঁদ দেখার ভিন্নতা অনুসারে সারা বিশ্বে রোযা শুরু করা ফরয। যেমন এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-
إِذَا أَخْبَرَ مُخْبِرٌ عَنْ رُؤْيَةِ بَلَدٍ فَلَا يَخْلُو أَنْ يَقْرُبَ أَوْ يَبْعُدَ، فَإِنْ قَرُبَ فَالْحُكْمُ وَاحِدٌ وَإِنْ بَعُدَ فَلِأَهْلِ كُلِّ بَلَدٍ رُؤْيَتُهُمْ رُوِيَ هَذَا عَنْ عِكْرِمَةَ وَالْقَاسِمِ وَسَالِمٍ وَرُوِيَ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ وَبِهِ قَالَ إِسْحَاقُ وَإِلَيْهِ أَشَارَ الْبُخَارِيُّ حَيْثُ بَوَّبَ" لِأَهْلِ كُلِّ بَلَدٍ رُؤْيَتَهُمْ
অর্থ: কোন শহর থেকে নতুন চাঁদ দেখার বিষয়ে কেউ যদি সংবাদ দেয় তাহলে উক্ত শহরটি হয়তো দূরে হবে অথবা নিকটবর্তী হবে। যদি নিকটবর্তী শহর হয়, তাহলে চাঁদ দেখার হুকুম একই হবে। আর যদি দূরবর্তী শহর হয়, তাহলে প্রত্যেক শহরের জন্য আলাদাভাবে চাঁদ দেখতে হবে। ইহা হযরত ইকরামা, হযরত কাসিম, হযরত সালিম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের থেকে বর্ণিত রয়েছে। এবং হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকেও বর্ণিত রয়েছে। এই সম্পর্কে হযরত ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এই দিকে ইঙ্গিত করেই হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বুখারী শরীফে অধ্যায় নির্ণয় করেন- "لِأَهْلِ كُلِّ بَلَدٍ رُؤْيَتَهُمْ"
অর্থাৎ প্রত্যেক শহরের অধিবাসীদের জন্য নতুন চাঁদ দেখার ভিন্নতা রয়েছে। (তাফসীরে কুরতুবী ২/২৯৫)
অর্থাৎ কোন শহরের উদয়স্থল থেকে কেউ যদি নতুন চাঁদ দেখার সংবাদ দেয় তাহলে উক্ত উদয়স্থলটি হয়তো দূরে হবে অথবা নিকটবর্তী হবে। যদি নিকটবর্তী হয়, তাহলে চাঁদ দেখার হুকুম একই হবে। আর যদি উদয়স্থলটি দূরবর্তী হয়, তাহলে প্রত্যেক দূরবর্তী উদয়স্থলের জন্য আলাদাভাবে চাঁদ দেখতে হবে। ইহা হযরত ইকরামা, হযরত কাসিম, হযরত সালিম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের থেকে বর্ণিত রয়েছে। এবং হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকেও বর্ণিত রয়েছে। এই সম্পর্কে হযরত ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এই দিকে ইঙ্গিত করেই হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বুখারী শরীফে অধ্যায় নির্ণয় করেন-
"لِأَهْلِ كُلِّ بَلَدٍ رُؤْيَتَهُمْ"
অর্থাৎ প্রত্যেক শহরের অধিবাসীদের জন্য নতুন চাঁদ দেখার ভিন্নতা রয়েছে। (তাফসীরে কুরতুবী ২/২৯৫)
يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهارِ وَيُولِجُ النَّهارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى أى ومن مظاهر فضله عليكم ورحمته بكم أنه أوجد لكم الليل والنهار بهذا النظام البديع بأن أدخل أحدهما في الآخر وجعلهما متعاقبين مع زيادة أحدهما عن الآخر في الزمان على حسب اختلاف المطالع والمغارب
অর্থ: তিনি রাতের কিছু অংশকে দিনের মধ্যে এবং দিনের কিছু অংশকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেন। তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে নিয়ন্ত্রণ করেন, ফলে প্রত্যেকে নির্দিষ্ট সময়ে আবর্তিত হয়। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের প্রতি উনার দয়া ও অনুগ্রহ প্রকাশ করেছেন এভাবে যে, তিনি একটাকে অন্যটার মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে নতুন নিযাম বা সুশৃংখলভাবে তোমাদের জন্য রাত ও দিনকে সৃষ্টি করেছেন। এবং তিনি একটাকে অন্যটার পশ্চাৎগামী করেন। এবং (চন্দ্র ও সূর্যের) উদয় ও অস্তস্থলের ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে তিনি সময়ের মধ্যে পার্থক্য করে দিয়েছেন। (আত তাফসীরুল ওয়াসীত লি ত্বনত্বহাবী ১১/৩৩৫)
পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে নতুন চাঁদ দেখার ভিন্নতার প্রমাণ:
পরস্পর কম দূরবর্তী স্থানে নতুন চাঁদ দেখার ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য নয়। দূরবর্তী স্থান দুই ধরনের হয়ে থাকে। কম দূরবর্তী স্থান ও বেশি দূরবর্তী স্থান। কম দূরবর্তী স্থানসমূহের কোনো উদয়স্থল থেকে যদি নতুন চাঁদ দেখার সংবাদ আসে তাহলে নিজেরা চাঁদ না দেখলেও তা গ্রহণ করতে হবে।
★ নিম্নের পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, যদি নিকটবর্তী কোনো উদয়স্থল থেকে চাঁদ দেখার সংবাদ আসে তাহলে নিজেরা চাঁদ না দেখলেও তা গ্রহণ করা হবে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي عُمَيْرِ بْنِ أَنَسٍ عَنْ عُمُومَةٍ لَه مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ رَكْبًا جَاءُوْا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَشْهَدُوْنَ أَنَّهُمْ رَأَوُا الْهِلَالَ بالْأَمْسِ فَأَمَرَهُمْ أَنْ يُفْطِرُوا وَإِذا أَصْبَحُوُا أَن يَغْدُوْ إِلى مُصَلَّاهُمْ
অর্থ: হযরত আবূ ‘উমাইর ইবনু আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি উনার এক চাচা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি ছিলেন ছাহাবীগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই একবার একদল আরোহী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে সাক্ষ্য দিলেন যে, উনারা (পবিত্র শাওওয়াল মাসের) নতুন চাঁদ দেখেছেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে রোযা ভেঙ্গে ফেলার ও পরের দিন সকালে ঈদগাহের ময়দানে যেতে নির্দেশ দিলেন। (আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মিশকাতুল মাছাবীহ, ইবনু মাজাহ শরীফ, মুসান্নাফু আবদির রয্যাক, ইবনু শায়বাহ, আহমাদ শরীফ, শারহু মাআনিল আছার, দারাকুত্বনী শরীফ, ইরওয়াহ ইত্যাদি)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا قَالَ جَاءَ أَعْرَابِيُّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَبْصَرْتُ الْهِلَالَ اللَّيْلَةَ فَقَالَ أَتَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ نَعَمْ قَالَ قُمْ يَا بِلَالُ فَأَذِّنْ فِي النَّاسِ أَنْ يَصُومُوا غَدًا
অর্থ: হযরত ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন বেদুইন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, আমি আজ রাতে (সন্ধ্যায়) নতুন চাঁদ দেখেছি। তিনি বলেন, আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল? ঐ বেদুইন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, হ্যাঁ। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, হে বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! উঠুন এবং লোকদের মধ্যে ঘোষণা দিয়ে দিন যে, তারা যেন আগামীকাল থেকে রোযা রাখে। (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসায়ী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, দারেমী শরীফ, ইরওয়াহ ইত্যাদি)
উপরে উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত যে, বেদুইন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একই উদয়স্থলের অন্তর্ভুক্ত এলাকা থেকে এসে চাঁদ দেখার সংবাদ প্রদান করেছেন। কেননা, তিনি যে রাতে নতুন চাঁদ দেখেছেন, ঐ রাতেই তিনি এসে চাঁদ দেখার সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। যার কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত সাক্ষ্য গ্রহণ করে আগামীকাল থেকে রোযা রাখার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।
তাছাড়া উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। যদি একই মাতলা’ভুক্ত না হতো তাহলে নিশ্চয়ই হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি প্রশ্ন করতেন যে, আয় মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিই তো আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, দূরবর্তী মাতলা’র চাঁদ দেখা আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়? যেমনটি হযরত কুরাইব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফের দ্বারা প্রমাণিত ও প্রতিফলিত। সুতরাং হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চুপ থাকাটাও অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, উক্ত সাক্ষ্যদানকারী ছিলেন একই মাতলা’ভুক্ত এলাকার। আর পরস্পর দুটি মাতলা’ভুক্ত এলাকার একমাসের দূরত্বের পথের সমান হলে, তখন ভিন্ন মাতলা তথা উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণ করা আবশ্যক হয়।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ حَدَّثَنِي عُمُومَتِي مِنْ الْأَنْصَارِ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالُوا أُغْمِيَ عَلَيْنَا هِلَالُ شَوَّالٍ فَأَصْبَحْنَا صِيَامًا فَجَاءَ رَكْبٌ مِنْ آخِرِ النَّهَارِ فَشَهِدُوا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُمْ رَأَوْا الْهِلَالَ بِالْأَمْسِ فَأَمَرَهُمْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُفْطِرُوا وَأَنْ يَخْرُجُوا إِلَى عِيدِهِمْ مِنْ الْغَدِ
অর্থ: হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী এবং আনছার সম্প্রদায়ভুক্ত আমার এক চাচা আমার নিকট বর্ণনা করেন, মেঘের কারণে আমরা শাওওয়ালের নতুন চাঁদ দেখতে পাইনি। আমরা (পরের দিন) রোযা রাখলাম। দিনের শেষভাগে একটি কাফেলা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে গতকাল চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিলো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লোকদেরকে ইফতার (ছিয়াম ভঙ্গ) করার এবং পরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ মুবারক দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, ইরওয়াহ ইত্যাদি)
উপরোল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফে “দিনের শেষ” এই কথার অর্থের উপর ইজমা সংঘটিত হয়েছে। যা ফতহুল ক্বাদীর এবং শরহে ফতহুল ক্বাদীর দ্বিতীয় খ- (কিতাবুছ ছলাত) ৭২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে। তা হলো:
فَلَا بُدَّ مِنْ دَلِيلٍ يُفِيدُ أَنَّ الْمُرَادَ بِآخِرِ النَّهَارِ مَا بَعْدَ الظُّهْرِ أَوْ يَكُونُ فِي تَعْيِينِ وَقْتِهَا هَذَا إجْمَاعٌ
অর্থ: উপরোল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে এই দলিল গ্রহণ করা আবশ্যক যে, নিশ্চয়ই দিনের শেষ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো পবিত্র যোহর নামাযের পর অথবা পবিত্র যোহর নামাযের নির্দিষ্ট ওয়াক্তের মধ্যে।
অর্থাৎ ঐ কাফেলা উনারা পবিত্র মাগরিব উনার সময়ে নতুন চাঁদ দেখে, পরদিন পবিত্র যোহরের ওয়াক্তে উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট নতুন চাঁদ দেখার সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। এই পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে স্বাভাবিকভাবে এটাই বোঝা যায় যে, এই কাফেলা পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে অন্তত এক দিনের দূরত্বে থাকা অবস্থায় চাঁদ দেখেছেন। উনারা যদি রাতেও সফররত করে থাকেন, তাহলে অন্তত দেড় দিনের দূরবর্তী স্থান থেকে পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছেছেন। যা একই উদয়স্থলের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায়-
شرح سنن أبي داود لابن رسلان
উক্ত কিতাবে রয়েছে-
قال السبكي فهذا الحديث نص في ثبوت حكم بلد لبلد أخرى بل قد يقال إن ترك الاستفصال عن المسافة التي قطعوها بعد رؤيته وعن موضع رؤيته يدل على أنه لا يعتبر المسافة ولا المطالع
অর্থ: হযরত ইমাম তাক্বিউদ্দিন সুবুক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, নিকটবর্তী এক শহরের চাঁদ দেখা অন্য শহরের জন্য গ্রহণযোগ্য। বরং অবশ্যই বলা হবে যে, নতুন চাঁদ দেখার স্থানটি যদি নিকটবর্তী হয় তাহলে যেখানে নতুন চাঁদ দেখা গিয়েছে তার নিকটবর্তী স্থানকে ভিন্ন মাতলা’ বা দূরত্ব হিসেবে গ্রহণ করা হবে না। (শরহু সুনানি আবী দাউদ লি ইবনি রাসলান ১০/২৯৫)
উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ থেকে প্রমাণিত যে, আগত ব্যক্তি নিকটবর্তী শহরের থেকে এসে চাঁদ দেখার সাক্ষ্য প্রদান করেছেন, আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা গ্রহণও করেছেন। এর দ্বারা এ কথা প্রমাণিত যে, নিজেরা চাঁদ না দেখলেও নিকটবর্তী এলাকা বা শহরের কারো দ্বারা চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলেও রোযা রাখা ফরয হয়ে যাবে।
কাজেই প্রমাণিত হলো, কাছাকাছি এলাকাসমূহে এক জায়গার চাঁদ দেখাটা অন্য জায়গার জন্য অবশ্য গ্রহণীয়। যা প্রতি যুগে উম্মাহ্র সম্মিলিত আমলও এরূপই ছিল।
চলবে........
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)